যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসিফ মুক্তাদিরঃ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার জন্য মেক্সিকো সীমান্তে জড়ো হওয়া শরণার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার বেপরোয়া অভিযানে এ সীমান্তে শরণার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গত ত্রিশ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে এ সীমান্তে সর্বোচ্চ ৫৫৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বিভাগ।
মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে শুধু দক্ষিণ আমেরিকার অভিবাসীদের আগমন ঘটছে এমন নয়, বাংলাদেশের একটি দালাল চক্রও নানা পথ ঘুরিয়ে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে লোকজনকে আমেরিকায় পাচার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এসব দালালচক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক বাংলাদেশি স্বর্বস্ব হারাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে এ সীমান্তে বাংলাদেশিদের মৃত্যু নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে।
অভিবাসী সহায়ক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ সুনাম আছে। এ কারণে সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য শরণার্থী ভিসা বা অ্যাসাইলামের জন্য আবেদন করেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এসব শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় ব্যবস্থা বা অ্যাসাইলাম সিস্টেমে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে এমন শরণার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দক্ষিণ সীমান্তে জড়ো হওয়া এসব শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে সব সময় অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করার ফলে এবং করোনাভাইরাসের জন্য মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা শরণার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সীমান্তে যেসব কড়াকড়ি ছিল তা শিথিল করার পর থেকে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আসা শরণার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছেই। গত একুশ বছরের মধ্যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে সবচেয়ে বেশি শরণার্থী ভিড় করছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রায় দুই লাখ শরণার্থী অবস্থান করে। প্রায় একুশ বছর ধরে কোন নির্দিষ্ট মাসে এত বেশি সংখ্যক শরণার্থী ভিড় করার রেকর্ড ছিল না।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তৈরীর জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। অভিবাসী সহায়ক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্টের যে খ্যাতি ছিল তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন তা অনেকটা হুমকির মুখে পড়ে। যার প্রমাণ মিলে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে সে সময় মাত্র ষোলো হাজারের মত শরণার্থী অবস্থান করে। এ সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে করোনা ভাইরাসের প্রভাব ও অন্যতম কারণ ছিল।
শরণার্থী হিসেবে সীমান্তে অবস্থান করার পর কাউকে সরাসরি আবার নিজ দেশে অথবা সর্বশেষ যে দেশ দিয়ে সীমান্তে এসেছে সে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার কাউকে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নির্দিষ্ট জায়গায় অথবা কারাগারে হেফাজতে রাখা হয়। বর্তমান সময়ে অভিবাসনের জন্য যেসব শরণার্থী ভিড় করছে তাদের বেশির ভাগকেই সীমান্ত থেকে আবার ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের শাসনামলের শেষদিকে এবং যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮০ শতাংশ শরণার্থীকেই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দিয়ে সীমান্ত থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে সীমান্ত থেকে শরণার্থী পাঠিয়ে দেওয়ার হার ছিল প্রায় ৮৩%। কিন্তু জুলাই মাসে এ সংখ্যা কমে ৪৭% এ দাঁড়িয়েছে। বিগত বছরের জুলাই মাসে আসা শরণার্থীদের মধ্যে ২৬% মেক্সিকান নাগরিক এবং ৪৫% এল সালভাদোর, হন্ডুরাস ও গুয়েতমালার।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন সীমান্তে কড়াকড়ি শিথিল করার ফলে অভিবাসন প্রত্যাশী শরণার্থীর সংখ্যা আগামী দিনগুলতে আরো বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রত্যাশাকারী বাংলাদেশিদের দালালদের খপ্পরে না পড়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।