আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ সিলেবাসে রদবদল এনেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ সরকার। দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে দেয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। তবে বাদ দেয়ার তালিকা থেকে একা রবীন্দ্রনাথ নন। কোপ পড়েছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা সর্বজনমান্য দার্শনিক ডঃ রাধাকৃষ্ণানের উপরও।
তাঁর লেখা প্রবন্ধ ‘দ্য উইমেন্স এডুকেশন’ এতদিন পড়ানো হত। সেটিও বাদ দিয়েছে যোগী সরকার। বাতিল হয়েছে মুলকরাজ আনন্দের বিখ্যাত গল্প ‘দ্য লস্ট চাইল্ড’। আর কে নায়াননের ‘অ্যান এস্ট্রোলজারস ডে’-এও ঠাঁই পায়নি এই সিলেবাসে। প্রখ্যাত ভারতীয় লেখকদের লেখা বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়া সিলেবাসে জায়গা পাননি মিলটন এবং শেলি-ও। বদলে যুক্ত হয়েছে রামদেব ও যোগীর কীর্তিকলাপ।
তবে যোগীরাজ্যের এহেন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায়, ওঁরা কোনোদিন বাঙালির ঐতিহ্য বোঝেনি। ওঁদের কাছ থেকে এহেন আচরণ প্রত্যাশিত। দেশের সংস্কৃতি বোঝে না ওঁরা।
জানা গেছে, নতুন শিক্ষাবর্ষে ইংরাজির জন্য ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বা এনসিইআরটি-র সিলেবাস চালু করছে উত্তরপ্রদেশ। এই সিলেবাস অনুযায়ী ছাত্রদের উপর থেকে পাঠ্যের বোঝা খানিক কমানো হচ্ছে। আর এই সুযোগে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে।
এতদিন দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি সিলেবাসে পড়ানো হত তাঁর ছুটি গল্পটি। ‘দ্য হোমকামিং’ নামে সেই গল্প সানন্দে পড়ত পড়ুয়ারা। কিন্তু এবার থেকে আর সেটি হচ্ছে না। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ে আর দেখাশোনা হচ্ছে না পড়ুয়াদের।
তবে রবীন্দ্রনাথের বাদ পড়া নিয়ে সারা দেশেই জমেছে বিতর্ক। রবীন্দ্রনাথ শুধু নোবেলজয়ী কবি তো নন, তিনি আমাদের দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। তাঁর লেখার সঙ্গে পড়ুয়াদের পরিচয় না করানো কি নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁকে না চেনানোর রাস্তাই খুলে দিচ্ছে না! এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু একটি টুইটে জানিয়েছেন, যদি যোগী আর রামদেব রবীন্দ্রনাথকে সরিয়ে দিতে পারে, তবে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতে তিনি আশার আলো দেখছেন না। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই কারণেই বাংলা বিজেপিকে সর্বান্তকরণে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি সাংবাদিক সম্মেলন করেও যোগী রাজ্যের এ হেন আচরণের তীব্র নিন্দা করছেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, বাংলায় নির্বাচনী প্রচারে এসে বারংবার রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করে বাংলার মন জয় করতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যান্য নেতাদের মুখেও তখন শোনা যেত রবীন্দ্রনাথের নাম। সেই রবীন্দ্রনাথই যখন বিজেপিশাসিত ‘মডেল’ রাজ্যের সিলেবাস থেকে বাদ পড়লেন, তখন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। ব্রাত্যের টুইটেও রয়েছে সেই ইঙ্গিত।