আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪৩টি দেশ। এরমধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। শুক্রবার (১০ মে) নিউইয়র্কে এই প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ। আর ভোটদানে বিরত ছিল ২৫টি দেশ। খবর আল জাজিরার।
গত সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিষদে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন এবং তাদের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। কিন্তু শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি। এরপর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি এবং পূর্ণ সদস্যপদ দিতে নিরাপত্তা পরিষদে আবারও ভোট আয়োজনের জন্য সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব তোলা হয়। আর এই প্রস্তাবের পক্ষে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত চারভাগের তিন ভাগ দেশ ভোট দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, আজকের ভোটের পর ফিলিস্তিন জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ পেতে চাপ অব্যাহত রাখবে। এই ভোট থেকে প্রমাণিত হয়েছে বিশ্ব ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার সঙ্গে এবং ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
যদিও জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান সাধারণ পরিষদে বলেন, জাতিসংঘ একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই ভোট শুধু রাষ্ট্রের অধিকার প্রদান নয়, হামাসের ভবিষ্যত ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে’ও সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার দেবে।
জাতিসংঘের মোট সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩টি। কোনো রাষ্ট্র যদি জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ চায়, সেক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রকে সংস্থাটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ জোগাড় করতে হবে। এই সুপারিশ নেওয়ার পর সাধারণ পরিষদে আবেদন করা হলে আবেদনের ওপর ভোট হয়। সাধারণ পরিষদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য যদি আবেদন মঞ্জুরের পক্ষে ভোট দেয়, তাহলেই জাতিসংঘের সদস্যপদ পায় সে-ই রাষ্ট্র।
জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা উপত্যকা— তিন ভূখণ্ডের সমন্বয়ে গঠিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। তবে ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে জয়ী হয়ে এই তিনটি ভূখণ্ডই দখল করে ইসরায়েল। পরে ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে অসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিনকে নিজস্ব প্রশাসন ও সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রের সম্মান দেওয়া হয়নি। তবে ভবিষ্যতে যাতে তারা রাষ্ট্রের সম্মান পেতে পারে, সেই পথ তৈরি করে রাখা হয়েছিল। তারপর থেকেই জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ফিলিস্তিন।
সেসব চেষ্টার ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে জাতিসংঘে প্রবেশের অনুমতি পায় ফিলিস্তিন। এই ক্যাটাগরিভুক্ত দেশ বা ভূখণ্ডগুলো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনা-বিতর্কে যুক্ত হতে পারে, কিন্তু উত্থাপিত কোনো প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই।
গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ফের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য তৎপরতা শুরু করে ফিলিস্তিন। নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে আবেদনও করেছিল জাতিসংঘের ফিলিস্তিন প্রতিনিধি দল। তবে ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে যায় সেই আবেদন।