২০২০ সালের মহামারিকালে আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশী কমিউনিটি কি করেছে?(শেষপর্ব)


ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদারঃ
গতকাল আমরা কোভিড মহামারির সময়ে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ, সংবাদপত্র, ফেইসবুক পেজ এবং গ্রুপ সমূহ সম্পর্কে প্রকাশ করেছিলাম। আজ আমরা ব্যাক্তিগত উদ্যোগ এবং এই সময়ে যারা হারিয়ে গেলেন তাদের কথা আলোচনা করবো।

২০২০ সালে ব্যাক্তিগত উদ্যোগ ও সাফল্য
বাংলাদেশী কমিউনিটি থেকে স্থানীয় কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত দুজন কাউন্সিলর হচ্ছেন বাংলাদেশী কমিউনিটির গর্বের স্থান। 

২০২০ সাল কেমন গেলো এ নিয়ে কাউন্টী লিমেরিক থেকে নির্বাচিত সদস্য জনাব আজাদ তালুকদার জানান, বছরটি ছিল কঠিন সময়, সমস্ত পরিকল্পনা এবং চিন্তাভাবনা এলোমেলো হয়ে গেছে। তবে ইতিমধ্যে তিনি স্থানীয় কিছু পরিবর্তন সাধন করেছেন বলে জানান। তার প্রস্তাবিত মুসলিম কবরস্থানের জন্য ইতিমধ্যে কাউন্সিল ৫০,০০০ ইউরো অনুমোদন করেছে, কিন্তু কোভিডের কারণে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। জনাব আজাদ তালুকদার আশা প্রকাশ করেন যে, দ্রুতই কোভীডের ভ্যাক্সিন জনসাধারণের জন্য প্রয়োগ করা হলে মহামারী নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

No description available.

এদিকে ডাবলিনের, ডানলোরী-রাথডাউন কাউন্টী কাউন্সিলের নির্বাচিত কাউন্সিলর জনাব কাজী মোশতাক আহমেদ ইমন জানান, ২০২০ সাল ছিল একটি অনন্যসাধারণ বছর। দ্রুতই কাউন্সিল ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করেছে। তিনি জানান, তিনি আজ গর্বিত যে, এখানে কাউন্টী কাউন্সিলের বিভিন্ন কমিটিতে এবং বিভিন্ন শিক্ষা এবং কমিউনিটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এবং এগুলোর উন্নয়নে তিনি গুরুত্ত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারছেন। ইতিমধ্যে অত্র অঞ্চলের পার্কসমূহে তিনি নির্দেশনামূলক সাইন লাগানোর কাজ সম্পন্ন করেছেন।

ভার্চুয়ালী সভা কিংবা বিভিন্ন ইন্টার্ভিউ বোর্ডে তিনি সম্পৃক্ত থাকতে পারছেন। জনাব মোশতাক আহমেদ মনে করেন, কোভীড নিয়ে আমাদের আরও বছরখানেক বাঁচতে হবে। তিনি বলেন, পুরো দেশের মানুষকে কোভীড ভ্যাক্সিন প্রদান করতে আরও ৫/৬ মাস কিংবা তার বেশী লাগতে পারে। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশী সকলকে প্রথম সুযোগেই ভ্যাক্সিন গ্রহণের আহবান জানান।

মেডিয়া উদ্যোগঃ
ক্যারিকন শ্যানন থেকে জনাব জাহিদ মুমিন চৌধুরী, দীর্ঘদিন থেকে এন টি ভি’র প্রতিবেদক হিসেবে সফলতার সাথে তার কার্য্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে কোভিড সময়ে তার উদ্যোগে এন টি ভি তে টক শো  আয়োজন করা হয় ।

গলওয়ে থেকে জনাব সাইয়েদ জুয়েল, বাংলাদেশে “সময় টিভি”তে বছরব্যাপী নিয়মিত প্রতিবেদন করেন এবং বিভিন্ন সময়ে আয়ারল্যান্ডের সংবাদ পরিবেশন করে প্রশংসিত হয়েছেন। সাইয়েদ জুয়েলের এই প্রতিবেদন আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরিচিত করে তুলতে সহায়তা করেছে। জনাব সাইয়েদ জুয়েল বাংলাদেশ ভিত্তিক “ডেইলি নাগরিক” পত্রিকায় কয়েকটি প্রতিবেদন এবং রচনা প্রকাশ করেছেন। জনাব সাইয়েদ জুয়েলের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, কোভীড সময়ে সংবাদ সংগ্রহ বিশেষ করে ভিডিও ছবি তোলার জন্যে তাকে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়েছে যা ছিল বেশ ঝুকিপূর্ন। সংবাদ জোগাড় করার জন্য তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে এই কোভীড সময়ে। তিনি কমিউনিটির জন্য তার কাজ অব্যাহত রাখার সংকল্প ব্যাক্ত করেন।

