
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ নিজে সংযুক্ত আরব আমিরতে কাটিয়েছেন ৩৮ বছর। করেছেন অমানুষিক পরিশ্রম। এর মধ্যেই দুই ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করে পাঠিয়েছেন ব্রিটেন এবং সুইজারল্যান্ডে। বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়েকেও। এতকিছুর পরও চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে ষাটোর্ধ্ব আবুল কালাম আজাদের জীবনে।
সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিতে না পেরে সন্তানরা তাকে মাদকাসক্ত সাজিয়ে দুই মাস আটকে রেখেছে নিরাময় কেন্দ্রে। এমনকি হুমকি দিয়েছে ইয়াবা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার। একটি অপহরণ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আবুল কালাম আজাদের সন্ধান পেয়েছে পিবিআই।
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার প্রশান্তি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে বসে নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া নানা দুর্ঘটনা এবং সন্তানদের হাতে নির্যাতনের দুর্বিষহ কাহিনি পুলিশের কাছে বর্ণনা করছেন ষাটোর্ধ্ব আবুল কালাম আজাদ। ৩৮ বছরের প্রবাস জীবনের আয় দিয়ে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন বেশ কিছু জায়গা। সেই সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে নিজের সন্তানরাই তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি মাদকাসক্ত না হওয়া সত্ত্বেও দুই মাস আটকে রাখা হয়ে এই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে।
ভুক্তভোগী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার সন্তানরা চায়, জায়গা-জমি তাদের নামে লিখে দিই। কিন্তু আমি তাদের বলেছি, আমি কেন লিখে দেব? আমার মৃত্যুর পর তোমরা তো এমনিতেই পাবে। এ জন্য তারা আমার ওপর অনেক অত্যাচার করেছে।
২০১৭ সালে স্ত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফিরে আসেন আবুল কালাম আজাদ। কিডনি রোগে আক্রান্ত স্ত্রী কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যান। এরপর থেকে আবুল কালাম আজাদের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে। উচ্চশিক্ষিত সন্তানরা তাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিলে আশ্রয় দেন হোটেল কর্মচারী শাহাবুদ্দিন। কিন্তু সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ নিয়ে হোটেল কর্মচারী শাহাবুদ্দিন আদালতে অপহরণ মামলা করলে তদন্তের ভার পায় পিবিআই।
বাদী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, এক বছর আগে ওনাকে আমি পেয়েছি। দেখে মনে হয়েছে- ওনার আর্থিক অবস্থা অনেক দুর্বল, তাই আমার কাছে ওনাকে রেখে দিই।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের সবার সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি- ওনার জীবনযাপন স্বাভাবিক।
প্রশান্তি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদের মেয়ে ফাহিমা আক্তারই তার বাবাকে এখানে রেখে গেছেন। তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানালেও নেয়নি তার পরিবার। নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ওনাকে আমরা এক সপ্তাহ রেখেছি। কিন্তু ওনার মধ্যে মাদকাসক্তির কোনো লক্ষণ পাইনি। পরে তার মেয়েকে ফোন করে তাকে নিয়ে যেতে বললে, তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নিয়ে যাননি।
এদিকে, পিবিআইয়ের প্রাথমিক তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে সন্তানরা নিজেদের নামে সম্পত্তি লিখে নিতে না পেরেই বাবার ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, জায়গা-জমি লিখে নিতে ব্যর্থ হয়ে তার ছেলে-মেয়েই তাকে চক্রান্ত করে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল। অমানুষিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ আবুল কালাম আজাদ আর সন্তানদের কাছে ফিরতে চান না। এ অবস্থায় আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে পিবিআই।