আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ সুদানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নৌ-পথে সৌদি আরবে নেয়া হচ্ছে। জেদ্দা থেকে তাদের পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে দেশে আনা হবে। গতকাল সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানান।
প্রায় দুই সপ্তাহজুড়ে সুদানে সেনাবাহিনী এবং আধা সামরিক বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ অবস্থায় দেশটি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। দেশটিতে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। সেহেলী সাবরিন জানান, বর্তমানে দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে, কিন্তু যুদ্ধবিরতির মধ্যেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে ফিরতে আগ্রহী (নিবন্ধিত) বাংলাদেশিদের প্রথমে খার্তুম থেকে পোর্ট সুদান নেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। পোর্ট সুদান থেকে তাদের নৌ-পথে নেয়া হবে সৌদি আরবের পোর্ট জেদ্দায়। জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ বিমানের কয়েকটি ফ্লাইটে তাদের ঢাকায় ফেরানো হবে।সুদানে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের নেতৃত্বাধীন টিম ইতিমধ্যেই খার্তুম এবং এর আশপাশের শহর থেকে বাংলাদেশিদের পোর্ট সুদানে নিয়ে যেতে ৯টি বাসের ব্যবস্থা করেছেন।
খার্তুম থেকে ৮৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোর্ট সুদান থেকে তাদের নেয়া হবে পোর্ট জেদ্দায়। জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের দপ্তরের একটি টিম খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাসকে সহায়তার জন্য রোববার সেখানে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে সেগুনবাগিচা। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ জানিয়েছেন, পোর্ট সুদান থেকে পোর্ট জেদ্দায় বাংলাদেশিদের পরিবহনের জন্য সৌদি সরকার বিনা মূল্যে দেশটির নৌ-বাহিনীর জাহাজ প্রস্তুত রেখেছে। ২রা মে’র মধ্যে সব বাংলাদেশিকে পোর্ট সুদানে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে তদারকির জন্য ক’দিন ধরে পোর্ট সুদানে অবস্থান করছেন জানিয়ে সেগুনবাচিার তরফে বলা হয়, আগামী ৩রা বা ৪ঠা মের মধ্যে বাংলাদেশিরা জেদ্দা পৌঁছে যাবেন। জেদ্দাস্থ বাংলাদেশের দু’টি স্কুলে সুদান প্রবাসীদের জন্য খাদ্য, পানীয়, ওষুধ ও সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানে প্রায় ১২ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে প্রবাসীদের যেন শারীরিক কোনো সমস্যা না হয়, এ বিষয়টি মাথায় রেখে পোর্ট সুদানেও বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের জন্য খাদ্য, পানীয়, ওষুধ এবং সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সুদান প্রবাসীরা যেদিন জেদ্দা পৌঁছাবেন, সেদিন থেকেই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশিদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরের প্রাক্কালে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে বলা হয়, সুদানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দপ্তর এবং বাসভবন আক্রান্ত হলেও তিনি অন্যত্র অবস্থান করে অফিস পরিচালনা করছেন। সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিগত ১৫ই এপ্রিল থেকে সংঘর্ষ চলমান। গত দুই সপ্তাহে এ সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় চারশ’র অধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেসামরিক লোকজন ছাড়াও জাতিসংঘ কর্মী, মিশরের সহকারী প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সুদান থেকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের নির্দেশনায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল, জেদ্দার কনসাল জেনারেল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ এ বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন এবং সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার আশা করে সেগুনবাগিচা জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুদান প্রবাসীদেরকে নিরাপদে এবং সর্বোচ্চ কম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বদ্ধপরিকর।
