সুদানে আবার সামরিক অভ্যুত্থানঃ বিক্ষোভকারিদের উপর গুলিবর্ষন

The general announced on TV that he was dissolving the government. Pic: AP
আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্কঃ গতকাল ২৫শে অক্টোবর, সোমবার সকালে সুদানে আবার সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে।সুদানের বর্তমান সামরিক-জনতা যৌথ সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদক এবং অন্যান্য শীর্ষ বেসামরিক কর্মকর্তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশজুড়ে সাধারণ জনগণ বিক্ষোভ শুরু করলে সৈন্যরা অন্তত তিনজন বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং ৮০ জনেরও বেশি লোককে আহত করেছে বলে সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে।
Sudan’s prime minister, Abdalla Hamdok, was detained by military forces in an apparent coup.

সুদানের সামরিক বাহিনীর এই ক্ষমতা দখল আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ দেশগুলির একটিতে গনতন্ত্রে উত্তরণের পথে বিরাট অন্তরায় হলো। সুদানের সামরিক বাহিনীর প্রধান ল্যাফটেনেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেছেন যে তিনি দেশের যৌথ সামরিক-জনতা সরকার ভেঙে দিচ্ছেন এবং জরুরি অবস্থা জারি করছেন। তবুও, তিনি ২০২৩ সালের জুলাইয়ের জন্য পরিকল্পিত নির্বাচনের অনুষ্ঠানে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যাক্ত করেছেন। 

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছিলো যাতে এটা মনে করা হচ্ছিলো যে সামরিক বাহিনী আর ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে নারাজ এবং তারা নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার অভিপ্রায়ে দেশটির ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করছে। জেনারেল আল-বুরহান, সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দিয়ে সুদানে প্রতিদ্বন্দ্বী বেসামরিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিবাদের কারণ দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করলেন। তিনি বলেন, "দেশটি একটি হুমকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো।" 

অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় নেমে আসে এবং পথে পথে টায়ার পুড়ানোর ফলে আকাশে ধোঁয়ার স্রোত ছড়িয়ে পড়ার ছবি জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। তার পর পরই, তথ্য মন্ত্রনালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, ইন্টারনেট সংযোগগুলি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ইন্টার্নেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ফলে এই মুহূর্তে দেশটির ভিতরে কি ঘটছে তা জানা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

রাজধানী খার্তুমে সেনা সদর দফতরের বাইরে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের সৈন্যরা গুলি করে হত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। চিকিৎসকদের একটি দল জানিয়েছে, অন্তত তিনজন নিহত এবং ৮০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হামদককে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিংবা তিনি কোন অবস্থায় আছেন তা স্পষ্ট নয়। 


তিন দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হাসান-আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে সুদানের নতুন বেসামরিক-সামরিক যৌথ সরকার আফ্রিকা এবং আরব বিশ্বের উভয়ের জন্য একটি ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক আশা হিসাবে দেখা গিয়েছিল। গত মাসে, কর্তৃপক্ষ বশিরের অনুগতদের দ্বারা পরিকল্পিত একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। তারপরে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা খার্তুমের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাহিরে গত ১০ দিন থেকে ক্যাম্প করে অবস্থান করছিলো এবং এতে সামরিক বাহিনীর সমর্থন ছিল বলে অনেকেই মনে করছেন। সামরিক বাহিনী একটি বিক্ষুব্ধ উপজাতি গোষ্ঠীকেও সমর্থন করেছে যারা লোহিত সাগরে সুদানের বৃহত্তম বন্দর, পোর্ট সুদানকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো। একই সাথে দেশটির সরকার ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রা, খাদ্য এবং জ্বালানীর দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি মোকাবেলা করতে ব্যার্থ হওয়ায় দেশের বেসামরিক জনগণের দুর্দশা এবং ভোগান্তি বেড়েছে। সোমবার অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার সাথে সাথে অবরোধের সাথে থাকা উপজাতি নেতা ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি তাদের অবরোধ প্রত্যাহার করছেন।

গতকাল ভোরে প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদকের আকস্মিক অন্তর্ধানের মাধ্যমেই প্রথম অভ্যুত্থানের আলামত প্রকাশিত হয়। তথ্য মন্ত্রণালয় ফেইসবুক পোস্টে বলেছে যে সামরিক বাহিনী হামদক এবং তার স্ত্রীকে আটক করেছে এবং অভ্যুত্থানকে সমর্থন করার জন্য তাকে চাপ দিয়েছে। তিনি প্রত্যাখ্যান করলে মন্ত্রণালয় জানায়, জনাব হামদককে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জনাব হামদকের আটকের পর, আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে, সামরিক বাহিনী ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি ছিঁড়ে ফেলে। এই চুক্তিতে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের প্রথম অবাধ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বেসামরিক নেতাদের সাথে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা ভাগ করে নিতে সম্মত হয়েছিল। জেনারেল আল-বুরহান সার্বভৌম কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন, যা একটি যৌথ বেসামরিক-সামরিক সংস্থা যা গণতন্ত্রে উত্তরণের তত্ত্বাবধান করত। ঐ পরিষদের নেতা হিসেবে তিনি গত দুই বছর রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

২০১৯ সালে যৌথ চুক্তির অধীনে আগামী সপ্তাহগুলিতে সার্বভৌম পরিষদের নিয়ন্ত্রণ একজন বেসামরিক নেতার কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ১৯৮৯ সালের পর প্রথমবারের মতো সুদান একটি সম্পূর্ণ বেসামরিক নিয়ন্ত্রণে চলে আসত। এই চুক্তি বাস্তবায়ন না করে সামরিক বাহিনী তাদের হাতে ক্ষমতা পুনরায় সুসংহত  করা হলো। 


সোমবার সুদানের বেসামরিক নেতারা গণতন্ত্রে উত্তরণ রক্ষার জন্য নাগরিকদের রাস্তায় নাম্বার আহ্বান জানিয়েছেন। ডাক্তার, প্রকৌশলী এবং আইনজীবীদের নেতৃত্বে থাকা সুদানিজ প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন একটি ফেইসবুক পোস্টে বলেছে, "এই আন্দোলন জনগণের একটি বিপ্লব; ক্ষমতা ও সম্পদ জনগণের। সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য নয়।" অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পিছনে থাকা সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে বিভাজন রয়েছে এবং তাদের ভিতরে এই মুহূর্তে আছে কি না তা স্পষ্ট নয়। 

তথ্যসূত্রঃ সি এন এন, বি বি সি, নিউ ইয়্ররক টাইমস, আল জাজিরা, রয়টার্স

SHARE THIS ARTICLE