আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে নামাজের। ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় ভিত্তি হলো নামাজ। নামাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান রব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করার জন্য মুসলমানের প্রতি মিরাজের উপহার। যা আল্লাহ তার পেয়ারে হাবিবকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করে মিরাজের রাতে তার আরশে আজিমে মেহমান বানিয়ে মুসলমানদের জন্য এ উপহার প্রদান করেন।
রাসুল (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করার আগে পবিত্র মক্কা ভূমিতেই নামাজ ফরজ হয়েছিল। মক্কা অধিবাসী আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করার আগে সম্রাট হিরাক্লিয়াসের এক প্রশ্নের উত্তরে নবীজি সম্পর্কে এভাবে পরিচয় দান করেন যে এই নবী আমাদের নামাজ, সত্যবাদিতা ও সংযমশীলতার আদেশ করেন। বুখারি। নবীজি ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাত বা নামাজের হিসাব নেয়া হবে। যদি সালাত ঠিক হয় তবে তার সব আমল সঠিকভাবে হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সব আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে।’ তিরমিজি।
আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোরআনে ৮২ বার নামাজের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘পাপীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তোমরা কেন জাহান্নামে যাচ্ছ? তারা বলবে আমরা নামাজি ছিলাম না, মিসকিনদের আহার করাতাম না, অন্যের দোষ তালাশকারীদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম, যার কারণে আজ আমরা জাহান্নামে যাচ্ছি।’ (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৪০-৪৫)। অন্য আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মোমিনরা সফলকাম, যারা তাদের সালাতে নম্রতা ও ভয়ভীতির সঙ্গে দন্ডায়মান হয়।’ (সুরা মোমিনুন, আয়াত ১-২)
অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আর যারা তাদের নিজেদের নামাজ যত্নের সঙ্গে হেফাজত করে অর্থাৎ যথাযথভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নামাজ আদায় করে তারাই জান্নাতে অতি সম্মান ও ইজ্জতের সঙ্গে বসবাস করবে।” (সুরা মাআরিজ, আয়াত ৩৪-৩৫)। আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘ওইসব নামাজির জন্য বড়ই আফসোসের বিষয় যারা তাদের সালাতে অমনোযোগী ও উদাসীন থাকে।’ (সুরা মাউন, আয়াত ৪-৫)। আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আর যারা তাদের নামাজে যত্নবান তারাই জান্নাতের ওয়ারিশ, যারা ফিরদৌসের ওয়ারিশ হবে এবং তথায় তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা মোমিনুন, আয়াত ৯-১১)। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’
নামাজ মহান রব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা বেশি বেশি করে আল্লাহর জন্য সিজদা, সালাত আদায় করতে থাক, তোমার প্রতিটি সিজদার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ মাফ করবেন।’ মুসলিম। তিনি বলেন, ‘বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে তখন যখন সে সিজদারত থাকে, সুতরাং তোমরা সিজদা অবস্থায় বেশি বেশি প্রার্থনা কর।’ মুসলিম।
নবীজি আরও ইরশাদ করেছেন, ‘সালাত পাপ মোচনকারী এবং ছোট ছোট গুনাহের প্রায়শ্চিত্ত-রূপ, এক জুমা থেকে আরেক জুমার মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের প্রায়শ্চিত্ত করে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়।’ মুসলিম। নবীজি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সালাত ছেড়ে দিল সে যেন কুফরি করল।’ বুখারি। নবীজি বলেন, ‘বান্দা যখন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে সালাত আদায় করে তখন তার গুনাহসমূহ এমনভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেমন গাছের পাতা ঝরে।’ মুসনাদে আহমদ।
একজন মুমিন ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম নামাজের আমলের ব্যাপারে নির্দেশিত হয়। এ আমলের ক্ষেত্রে ধনী-গরিব, আজাদ-গোলাম, নারী-পুরুষের কোনো বিভেদ নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নামাজ প্রত্যেক মোমিনের ওপর ফরজ। একজন কাফির ও মোমিনের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। একজন অসুস্থ, মুসাফির, এমনকি ভয়াবহ ইসলামী যুদ্ধে লিপ্ত মুজাহিদের জন্যও নামাজ ছেড়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।