আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ সরকার চাইলেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা কোনো দুর্নীতি মামলা প্রত্যাহার বা প্রত্যাহারে কোনোরকম সুপারিশ করতে পারবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুদক আইন অনুযায়ী এই ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়নি। তবে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাঁচটি টিন চুরির অভিযোগে করা মামলা বাতিলের সুপারিশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যার ভিত্তিতে ২০১২ সালে ওই মামলা প্রত্যাহারে রায় দেয় সিলেটের বিশেষ জজ আদালত। এর বিরুদ্ধে করা এক আবেদনে গত বৃহস্পতিবার দুদকের মামলা বাতিলে সরকারের ক্ষমতা নেই বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়ে বলা হয়, দুদকের মামলায় সরকারের হস্তক্ষেপ করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। আইনজ্ঞরা বলছেন, হাইকোর্টের এই রায়ের মধ্যে দিয়ে দুদকের ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘রায়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। প্রত্যশিত ছিল। আশা করছি-সরকারে এটাকে মান্য করবে। আমরা মনে করি, বিচার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় চলতে দেওয়া উচিত। যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্যই এটি গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক সমকালকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়টি দুদকের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। এ রায়ের ফলে সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করলেও দুর্নীতির মামরা এখন আর প্রত্যাহার করতে পারবে না। দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলা শুধুমাত্র দুদকই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেবে।’
দুদকের আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘যুগান্তকারী রায়। এ রায়ের ফলে সরকারকে ‘একটি বার্তা’ দেওয়া হয়েছে দুদকের মামলায় কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। আইনেও সরকারের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটিই চূড়ান্ত বিচারের হাইকোর্টে রায়ে ফের প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
২০০৭ সালে বিগত তত্ববধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তখন দায়ের করা অনেক মামলার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফৌজদারিসহ অসংখ্য মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী এসব মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়।
তখন সুপারিশের তালিকায় দুদকের করা মামলাও ছিল। বলা হয়েছিল, এসব মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরপর অনেক ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার হলেও দুদকের বিশেষ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় আইনী প্রশ্ন দেখা দেয়। ফলে দুদকের সেসব মামলা প্রত্যাহার স্থগিত থেকে যায়। কিন্ত এরপরেও ২০১১ সালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৪ নং বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে পাঁচটি টিন চুরির মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যার ধারাবাহিকতায় সুপারিশ করে সিলেটের দুদক অফিসও। পরে সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১২ সালের ২৬ জুলাই মামলাটি প্রত্যাহারে রায় দেয় সিলেটের বিশেষ জজ আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিচারিক আদালতের আদেশের পর ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করা হয়। আবেদনে বলা হয়, যে প্রক্রিয়ায় মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা আইন মেনে হয়নি। ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডম্যান্ট অ্যাক্ট ১৯৫৮ এর ১০(৪) ধারা অনুযায়ী সরকারের জায়গায় আইনে ‘কমিশন’ শব্দটি লেখা আছে। পরে ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে পরের বছরের ২৭ মার্চ হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী একেএম ফজলুল হক। অন্যদিকে পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান।