আলমগীর হুসাইন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে: মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতাগ্রহণের পর অভিবাসীদের ঢল নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে। প্রাথমিকভাবে বেশিরভাগ অভিবাসীকে আটক করে আটককেন্দ্রে রাখা হয়।
তবে এখন থেকে গর্ভবতী, সদ্য সন্তান প্রসব করা নারী ও এক বছরের মধ্যে সন্তান প্রসবকারী নারীকে আটক করা হবে না বলে জানিয়েছে মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তাদের সঙ্গে শিশু ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও এমন সুবিধা পাবে।
ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ইনফোর্সমেন্টের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক তায়ে জনসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, নতুন নির্দেশিকা দেশের আইন প্রয়োগ করার সময় প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে শ্রদ্ধা ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণের প্রতিচ্ছবি।
বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থাটিকে আরও মানবিক করতে চাইছে। তবে রিপাবলিকানরা যুক্তি দিয়েছেন যে বাইডেন প্রশাসনের নীতিগুলি সীমান্তে মানবিক সংকট তৈরি করেছে এবং অনিয়ন্ত্রিত অবৈধ অভিবাসনকে অনুমতি দিয়েছে।
শুক্রবার আরকানসাস রিপাবলিকান সেন টম কটন বলেছেন, ‘শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের মানব পাচারকে উৎসাহিত করার মধ্যে মানবিক কিছুই নেই। এই নীতিটি সীমান্ত সংকটকে আরও খারাপ করে তুলবে।’
এমন নীতির বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মামলা দায়ের করেছে টেক্সাস শেরিফ, তাদের কাউন্টি এবং ফেডারেল পুলিশ ফাউন্ডেশন।
ক্যারোলিনা অভিবাসী নেটওয়ার্কের ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি রেবেকা ও’নিল বলেন, নীতিটি যুক্তি দেয় যে তাদের ক্লায়েন্টদের যুক্তরাষ্ট্রেই থাকতে হবে। তবে তিনি বলছেন এটি কেবল একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত যা অন্য প্রশাসনের দ্বারা পরিবর্তন হতে পারে।
তিনি বলেন, এটিকে অগ্রগতি হিসেবে দেখা যেতে পারে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে এদেশে এখনো অভিবাসন আইনে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেছেন যে ওবামা প্রশাসনের অধীনে আইসিই অফিসাররা প্রায়শই বিবেচনা করতেন যে কেউ তাদের আটকে রাখবেন কিনা তা নির্ধারণের আগে গর্ভবতী ছিল কিনা। তবে ও’নিল বলেছেন যে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে তেমন কোনো নির্দেশনা ছিল না।
২০১৯ সালের সরকারি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে গর্ভবতী নারী বন্দি ২০১৬ সালে ছিলেন ১৪০০ জন এবং ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১০০ জন।
২০২০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া গর্ভবতী নারীরা কিভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তার একটি বিস্তারিত রিপোর্ট এর আগেও ব্রেনি জে.পালমার এর এডভোকেসি প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ করেছিল। ICE এর সীমাহীন অবহেলা তাতে দেখা যায়। এখানে কিছু তথ্য উঠে আসে যেখানে দেখা যায় কিছু নারী অসহায় অবস্থায় আমেরিকাতে এসে সন্তানের জন্ম দিলেন, আশ্রয় চাইলে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং ভূমিষ্ঠ সন্তানটিকেও কোন বার্থ সার্টিফিকেট এবং তাকে আমেরিকার নাগরিক হিসাবে স্বীকার না করে ফিরিয়ে দেয়া হয়। অনেককে পাঠিয়ে দেয়া হয় মেক্সিকোতে, অথচ আমেরিকায় নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে জন্মস্থাননীতি সংবিধানস্বীকৃত।
আরও পড়ুন:ইউরোপে অনলাইনে মুসলিমবিদ্বেষের ঘটনা বাড়ছে, জার্মানিতে নিত্য ঘটনা
যেকোন অবস্থাতেই গর্ভবতী এবং প্রসব পরবর্তী অবস্থায় তথা ছোট ছোট সন্তান আছে এমন নারী ডিটেনশনে থাকা একটি অমানবিক ব্যাপার, বিশেষ করে তারা যখন আশ্রয়প্রার্থী হন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বহু আগে থেকেই এ ধরনের নারীদেরকে ডিটেনশনে রাখার তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। Refugee and Immigrant Center for Education and Legal Services এর পরিচালক আন্দ্রিয়া মেজা (Andrea Meza) আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে যেকোনো পরিস্থিতিতে এধরনের মায়েদের উপরে ডিটেনশনের নিয়মটি বাতিল হবে। তিনি বলেন; একমাত্র তখনই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে যদি তারা কোনো বড় ধরনের অপরাধ করেন।
আরও পড়ুন: নিউ ইয়র্কে নতুন আইন, চাইলেই ফাস্ট ফুড কর্মীদের ছাঁটাই নয়
বর্তমানে অসংখ্য মানবাধিকার কর্মী সচেতন জনগণ এবং আন্তর্জাতিক মহল এ বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যদিও আইন এবং মানবাধিকারের সাথে সম্পৃক্ত অনেকেই মনে করছেন যে এটি নতুন নীতিগুলি অভিবাসীদের জন্য উপকারী এবং অতীতের চেয়ে মানবিক হবে একই সাথে তারা সকলেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন কেননা অতীত এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল এবং বাস্তবে যা হয়েছে তা হলো আগের নীতিরই পুনর্লিখন।