রাষ্ট্রপতির বেতন কত? আরো যেসব সুবিধা পান তিনি

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি কী কী ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা পান, দেশের সংবিধান ও দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (সংশোধন) অ্যাক্টে তা বলা আছে।

সর্বশেষ ২০১৬ সলে সংশোধিত দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। রাষ্ট্রপতি আপ্যায়নের (এন্টারটেইনমেন্ট) জন্য বছরে ভাতা পান। এই টাকার নিরীক্ষা হবে না।

অ্যাক্ট  পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেতন ভাতা ছাড়াও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আরো বেশকিছু সুবিধা ভোগ করেন। তিনি যে বেতন পান, সেটি সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত। রাষ্ট্রপতির মাসে আড়াই হাজার টাকা ছুটি ভাতা পাবেন। এই টাকাও হবে আয়করমুক্ত।

রাষ্ট্রপতির জন্য সরকারি আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। এর আসবাবপত্রসহ সুসজ্জিতকরণ ও মেরামতের পুরোটাই সরকার বহন করবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিজের বাড়ি বা ভিন্ন কোনো বাড়িতে অবস্থান করতে চাইলেও সেটিকে সুসজ্জিতসহ উপযুক্তকরণের দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। রাষ্ট্রপতির বাসভবন সংশ্লিষ্ট রাস্তাঘাট মেরামত ও সংস্কারের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে।

বঙ্গভবন - উইকিপিডিয়া

রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশের যেকোনো হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে দেশের বাইরে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেই খরচও দেবে  সরকার। আইনে পরিবারের সদস্য বলতে স্ত্রী-স্বামী, সন্তান, পিতা-মাতা ও অবিবাহিত ভাইবোনকে বোঝানো হয়েছে, যারা তার ওপর নির্ভরশীল।

রাষ্ট্রপতির সরকারি আবাস্থলের টেলিফোন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের সেবা খাতের ব্যয় সরকার বহন করবে। এসব বিল ট্যাক্সেরও আওতায় আসবে না। রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় যানবাহন সরকার নিশ্চিত করবে। রাষ্ট্রপতির সব ধরনের সফর ও সফরকালীন অবস্থানের ব্যয়ও সরকার প্রদান করবে। পরিবহনের জ্বালানি সরকার বহন করবে এবং জ্বালানি হবে ট্যাক্সের আওতামুক্ত। রাষ্ট্রপতি ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেলওয়ে, বিমান ও নৌযানে সর্বোচ্চ সুবিধা সংবলিত আসন পাবেন।

বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে তার বার্ষিক ২৭ লাখ টাকা বিমা কাভারেজ সরকার প্রদান করবে।

আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপ্যায়নের সুবিধাদি প্রাপ্য হন। বঙ্গভবনে দেশি-বিদেশি অতিথি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, ইফতার পার্টি, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, বুদ্ধপূর্ণিমা, দুর্গাপূজা, যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন, পহেলা বৈশাখ, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় সরকারের নির্ধারিত এ খাত থেকে বহন করা হয়। রাষ্ট্রপতি কোনো দেশি-বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়ন করলে বা তাদের কোনো ধরনের উপহার দিলে, তার ব্যয়ও সরকারি খাত থেকে করা হয়।

রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থলেও সাধারণ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া দেশের হাসপাতালগুলোতে সরকারি খরচে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতি বছরে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের জন্য স্বেচ্ছাধীন তহবিল পাবেন। সরকারের নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে এটি ব্যয় করবেন রাষ্ট্রপতি। স্বেচ্ছাধীন তহবিলের অর্থ থেকে দরিদ্র, অসচ্ছল, অসহায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। বাস্তব অবস্থা ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রয়োজনের নিরিখে এ খাতে বরাদ্দ রেখে দেশের সমস্যাগ্রস্ত দরিদ্র ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতির এ খাতের ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো সরকারি অডিট হবে না।

এছাড়া ছয় মাস বা তার অধিক সময়কাল দায়িত্ব পালন শেষে রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলেও বেতনের ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসর ভাতা পাবেন রাষ্ট্রপতি। এর বাইরেও অবসরকালে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন অ্যাটেনডেন্টসহ সরকার নির্ধারিত দাফতরিক খরচ পাবেন। পাবেন মন্ত্রীর সমপরিমাণ চিকিৎসা খরচ। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের ক্ষেত্রে পাবেন বাহন ও সরকারি টেলিফোন।

২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইনের আওতায় অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিদের এসব সুবিধার বিধান রয়েছে।

SHARE THIS ARTICLE