রাশিয়ায় কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি-দেশটি নূতন করে পরিবর্তিত লক ডাউনের কবলে
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ রাশিয়ায় গতকাল একদিনে কোভিড সংক্রমণের নূতন রেকর্ড গড়েছে। রাশিয়ার জাতীয় করোনা ভাইরাস টাস্ক ফোর্স গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৪০,৯৯৩ জন নূতন সংক্রমণের সংবাদ পরিবেশন করেছে। এই সংখ্যা ছিল মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগের দিনের চেয়ে এই সংখ্যা ৭০০ বেশী আর গত সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই এই সংখ্যা নূতন রেকর্ড গড়েছে। যদিও সংক্রমণ রোধে দেশটির বেশীরভাগ ব্যাবসা বাণিজ্য বিগত এক সপ্তাহ ব্যাপী নতুন দৈনিক উচ্চ সংখ্যক করোনভাইরাস মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
একই দিনে মৃতের সংখ্যা ছিল ১১৫৮, শুক্রবারের রেকর্ড ১১৬৩ থেকে ৫ জন কম। সংক্রমণের এই বৃদ্ধির ফলে রাশিয়ায় সরকারীভাবে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫৩৮ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুর এই সংখ্যা ইউরোপের সবচেয়ে বেশী। মহামারী চলাকালীন ১৪ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের দেশে ৮৫ লক্ষ ১৩ হাজার ৭৯০ জন সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে। টাস্ক ফোর্স শুধুমাত্র ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মৃত্যু গণনা করে। রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান পরিষেবা রোসস্ট্যাট, যা বৃহত্তর মানদণ্ডে কোভিড-১৯ মৃত্যু গণনা করে তাদের শুক্রবারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনেক বেশী মৃত্যু প্রকাশিত হয়েছে। রোসস্ট্যাট শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসে সরাসরি ভাইরাসের কারণে ৪৪,২৬৫ জন মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করেছে আর সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার মহামারী-দীর্ঘ মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ ৬১ হাজার দেখিয়েছে, এই সংখ্যা টাস্ক ফোর্সের সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ।
সংক্রমণের বিস্তার রোধ করার জন্য, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৩০শে অক্টোবর থেকে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত কর্মহীনতার নির্দেশ দিয়েছেন, যার ফলে এই সময়ে বেশিরভাগ রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কাজ বন্ধ রয়েছে। মস্কোতে বৃহস্পতিবার থেকে কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, জিম, বিনোদন স্থান এবং বেশিরভাগ দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রেস্তোঁরাগুলিকে শুধুমাত্র টেকআউট কিংবা ডেলিভারি সেবার মধ্যে কার্য্যক্রম সীমাবদ্ধ করেছে। খাবার দোকান, ফার্মেসি এবং মূল অবকাঠামো পরিচালনাকারী সংস্থাগুলি খোলা ছিল। রাশিয়ার জাদুঘর, থিয়েটার, কনসার্ট হল এবং অন্যান্য ভেন্যুতে প্রবেশাধিকার সীমিত করে দেয়া হয়েছে, শুধুমাত্র যারা টিকা দিয়েছেন অথবা সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমনমুক্ত হয়েছে তাদেরকে প্রবেশাধিকার দেয়া হচ্ছে। ৬০ বছরের উর্ধে যারা টিকা দেন নি তাদের জন্য ঘরে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মোটামুটিভাবে রাশিয়া "লক ডাউন" কার্য্যকরি করেছে।
রাশিয়ার সরকার আশা করে যে বেশিরভাগ লোককে অফিস এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের বাইরে রেখে এবং কাজ করা বন্ধ রাখলেই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে পারবে। তবে রাশিয়ার অনেক মানুষ ছুটির আমেজে সমুদ্রতীরবর্তী কৃষ্ণ সাগর, মিশর কিংবা তুরস্কে ভ্রমণে ছুটে গিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে টিকা প্রদানে পিছিয়ে যাওয়া গতির কারণে এই সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেড়ে গেছে। রবিবার পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ১০ লক্ষ রাশিয়ান মানুষ টিকার দুই ডোজ সম্পুর্ন করেছেন। এই সংখ্যা দেশটির জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের কিছুটা বেশী। রাশিয়াই ছিল বিশ্বের প্রথম দেশ যারা ২০২০ সালের আগস্টে বিশ্বের প্রথম একটি করোনভাইরাস ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছিলো।
রাশিয়ায় আবিষ্কৃত টিকা স্পুটনিক ভি একটি অ্যাডেনোভাইরাস ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন। এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য বিশ্বের প্রথম নিবন্ধিত সংমিশ্রণ ভেক্টর ভ্যাকসিন। রাশিয়ান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১১ই আগস্ট ২০২০ তারিখে নিবন্ধিত হয়। আগস্টের প্রথম দিকে অনুমোদন দেয়া হলে গণমাধ্যমে এই অনুমোদনের নৈতিকতা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিলো। বৈজ্ঞানিক মহলে এই টিকার কার্য্যকারিতা নিয়ে গবেষণা প্রকাশিত না হওয়ায় অনুমোদনের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিলো। তবুও রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, বেলারুশ, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ কয়েকটি দেশে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভ্যাকসিনের জরুরি গণ-বন্টন শুরু হয়েছিল এবং সকলের আগে এই টিকা অনুমোদন দিয়ে টিকার নামকরণ করেছিলো স্পুটনিক ভি (ভিক্টরি) কিন্তু পরবর্তিতে জনগণের সংশয়ে এবং পরস্পরবিরোধী বক্তব্যরে কারণে টিকাদান অভিযান থমকে যায়।
সংবাদ সূত্রঃ এবিসি নিউজ, আর টি ই, দা গার্ডিয়ান, ওয়ার্ল্ড ইনফো, উইকিপেডিয়া