ডাবলিন থেকে জনাব মাহিদুল ইসলাম সবুজ কোভিডকালিন সময়ে কয়েকটি সংবাদ প্রচার করেছেন এটি এন বাংলা টিভিতে। তিনি জানান, কোভিড সময়ে তিনি বেশ সংকটপূর্ন সময় অতিক্রম করেছেন। সংকট উত্তরণ হলে আবারো তিনি এগিয়ে যাবেন। তিনি ফেইসবুক ভিত্তিক “ডাবলিন ডাইরি”  নামে একটি পেইজ পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান। 

ডাবলিন থেকে, জনাব রুবাইয়েত দ্বীপ এবং গলওয়ে থেকে সাইয়েদ জুয়েলের উদ্যোগে কয়েকটি টক শো ফেইসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করা হয়।

“চ্যানেল১৯” যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেল পরিচালনা করেন জনাব খসরুল আলম। এই চ্যানেল বিগত কোভিড সময়ে বেশ কয়েকটি লাইভ অনুষ্ঠান আয়োজন করে যেখানে আয়রল্যান্ড থেকে যুক্ত ছিলেন বাংলাদশী প্রবাসী শিশু, মহিলা এবং পুরুষ। কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন আয়ারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশীরা এবং কখনো আড্ডা, কখনো বা আলাপচারীতা করেছেন। অনুষ্ঠানগুলো আয়ারল্যান্ডের দর্শকদের জন্য উপভোগ্য ছিল। আয়ারল্যান্ড থেকে এই চ্যানেলটির কার্য্যক্রম সমন্বয়ের কাজ করেছেন ডাঃ মুশাব্বির হোসেইন।

Image may contain: Mushabbir Hossain


ডাবলিন থেকে, জনাব দিলিপ বড়ুয়া “প্রবাসী টিভি আয়ারল্যান্ড” নামে একটি সাপ্তাহিক সংবাদ পরিবেশনের উদ্যোগ নিলে সমাজে বেশ প্রশংসিত হন। দিলিপ বড়ুয়া জানান, ইতিমধ্যে তিনি একই নামে একটি ফেইসবুক পেইজ করেছেন এবং সেখানে এখনো সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। কোভিড কালীন সময়ে তিনি কয়েকজন চিকিৎসক নিয়ে কয়েকটি টোক শো এবং একটি গল্প ও গানের অনুষ্ঠান করেছেন। “গল্প গানে পরিচয়” নামের ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন জনাব শিবলি ইসলাম, রাসেল চৌধুরী এবং অরবিন্দ বড়ুয়া। অদূর ভবিষ্যতে “লাইভ নিউজ” করার চিন্তা ভাবনা প্রকাশিত হয় তার কণ্ঠে। প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে সচেতন করার লক্ষ্যে তার এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে।

Image may contain: 1 person, text that says "EJD MUBARAK "... DILIP BARUA'S BREAK WS"

ডাবলিন থেকে জনাব হামিদুল নাসির এসবিটিভি নামে একটি চ্যানেল থেকে কোভিড-১৯ সময়ে বেশ কয়েকটি আলোচনা অনুষ্ঠান লাইভ স্ট্রিমিং করেছেন। আলাপকালে তিনি অবগত করেন যে, অনুষ্ঠানসমূহ মূলত আলোচনামূলক ছিল, মূল উদ্দেশ্য ছিল কমিউনিটিকে সচেতন করে তোলা। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কোভিড মহামারি সম্পৃক্ত বিষয়ে তাদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছিল বলে তিনি অবগত করেন।


কিলার্নী থেকে জনাব আরিফুল ইসলাম রিপন একটি অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আয়ারল্যান্ডে চিত্রিত এবং রেকর্ডকৃত ধারাবাহিক “বেলা শেষে মেঘের দেশে” নামে একটি নাটকের চারটি ইপিসোড ইতিমধ্যে ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে। আয়ারল্যান্ড প্রবাসীর এই নাটক ছিল একটি অনন্যসাধারণ উদ্যোগ। অনেকেই প্রশংসা করেছেন তার শব্দ এবং ফটোগ্রাফির। আশা করা যায় ভবিষ্যতে তার এই উদ্যোগ আরও প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

