হজ আদায়কারীর প্রতি কোরআন-হাদিসের নির্দেশ ও ফজিলত

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম এবং গুরুত্বপুর্ণ একটি হলো হজ। প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন যে ব্যক্তির মালিকানায় নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণের খরচের অতিরিক্ত এমন পরিমাণ টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা বা জমিজমা রয়েছে, যা দ্বারা সে হজে যাওয়া-আসার ব্যয় এবং হজকালীন সময়ে সাংসারিক খরচ মেটাতে সক্ষম। তার ওপর হজ আদায় করা ফরজ। আর এ হজ জীবনে একবার করাই ফরজ।

উল্লেখ্য, ফরজ হজ আদায়ের পর বার বার হজ করলে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে।

হজ আদায়কারীর প্রতি কোরআন-হাদিসের নির্দেশ ও ফজিলত

সামর্থ্যবান মানুষের ওপর হজ করা ফরজ। কোরআনুল কারিমে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বিষয়টি এভাবে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন- وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ

অর্থ: ‘আর সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বাইতুল্লাহর হজ করা ফরজ’। (সূরা: আলে-ইমরান, আয়াত: ৯৭)

উক্ত আয়াতে কারিমায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সামর্থ্যবান মানুষকে তার ইবাদত হজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। সম্পূর্ণ রাহা-খরচ পূরণ হওয়ার মতো যথেষ্ট পাথেয় যার কাছে আছে। অনুরূপ রাস্তার ও জান-মালের নিরাপত্তা এবং শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদিও সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। নারীর জন্য মাহরাম (স্বামী অথবা যার সঙ্গে তার বিবাহ চিরতরে হারাম এমন কোনো লোক) থাকাও জরুরি। (ফাতহুল কাদির) এই আয়াত প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ ফরজ হওয়ার দলিল। হাদিস দ্বারা এ কথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, হজ জীবনে একবারই ফরজ। (ইবনে কাসির)

হজ সম্পর্কে কোরআন মাজিদে সূরা আল বাকারার ১৯৬-২০৩ পর্যন্ত মোট ৮টি আয়াতে জরুরি হেদায়াত দেওয়া হয়েছে। হজ আদায়কারীর জন্য সেগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। তাই এ আয়াতগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা পড়ে নেওয়া উচিত। নিম্নে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ দু’একটি আয়াত উল্লেখ করা হলো- 
وَ اَتِمُّوا الْحَجَّ وَ الْعُمْرَةَ لِلّٰهِ ؕ

অর্থ: ‘আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরা পূর্ণ করো’। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১৯৬)

উক্ত আয়াতে হজ ও ওমরার নিয়ত ও উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে। তাহলো, একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন। সুতরাং দুনিয়ার যশ-খ্যাতি, লোক-দেখানো, হাজি বা আলহাজ উপাধি পাওয়া প্রভৃতি নিয়ত থেকে বিরত থাকতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেছেন- اَلْحَجُّ اَشْهُرٌ مَّعْلُوْمٰتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِیْهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَ لَا فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِی الْحَجِّ ؕ وَ مَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَیْرٍ یَّعْلَمْهُ اللّٰهُ

অর্থ: ‘হজ সুবিদিত মাসসমূহে হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি সেসব মাসে (ইহরাম বেঁধে) নিজের উপর হজ অবধারিত করে নেয় সে হজের সময় কোনো অশ্লীল কথা বলবে না, কোনো গুনাহ করবে না এবং কোনো ঝগড়াও করবে না। তোমরা যা কিছু সৎকর্ম কর আল্লাহ তা জানেন। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১৯৭)

উক্ত আয়াতে ইহরামকারীকে মোট তিনটি বিষয় থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তাহলো-

(১) অশ্লীল কথা বলবে না। স্ত্রীর সঙ্গেও কামোত্তেজক কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকবে।

(২) সব প্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকবে। অর্থাৎ ইহরামের কারণে বিশেষভাবে যা নিষিদ্ধ এবং সাধারণ অবস্থায় যা গুনাহ উভয় প্রকার নিষিদ্ধ কাজ থেকেই বিরত থাকতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, সাধারণ অবস্থায় যা করা গুনাহ ও নিষিদ্ধ ইহরাম অবস্থায় তা আরো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ; যেমন- অন্যকে কষ্ট দেওয়া, কু-দৃষ্টি ও গিবত-শেকায়েত ইত্যাদি।

(৩) ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকবে। এটিও সব সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ। এ হিসেবে এটি দ্বিতীয় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। তথাপি আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে তা উল্লেখ করেছেন, যেন ঝগড়া-বিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে হজের মতো মহান ইবাদত নির্বিঘ্নে আদায় করা যায়।

হজ বহু ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। হাদিসে হজের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো-

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- مَنْ حَجَّ لِلّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمٍ وَلَدَتْهُ اُمُّهُ

অর্থ:‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে এভাবে হজ করবে যে, অশ্লীল কথাবার্তা বলবে না এবং গুনাহের কাজ করবে না সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল’। (বুখারি: ১৫২১, মুসলিম: ১৩৫০)

> হজরত আতা ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- مَنْ حَجَّ الْبَيْتَ فَقَضَي مَنَاسِكَهُ وَسَلِمَ الْمُسْلِمُوْنَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ غُفِرَ لَهَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর হজ করবে, হজের কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে এবং মুসলমানরা তার মুখ ও হাত থেকে নিরাপদ থাকবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮৮১৭)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- اَلْعُمْرَةُ اِلَي الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ اِلاَّ الْجَنَّةُ

অর্থ: ‘এক ওমরার পর আরেক ওমরা করলে মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। আর হজে মাবরুর (মাকবুল হজ)-এর প্রতিদান একমাত্র জান্নাত’। (বুখারি: ১৭৭৩, মুসলিম: ১৩৪৯)

> হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- اَلْحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللهِ، دَعَاهُمْ فَاَجَابُوْهُ وَسَئَلُوْهُ فَاَعْطَاهُمْ

অর্থ: ‘হজ ও ওমরাকারীগণ আল্লাহ তাআলার দল। তিনি তাদেরকে ডেকেছেন, তারা সাড়া দিয়েছে। তারা আল্লাহ তাআলার কাছে চায় তিনি তা কবুল করেন’। (মুসনাদে বাযযার ১১৫৩, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫২৮৮)

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন অন্য বর্ণনায় এসেছে- اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِلْحَاجِّ وَلِمَنْ اِسْتَغْفَرَ لَهُ الْحَاجُّ

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি হজ আদায়কারীকে ক্ষমা করে দিন এবং সে যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাকেও ক্ষমা করে দিন’। (ইবনে খুযাইমা: ২৫১৬, মুসতাদরাকে হাকেম: ১৬৫৪)

SHARE THIS ARTICLE