আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মরক্কোর রূপকথা থামিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিল ফ্রান্স। গতকাল রাতে আল খোরের আল বাইত স্টেডিয়ামে আফ্রিকান দলটিকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। পঞ্চম মিনিটে থিও হার্নান্দেজ ও ৭৯ মিনিটে র্যানডাল কোলো মুয়ানি গোল করে জিতিয়েছেন ফ্রান্সকে। রোববার ফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে ব্লুজরা। এক ধ্রুপদী ফাইনালের অপেক্ষা। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিততে নামছে কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্স। দুই পিএসজি সতীর্থের একে অন্যকে হারানোরা রোমাঞ্চকর দ্বৈরথ।
এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠল ফ্রান্স। সর্বশেষ এ কীর্তি আছে ব্রাজিলের (১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০২)। এখন ফরাসিদের সামনে তৃতীয় দল হিসেবে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। ১৯৬২ সালে ব্রাজিল ও ১৯৩৮ সালে এ কীর্তি গড়ে ইতালি।
কাল ফ্রান্সের কাছে হারলেও ফুটবল অনুরাগীদের হূদয় জয় করে নেয় মরক্কো। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ৬১ শতাংশ বল দখলে রাখে সাহসী মরক্কো! এমনকি ফ্রান্সের তারকাদের ১৪ শটের বিপরীতে আফ্রিকানরা শট নিয়েছে ১৩টি। মরক্কোর দুটি শট ছিল টার্গেটে, আর ফরাসিদের তিনটি, যার মধ্যে দুটি গোল হয়েছে।
পঞ্চম মিনিটে থিও হার্নান্দেজের গোলে লিড নেয় ফ্রান্স। আতোয়াঁ গ্রিজম্যান ডানপ্রান্ত থেকে এমবাপ্পেকে কাট ব্যাক করলে তিনি কয়েকবার শট নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বল মরক্কোর ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে চলে যায় থিও হার্নান্দেজের কাছে। এ লেফট ব্যাক অ্যাক্রোবেটিক ভলিতে দুরূহ কোণ থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন। চলতি বিশ্বকাপে এ প্রথম প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় মরক্কোকে গোল দিতে সমর্থ হলো।
৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে গোল! ১৯৫৮ বিশ্বকাপের পর সেমিফাইনালে এটাই দ্রুততম গোল। সর্বশেষ ফ্রান্সের বিপক্ষে ৫-২ গোলে জয়ের পথে দ্বিতীয় মিনিটে গোল করেছিলেন ব্রাজিলের ভাভা।
চলতি টুর্নামেন্টে মরক্কোর বিশ্বস্ত নাম সেন্টার ব্যাক নায়েফ অগার্দ শেষ মুহূর্তে চোটে পড়লে একাদশে পরিবর্তন আনতে হয় ওয়ালিদ রেগরাগুইকে। একাদশে ফেরেন রোমান সাইস। তাতে ডিফেন্সের ভারসাম্য নষ্ট হয় ও শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে মরক্কো।
এ গোলের পর আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে ফ্রান্স। কেননা ১৯৮২ সালের পর বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে আগে গোল করে কখনো হারেনি ফ্রান্স। সর্বশেষ তারা আগে গোল করেও হেরেছিল পোল্যান্ডের বিপক্ষে।
৩৪ ও ৩৬ মিনিটে পরপর দুটি বড় সুযোগ হারায় ফ্রান্স। এমবাপ্পের পাস খুঁজে পায় অরেলিয়েঁ চুয়ামেনিকে। তিনি শট নিলে জিরুর গায়ে লাগে। যদিও অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। দুই মিনিট পর আরো বড় সুযোগ আসে ফ্রান্সের। চুয়ামেনি পাস দেন এমবাপ্পেকে, যার শট গোলকিপার ব্লক করেন গোললাইন থেকে। বলটি ধীর গতিতে জিরুর কাছে ফিরে এলে তার শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
চাপ অব্যাহত রাখে গোল পরিশোধ করতে মরিয়া মরক্কো। ৪৫ মিনিটে মরক্কোর কর্নার পুরোপুরি ক্লিয়ার না হলে বল চলে যায় জাওয়াদ এল ইয়ামিকের কাছে, যিনি বক্সের কাছাকাছি অবস্থান থেকে দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল শট নিলে বল পোস্টের কাছ থেকে সেভ করেন। দুর্দান্ত শট।
আবার প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দারুণ চাপ তৈরি করে মরক্কো। প্রথম মিনিটে হাকিম জিয়েশের কর্নারের বল ধরে ফেলেন লরিস। তৃতীয় মিনিটে ফ্রিকিকের বলে হাকিম শট নিলে তা সেভ করেন লরিস।
দ্বিতীয়ার্ধেও দারুণভাবে ফিরে আসে মরক্কো। এ সময় তারা ফ্রান্সের গোলমুখে একের পর এক আক্রমণে গেলেও ফিনিশিংয়ের অভাবে গোলবঞ্চিত হতে থাকে। ইউসেফ এননেসিরি, হাকিম জিয়েশরা প্রাণান্ত চেষ্টা করেও লক্ষ্য ভেদ করতে পারছিলেন না কিছুতেই। কখনো বারে লেগে, কখনো ফরাসি ডিফেন্ডারে গায়ে-পায়ে লেগে বল ফিরে এসে তাদের হতাশ করতে থাকে। এরই মধ্যে ৭৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় ফ্রান্স। মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডেই গোল করেন এনট্র্যাখট ফ্রাংকফুর্ট ফরোয়ার্ড কোলো মুয়ানি।
আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠে মরক্কো। এর আগে ক্যামেরুন, ঘানা ও সেনেগাল কোয়ার্টার ফাইনাল খেললেও সেমিতে মরক্কোই প্রথম। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে উঠে নতুন নতুন ইতিহাস গড়া অ্যাটলাস লায়ন্সরা ফাইনালে ওঠারও স্বপ্ন দেখছিল। যদিও তারকাখচিত দল ফ্রান্সের অভিজ্ঞতার কাছে হার মানল উত্তর আফ্রিকার দলটি।
সেমিফাইনালে ওঠার পথে বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালকে হারিয়েছে মরক্কো। এর মধ্যে স্পেনকে তারা হারায় টাইব্রেকারে। চতুর্থ বড় দলকে হারানোর স্বপ্ন তাদের পূরণ হলো না।
তবে হারলেও এখনই বাড়ি ফিরছে না অ্যাটলাস লায়ন্সরা। শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে তারা।