জনাব রিপনের সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, আয়ারল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পারিবারিক এবং সামাজিক বিবর্তন এবং জীবনের সংগ্রামকে চিত্রায়িত করাই তার প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি ইতিমধ্যে ধারণকৃত চারটি ইপিসোডের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন যে, এখানে তিনি দেখাতে চেয়েছেন প্রবাস জীবনে দূর্ঘটনার কারণে পঙ্গু হয়ে যাওয়া ব্যাক্তির পারিবারিক এবং সামাজিক অঙ্গনে কি প্রভাব ফেলতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে তিনি আরও ইপিসোড করার ইচ্ছা ব্যাক্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে তিনি প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যাকে চিত্রায়িত করতে চান।

রোকসানা হক কর্ক থেকে ইউ টিউবে আয়ারল্যান্ডে ভ্রমণ বিষয়ক অনুষ্ঠানের ২২টি এপিসোড রেকর্ড করে শেয়ার করেছেন। আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে তিনি দর্শকদের জন্য উপহার দিয়েছেন ইউটিউবে।

রাইকা খান  “রাই প্রিন্সেস” নামে ইউটিউব চ্যানেলে বেশ কিছু ছোটদের জন্য ভিডিও নির্মান করেছে । রাইকা খান কর্কের রফিক খানের কন্যা। উতসাহ পেলে সে আরো সুন্দর সুন্দর ভিডিও নির্মান করবে।

No description available.
রাইকা খান


রিসোর্স পার্সোনালঃ রিসোর্স পার্সোনাল হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সময়ে মেডিয়া চ্যানেলে কোভিড মহামারি বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন ডাবলিন থেকে ডঃ আরমান রহমান এবং ডাঃ মুশাব্বির হোসেন। তারা বিশ্বব্যাপী বেশ কিছু চেনেলে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন। 

সড়ক দূর্ঘটনায় আহত
২রা অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার রাতে ডাবলিনের বলসব্রিজে বাস দুর্ঘটনায় মারাত্নক আহত বাংলাদেশী প্রবাসী জনাব শাহেদ চৌধুরী প্রায় ৩ দিন আই সি ইউ তে ভেন্টিলেটরে থাকার পর তাকে ভেন্টিলেটর থেকে মুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে সার্জারীর পর তার শারীরিক অবস্থা উন্নত হলে তিনি নিজ গৃহে ফিরে আসেন।

২০২০ এ যারা হারিয়ে গেলেন:
২০২০ সালে আমাদের কমিউনিটির বেশ কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আল্লাহ তাদের সকলকে জান্নাতে স্থান দিন। কোভীড কালীন সময়ে তাদের এই মৃত্যু কমিউনিটির জন্য ছিল বেশ বেদনার। বিশেষ করে এই সময়ে মৃত্যু পরবর্তী যোগাযোগ এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি আয়োজন ছিল বেশ দুঃসাধ্য। তবুও প্রবাসী বাংলাদেশীরা এসকল দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। যারা এবছর হারিয়ে গেছেন তাদের মৃত্যুর তারিখ, মৃত্যুর কারণ এবং নাম প্রকাশ করা হলো। 

১। ২৬শে মার্চ ২০২০ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন জনাব আমরুল হোসেন
২। ১৬ই এপ্রিল ২০২০ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুবরণ করেন জনাব কবির আহমেদ ছোটন। 
৩। ৯ই জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন টিউমে বসবাসকারী জনাব আইনুল হক। 
৪। ১০ই জুলাই দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কর্কের অধিবাসী জনাব জুয়েল মিয়া মৃত্যুবরণ করেন।
৫। ৩০শে জুলাই ট্রালি নিবাসী জনাব মসিউল ইসলাম জাকিরের শিশু কন্যা সারা, জন্মগত ফুসফুসের সমস্যায় মৃত্যুবরণ করেন।   
৬। ২০শে সেপ্টেম্বর আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন ডোনেগাল থেকে জনাব ফরিদ খান
৭। ৯ই ডিসেম্বর দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন কাউন্টি কেরি থেকে জনাব সেলিম হোসেইন। 

