সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বুধবার (২৬ মে) ভেঙে যাওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায়, সেসব পয়েন্ট দিয়ে এখনো জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকালে সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগর, আশাশুনি, তালা, দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলার নতুন কয়েকটা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ছাপিয়ে পানির তোড়ে ভেসে গেছে ৩৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক হাজার মাছের ঘের। অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধসে গেছে কয়েক কিলোমিটার পাকা রাস্তা। এ অঞ্চলের মানুষের খাবার পানির উৎস শত শত মিষ্টি পানির পুকুর লবণ পানিতে ডুবে গেছে।
এদিকে বাঁধের কাছাকাছি শক্ত মাটি না থাকায় বাঁধ সংস্কারে বিলম্ব হচ্ছে। দূর থেকে বালি এনে জিও ব্যাগে ভরে কোনোরকমে পানি বন্ধ করার চেষ্টা করছে স্থানীয়রা। স্বেচ্ছাশ্রমে বার বার ভাঙা বাঁধ মেরামত করেও টিকিয়ে রাখতে না পারায় আশাহত তারা।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা কবিরুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে গত বুধবার দুপুরে নদীতে ৫ ফুট উচ্চতার বেশি জোয়ার সৃষ্টি হয়। এতে গাবুরার লেবুবুনিয়াসহ তিনটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়ে শতাধিক পরিবার।
লেবুবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, বাঁধের পাশে মাটি না থাকায় সংস্কার করা যাচ্ছে না। গ্রামের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে সেখানে কোনোরকমে বালুর বস্তা দিয়ে পানি বন্ধ করা হলেও, বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারে সেটা আবার ভেঙে গেছে।
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু জিও ব্যাগ ও ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এই সামান্য অর্থদিয়ে এত বড় ভাঙন সংস্কার করা সম্ভব নয়। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা ও স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চলছে। নিজেদের জানমাল রক্ষায় তারা সবাই একযোগে কাজ করছেন। কিন্তু বার বার মেরামত করে টিকয়ে রাখা এই বাঁধ বাঁধার মত মাটি ও বালি না থাকায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধের কিছু অংশ বন্ধ করার পর জোয়ারে আবার সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সীমান্তবর্তী ইছামতি, কালিন্দি ও কাকশিয়ালি নদীর অস্বাভাবিক পানির চাপে উপজেলার রতনপুর, মথুরেশপুর, কুশলিয়া ও ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর থেকে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরের পর থেকে নদীর পানি বেড়িবাঁধ ওভার ফ্লো হয়ে ৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বৃৃহস্পতিবার সকালের জোয়ারে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বাঁধ উপচে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করে। পানিতে নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। পানিতে কয়েক হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। এই মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে না। বর্তমানে আশ্রয় কেন্দ্রে কোনো মানুষ নেই। সবাই নিজ নিজ এলাকার উঁচু স্থানে অবস্থান করছেন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দ্বিতীয় দিন আবারও কয়েটি নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় সেখান থেকে নদীর পানি ঢুকছে। স্থানীয় গ্রামবাসী বালির বস্তা ও মাটি ফেলে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা চলছে।
শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (এসও) মাসুদ রানা বলেন, উপজেলায় মোট ৪৪৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এর মধ্যে ভেঙে পড়া বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছি। বাঁধের কাছাকাছি শক্ত মাটি না থাকায় সংস্কার করা যাচ্ছে না। পানি নেমে গেলে বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানকে ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১২ ইউনিয়নে আরও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সবমিলিয়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনি বলা সম্ভব না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। সেই তালিকা পাওয়ার পর সঠিক তথ্য জানানো যাবে।