সৌদি-ইসরায়েল চুক্তি মানার শর্ত দিলো ফিলিস্তিন

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঐতিহাসিক চুক্তিকে সমর্থন জানানোর ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি  শর্ত দিয়েছে ফিলিস্তিন। তাদের শর্ত মেনে নিলে তারা যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি মেনে নেবে। বুধবার এই বিষয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা রিয়াদে সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সমঝোতার জন্য চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি নিশ্চয়তা দেবে এবং এতে একটি বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি থাকবে, যা ওয়াশিংটনের কাছ থেকে অর্জন করতে চেয়েছিল রিয়াদ। কিন্তু এমন চুক্তি স্বাক্ষর বাধার মুখে রয়েছে।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভ্যান বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে আমরা কোনও ঘোষণা বা বড় অগ্রগতি প্রত্যাশা করছি না।

বিবিসি লিখেছে, মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্কের ঐতিহাসিক পুনর্বিন্যাসের সুযোগ থাকায় যেকোনও চুক্তির জন্য এমন ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে জল্পনা চলমান রয়েছে। সম্প্রতি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় মার্কিন কূটনীতি গতি পেয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা রিয়াদ,  আম্মান ও জেরুজালেম সফর করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি-ইসরায়েল চুক্তিকে আগামী বছর নির্বাচনের আগে নিজের মেয়াদকালের পররাষ্ট্রনীতির বড় সাফল্য হিসেবে ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে চান।

ইসলামি বিশ্বের নেতা সৌদি আরব। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর কখনও দেশটিকে  আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি তারা। গত মাসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, আমরা ইতিহাসের বদলে যাওয়া প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি।

সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের যেকোনও চুক্তি ঘিরে বড় ধরনের বিতর্ক থাকবে। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা সহযোগিতা চায় সৌদি আরব। যে নিশ্চয়তার মধ্যে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ একটি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহযোগিতা।

উপসাগরীয় পরাশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে ইসরায়েল বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষায় সুবিধা পাবে। এই অঞ্চলে যে ঐতিহাসিক একত্রীকরণ চেয়ে আসছিল দেশটি তা অর্জিত হবে। এর আগে কয়েকটি আরব দেশ তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।

অতীতের ফিলিস্তিনি মধ্যস্থতাকারী দলের আইন উপদেষ্টা দিয়ানা ভুট্টু বলেছেন, এগুলো  মূলত নিরাপত্তা ও বাণিজ্য চুক্তি। ২০২৩ সালে এটা নিয়ে আলোচনা গতি পেয়েছে। এখন সৌদি আরবও এতে জড়িত  হতে চাইছে।

বিবিসি লিখেছে, একটি চুক্তি সফল হওয়ার জন্য এতে যে ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েল উল্লেখযোগ্য ছাড় দিয়েছে তা তুলে ধরতে হবে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিজ দেশের ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলের বিরোধিতাকারী এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে।

রিয়াদে আলোচনায় অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ঘনিষ্ঠ দুজন রয়েছেন। তারা হলেন গোয়েন্দা প্রধান মাজেদ ফারাজ ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সাধারণ সম্পাদক হুসেইন আল-শেখ। তারা বুধবার সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসায়েদ আল-আইবানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনা সম্পর্কে জ্ঞাত এক সিনিয়র ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে এই তথ্য জানিয়েছেন। 

গত সপ্তাহে জর্ডানের আম্মানে মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট বারবারা লিফের বৈঠকে ফিলিস্তিনিদের দাবি চূড়ান্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনা প্রক্রিয়ায় ফেরার জন্য এসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবির মধ্যে রয়েছে, ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকা পশ্চিমের একাংশ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন পুরোপুরি বন্ধ করা, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তা পুনরায় চালু করা, জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের জন্য মার্কিন দূতাবাস পুনরায়  চালু করা, মার্কিন মধ্যস্থতায় ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করা

এমন  ছাড়গুলো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ- মনে  করা হয় মার্কিন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনিদের দ্বারা এসব সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। কিন্তু এসব দাবি সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে ফিলিস্তিনের সরকারি ও প্রকাশ্যে অবস্থান থেকে অনেক  দূরবর্তী। আনুষ্ঠানিকভাবে তারা বলছে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠার সুযোগ না থাকলে তারা এমন চুক্তি প্রত্যাখ্যান করবে। এই অবস্থান আরব শান্তি উদ্যোগকে সমর্থন করে। ২০০২ সালে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল সৌদি আরব। এতে দখলকৃত ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলিদের অপসারণ এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে ইসরায়েলকে আরব বিশ্বের স্বীকৃতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

দিয়ানা ভুট্টু বলেছেন, এই প্রবণতা ফিলিস্তিনের বর্তমান নেতৃত্ব কতটা গভীরভাবে ‘বাঁধা’ তা উঠে আসছে। বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি এমন কোনও স্বাভাবিকীকরণ চুক্তিতে জড়িত হতে চায় না। কারণ একমাত্র আরব বিশ্বের সমর্থন আমাদের অবশিষ্ট রয়েছে। আমাদেরকে বলা হয়েছে, আমরা সহিংসভাবে প্রতিরোধ করতে পারব না, দখলদারিত্বের অবসানে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারব না, আমরা বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার  বা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারব না।

তিনি আরও বলেছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এখন প্রশ্ন করছে, আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরা এবং অনুধাবন  করানোর  চেষ্টা করা উচিত,  না কি ২০২০ সালের মতো উপেক্ষা করা উচিত? এটাই হলো বাঁধা পড়া-ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যাই করুক না কেন সেটির ব্যর্থ হওয়া অনিবার্য।  

SHARE THIS ARTICLE