শেষ গল্পঃ সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে “বীরবল” ছিলেন তাঁর নবরত্নের অন্যতম। আকবরের শ্যালক বীরবলের ব্যাপারে বাদশাহর মনোভাব এবং আস্থার জন্য মারাত্নক ঈর্ষান্বীত ছিলেন। একদিন তিনি বাদশাহ আকবরকে বললেন, বীরবলকে সরিয়ে দিয়ে ঐ পদে তাকে আসীন করার জন্য। তিনি আকবরকে বললেন যে , বীরবলের চেয়ে অনেক ভালো পরিসেবা তিনি দিতে সক্ষম। রাণীও বাদশাহকে অনুরূপ পরামর্শ দিলে বাদশাহ চিন্তাহ্নিত হয়ে গেলেন। 

এই সংবাদ রাজপরিবার থেকে বীরবলের নিকট পৌঁছালে বীরবল পদত্যাগ করে বিদায় নিলেন আর আকবর তাঁর শ্যালককে বীরবলের স্থানে মন্ত্রী নিয়োগ করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই আকবর তাঁর শ্যালকের বুদ্ধি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে তিনশো স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে বললেন, “এই স্বর্ণ মুদ্রাগুলি এমনভাবে ব্যয় করতে হবে, যেন বর্তমান জীবনেই আমি একশো স্বর্নমুদ্রায় বিনিময় ফিরে পাই; অন্য একশো স্বর্নমূদ্রার বিনিময় আমি পরজগতে চাই, আর বাকী একশো স্বর্নমূদ্রার বিনিময় আমি ইহজগতে কিংবা পরজগতে কোথাও চাইনা।”

শ্যালক মন্ত্রী কোনভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারছিলেন না, হতাশ হয়ে স্ত্রীর পরামর্শে রাণীর সাহায্য কামনা করলেন। রানী তাকে বীরবলের সাহায্য নেবার পরমার্শ দিলে তিনি বীরবলকে সকল কিছু খুলে বলে সাহায্য চাইলেন। বীরবল বললেন, “আমাকে স্বর্নমুদ্রা গুলো দিয়ে দিন। বাকিটা আমি সামলে নেব। “

বীরবল তার হাতে সোনার মুদ্রার ব্যাগটি নিয়ে শহরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন । তিনি লক্ষ্য করলেন যে, শহরের অন্যতম একজন ধনী ব্যাবসায়ী তাঁর ছেলের বিবাহ উদযাপন করছেন। বীরবল তাকে একশো স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বললেন, “সম্রাট আকবর আপনার ছেলের বিবাহ উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ প্রেরণ করেছেন। অনুগ্রহ করে সম্রাটের উপহার গ্রহণ করুন।” ব্যাবসায়ী বাদশাহ আকবরের শুভেচ্ছা বার্তা আর উপহার পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে গেলেন। বীরবলকে সম্মানের সাথে আপ্যায়ন করা হলো এবং অনুষ্ঠানে সম্রাটের স্তুতিগান করা হলো। বীরবল যখন বিদায় নিতে গেলেন তখন ঐ ব্যাবসায়ী তাকে প্রচুর মূল্যবান উপহার সামগ্রী এবং এক থলে স্বর্ণ মুদ্রা সম্রাটের জন্য সম্মানী উপহার দিলেন।

এরপর বীরবল বাজার থেকে একশো স্বর্নমূদ্রার বিনিময়ে খাবার আর পোশাক কিনে শহরের সবচেয়ে গরীব অঞ্চলে গিয়ে সেখানে সেই সকল খাবার আর পোশাক বিতরণ করলেন। খাবার আর পোশাক পেয়ে জনগণ এতই আনন্দিত হলো যে, সম্রাটের দীর্ঘায়ূ কামনা করে তারা প্রার্থনা সভার আয়োজন করলো। 

এরপর বীরবল আরও একশো স্বর্নমূদ্রা ব্যয় করে শহরে সংগীত ও নৃত্যে ভরপুর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। এই অনুষ্ঠানে প্রচুর জনসমাগম হলো।  

এর পরের দিন বীরবল আকবরের দরবারে উপস্থিত হয়ে জানালেন যে, উনি উনার শ্যালককে তিনশো স্বর্নমূদ্রা দিয়ে যা যা করতে বলেছিলেন তা করা হয়েছে। সম্রাট কিভাবে ব্যয় করেছেন জানতে চাইলে বীরবল সমস্ত ঘটনা ধারাবাহিক বর্ণনা করলেন এবং বললেন, “আমি যে অর্থ ব্যাবসায়ীর ছেলের বিবাহের জন্য দিয়েছিলাম- আপনি এই পৃথিবীতে থাকাকালীন তাঁর বিনিময় পেয়ে গিয়েছেন। গরিবদের জন্য খাবার এবং পোশাক কেনার জন্য যে অর্থ ব্যয় করেছি – তাঁর বিনিময় আপনি পরজগতে পাবেন আর সাংস্কৃতিক উৎসবে  আমি যে একশো স্বর্নমূদ্রা ব্যয় করেছি- তাঁর বিনিময় আপনি না এখানে পাবেন আর না পাবেন সেখানে।

