আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ‘দালিলিক প্রমাণ হাতে নেই’ মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা অঞ্চলে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাষ্ট্রপ্রধানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। খোদ রাষ্ট্রপতির নিজ জেলা পাবনায়ও তার পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে।
বঙ্গভবনের সামনে টানা কয়েক ঘণ্টা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টাও করেছেন তারা। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সাউন্ড গ্রেনেড মেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় শিক্ষার্থীসহ দুজন গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।
পদ থেকে সরে যাওয়ার দাবি যখন জোরালো হচ্ছে তখন রাষ্ট্রপতি কী করবেন সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে কৌতূহল। যদিও এক দিন আগে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, বিষয়গুলো মীমাংসিত। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আন্দোলন আরও জোরালো হলে রাষ্ট্রপতি কী করবেন? তিনি কি নিজেই পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন?
ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। আগামীকাল বুধবার (২৩ অক্টোবর) সেই আলটিমেটামের মেয়াদ শেষ হবে। এরপর সমাবেশসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে পদ থেকে সরানোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যা বলেছেন, তার সঙ্গে সরকার একমত পোষণ করে।
এর আগের দিন আসিফ নজরুল বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন। তার এই দ্বিচারিতা শপথ ভঙ্গের শামিল। কারণ, তিনি নিজেই তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে রেখে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে গেছেন।
এদিকে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বৈঠকে তারা কী বিষয়ে আলোচনা করেছেন সে বিষয়ে জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবির বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন।
গত শনিবার দৈনিক মানব জমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তার লেখা এক রিপোর্টে উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপতি তাকে বলেছেন ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার হাতে নেই’।
তার এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় মিছিল-সমাবেশ করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
সামাজিক মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থক ও আওয়ামী লীগ বিরোধীরা রাষ্ট্রপতির তীব্র সমালোচনা করে তার পদত্যাগ কিংবা তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর প্রথমে সেনাপ্রধান ও পরে রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছিলেন।
সোমবারের বিতর্কের পর বঙ্গভবন থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে -‘মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করার জন্য,’ রাষ্ট্রপতি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।