আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে নিয়ে তিনি রওশনের গুলশানের বাসায় যান।
বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন জি এম কাদের। তাঁদের মধ্যে ঘণ্টাখানেক কথা হয়েছে। রওশন এরশাদের ছেলে জাপার যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর-৩ আসনের এমপি রাহগীর আলমাহি এরশাদ সাদও ছিলেন।
রওশনপন্থীদের সূত্রের ভাষ্য, বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন নিয়েও কথা হয়েছে।
আগামী ১ জানুয়ারি জাপার ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সেদিন কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠান করবে জাপা। একই দিনে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে রওশনপন্থীরা । সূত্রের দাবি, ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে কাকরাইলে যেতে রওশনকে অনুরোধ করেছেন জি এম কাদের। তবে রওশন জানান, অসুস্থতার কারণে যেতে পারবেন না। পরে তিনি জি এম কাদেরকে বলেন, ‘তুমি আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেও।’
মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘তিনি (রওশন) এতটুকুই বলেছেন।’ রওশন ও সাদের বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল।
দলের নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এবং জি এম কাদেরের বিরোধ জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই চলছে। তাঁর মৃত্যুর পর বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে দেবর-ভাবীর দ্বন্দ্বে দল ভাঙার উপক্রম হয়। এরপর প্রায় তিন বছর স্থিতাবস্থা চললেও, জি এম কাদের বিএনপির সুরে কথা বলছেন অভিযোগ করে গত আগস্টে রওশন কাউন্সিল ডাকলে ফের বিরোধ চরমে পৌঁছে।
এরপর রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদছাড়া করতে চেয়েও সরকারের কারণে পারেননি জি এম কাদের। স্পিকারের স্বীকৃতি পাননি। উল্টো রওশনপন্থীদের মামলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞায় রাজনীতি থেকে দূরে চলে যেতে হয়েছে জাপা চেয়ারম্যানকে। পাঁচ মাস থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে গত ২৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন রওশন। দুদিন পর তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জি এম কাদের। কিন্তু তাতে বরফ গলেনি। বরং ৩০ নভেম্বর রওশনপন্থীদের আপিলে ফের নিষেধাজ্ঞায় পড়েন জি এম কাদের।
গত ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন রওশন। জি এম কাদেরও গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ডাকে। পরেরদিন রাতে আচমকাই রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তাঁর অনুসারীরা। তবে ৪৫ মিনিটের ব্যবধানে ঘোষণাটি স্থগিতও করা হয়।
মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেছেন, ‘‘এসব বিষয়ে কথা হয়নি রওশন এরশাদের সঙ্গে। তিনি জি এম কাদেরকে বলেছেন, ‘যা করো, আমাকে জানিও করো।’ জি এম কাদেরও বলেছেন, জানাবেন। দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হতে বললে সাদ বলেন, ‘চাচা যেখানে ডাকবেন, সেখানেই যাবেন।’’
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাপার মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকেই সমর্থন দিয়েছেন রওশন। তবে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনের উপনির্বাচনে অন্তত দুটিতে রওশনপন্থীরা প্রার্থী হতে চান। রওশনের পক্ষ নেওয়ায় তাঁরা দল থেকে বাদ পড়েছেন। মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেছেন, ‘বৈঠকে রওশন এরশাদ একবারও বলেননি কাউকে মনোনয়ন দিতে হবে। যারা দলে নেই, তারা মনোনয়ন পাবেন না।’
এদিকে আজ সোমবার বনানী কার্যালয়ে শুরু হবে উপনির্বাচনে জাপার মনোনয়নপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার। পদাধিকারবলে জি এম কাদের মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারছেন না। মুজিবুল হক চুন্ন বলেছেন, বোর্ডের অন্য কোনো সদস্য সভাপতিত্ব করবেন। যোগ্য ও দলের সঙ্গে আছেন, তারাই মনোনয়ন পাবেন।