আকবরের শ্যালক তাঁর অক্ষমতার কথা বুঝতে পেরে বীরবলের নিকট ক্ষমা চাইলেন আর আকবর আবার বীরবলকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করলেন।


মন্তব্যঃ  ১। কমিউনিটি প্রতিষ্ঠানসমূহের খাদ্য সামগ্রী বিতরণের এই উদ্যোগ আয়ারল্যান্ডে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে, বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশীদের ভাবমূর্তী উজ্জ্বল হয়েছে। আমরা প্রতিটি সংগঠনের সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্য সাধুবাদ জানাই এবং এধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার আহবান জানাই।

২। বিগত এক যুগে আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন কাউন্টিতে বাংলাদেশীদের উদ্যোগে বেশ কিছু মসজিদ এবং মক্তব গড়ে উঠেছে। এগুলো কমিউনিটির সফলতার মাপকাঠি। এই সংস্থাগুলো একদিকে যেমন নামাজ পড়ার সুযোগ তৈরি করেছে, সেই সাথে কমিউনিটির যোগাযোগের কেন্দ্র হয়েছে, সবচেয়ে বেশী সফলতা এসেছে মক্তব কিংবা মাদ্রাসা থেকে। এই উদ্যোগগুলোকে সহায়তা করে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ধর্মীয় ভিত্তি শক্তিশালী করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 

৩। প্রেসিশন অনকোলজী আয়ারল্যান্ড এর পক্ষ থেকে কমিউনিটির ক্যানসার সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগটি ছিল অনন্য। আমরা মনে করি এসকল অনুষ্ঠানে আমাদের সদস্যদের সর্বাত্নক অংশগ্রহণ প্রয়োজনীয়।

৪। ফেইসবুক পেইজ/গ্রুপ, টেলিভিশন সংবাদ, মেডিয়া কর্মকান্ড এবং সংবাদপত্র প্রকাশনা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এগুলো সামাজিক শক্তি তবে এই সকল উদ্যোগকে ধারণ করে রাখা গুরুত্ত্বপূর্ন।

৫। জনাব রিপনের নাটক “বেলাশেষে দিনের শেষে” বিশেষ সাধুবাদের অধিকার প্রাপ্ত। মানোত্তীর্ন এবং জনপ্রিয় ইপিসোড হোক তার আগামী দিনের সাথী।

৬। ২০২০ সালের এই মহামারির সময়ে আমাদের কমিউনিটির যে সকল ব্যাক্তিত্ত্ব হারিয়ে গেছেন তারা কেউই মহামারিতে আক্রান্ত ছিলেন না। তাদের সকলের আত্নার শান্তি কামনা করছি। আল্লাহ তাদের পরিবারকে ধৈর্য্য ধারণের শক্তি প্রদান করুন। আমিন।

উপসংহারঃ  আমি এই রচনার শুরুতে আপনাদেরকে যে গল্প বলেছিলাম সেই গল্পের নৈতিক শিক্ষা ছিল যে, অনেক কিছুকেই আমরা সুন্দরভাবে চিত্রায়িত করতে পারি, যদি আমাদের মেধা, ইচ্ছা আর মনন থাকে।

শেষ গল্পের নৈতিক শিক্ষা হচ্ছে, আমরা সমাজে অনেক কাজ করে থাকি, সেই সকল কাজের উদ্দেশ্য এবং পরিধির উপর ভিত্তি করে কিছু কাজের বিনিময় আমরা বর্তমানেই পেয়ে যাই, কিছু কাজের বিনিময় আমরা পাব পরজগতে আর কিছু কাজের বিনিময় না পাবো ইহজগতে আর না পাবো পরজগতে। আমাদের সমাজে বিগত মহামারীর সময়ে অনেকেই অনেক কাজ করেছেন, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কে কোন উদ্দেশ্যে করছেন আর কোথায় বিনিময় চান আর কোথায় বিনিময় পাবেন সেটা নির্ভর করবে আমাদের কাজের পরিধি এবং উদ্দেশ্যের উপর। 

SHARE THIS ARTICLE