হেফাজতের ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা নতুন আমির বাবুনগরী, মহাসচিব কাসেমী

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর অনুসারীদের বিরোধিতার মধ্যেই সম্মেলনের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে গতকাল রবিবার ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।

চট্টগ্রামের দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় গতকাল সকাল থেকে দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠনটির এই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। সারা দেশ থেকে কওমি অঙ্গনের ৪০০ শীর্ষ নেতা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তবে এই আয়োজনে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারীদের দেখা যায়নি। নতুন কমিটিতেও প্রয়াত আমিরের অনুসারীদের কাউকে রাখা হয়নি। তাদের দাওয়াত না দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এতে নবগঠিত কমিটি নিয়ে শুরুতেই হেফাজতের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তির আলামত দেখা দিয়েছে।

হেফাজতের নতুন আমির বাবুনগরী, শফীর অনুসারীদের বিরোধিতা | Silkcity News

হেফাজতের এই সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে আমির ও মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। ১৫১ সদস্যের কমিটির ১২২ জনের নাম ঘোষণা করা হলেও বাকি ২৯ জনের পদ খালি রাখা হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলেম বাদ পড়ে থাকলে তাঁদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে এই পদগুলো পূরণ করা হবে বলে সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

নতুন কমিটিতে অন্যদের মধ্যে মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, আজিজুল হক ইসলামাবাদী সাংগঠনিক সম্পাদক, মাওলানা মামুনুল হক যুগ্ম মহাসচিব, মুফতি ইজহারের বড় ছেলে মুফতি হারুন ইজহার শিক্ষা ও সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহি, হেফাজতের প্রয়াত আমির আল্লামা শফীর ছোট ছেলে ও হেফাজতের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানীসহ আল্লামা শফীর অনুসারী অনেক নেতা। অভিযোগ রয়েছে, সম্মেলনে তাঁদের কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির ও দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) গত ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। এর ৫৯ দিন পর হেফাজত প্রতিষ্ঠার আট বছরের মাথায় এসে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলো।

গতকাল সকাল ১০টায় শুরু হওয়া সম্মেলনে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় ৩৯৪ জন কাউন্সিল সদস্যের মতামত গ্রহণ করা হয়। সম্মেলনের প্রথমে হেফাজতের আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। সভায় ১২ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে দুপুর আড়াইটায় হেফাজতের নতুন কমিটি ঘোষণা করে।

হেফাজতের নতুন আমির বাবুনগরী, মহাসচিব নূর হোসাইন

১৫১ সদস্যের এই কমিটি ঘোষণা করেন বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। কমিটিতে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাশেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে প্রধান করে ২৪ জন উপদেষ্টা, ৩২ জন নায়েবে আমির, সাতজন মহাসচিব, ১৮ জন সহকারী মহাসচিব, ১০ জন সহসাংগঠনিক সম্পাদকসহ মোট ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কমিটিতে ২৯টি সদস্য পদ খালি রাখা হয়েছে। নবনির্বাচিত আমির বাবুনগরীর পরামর্শে যাচাই-বাছাই করে সেসব পদ পূরণ করা হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে প্রয়াত আমির আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী ও তাঁর অনুসারীদের কাউকেই সম্মেলনে দেখা যায়নি। হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহি এরই মধ্যে এই সম্মেলনকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছেন। এর আগে গত শনিবার ঢাকায় ও চট্টগ্রামে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের এই প্রতিনিধি সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তোলে শাহ আহমদ শফীর অনুসারী একটি অংশ।

হেফাজতের এই কাউন্সিল ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাদরাসা এলাকায় জোরদার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হাটহাজারী থানার ওসি মাসুদ আলম বলেন, হেফাজত ইসলামের সম্মেলন ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

নতুন কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : মুফতি ওয়াক্কাছ
হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাছ। গতকাল রাজধানীর দক্ষিণে দোলাইরপাড়ে আসকান টাওয়ারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই অভিযোগ করেন।

সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাছ বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের ইন্তেকালের কারণে হেফাজতে ইসলামের আমির পদটি পূরণের দরকার ছিল। কিন্তু হাটহাজারীতে যে কমিটি পুনর্গঠন হয়েছে তা বিষয়বস্তুতে ছিল না। শুধু আমিরের জায়গায় একজন আমির ঠিক করলেই হয়ে যেত।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে শুরুতেও কোনো আলোচনা করা হয়নি। এমনকি সম্মেলন পর্যন্ত বলা হয়নি, চিঠিও দেওয়া হয়নি। এভাবে অনেক আলেম বাদ পড়ে গেছেন। আমার মনে হয়, হেফাজতে ইসলামের ব্যাপকতা, সর্বজনীনতা ক্ষুণ্ন করতে বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যারা চায় না যে এ দেশে উলামায়ে কেরাম একসঙ্গে থাকুন, তারাই এটা করিয়েছে বলে আমার সন্দেহ।

SHARE THIS ARTICLE