সামীর রূহানী [ অভিনেতা – লেখক ] : আজ ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ ডে বা বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ! তবে আমাদের দেশে মেন্টাল হেলথ কেয়ার বিষয়টা এখনো ট্রল করার সাবজেক্ট হিসাবেই পরিচিত । অথচ আমাদের দেহের কোনো একটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নষ্ট হয়ে গেলে যেমন শরীর আর ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না ঠিক একই ভাবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে আপনার লাইফ বলে কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না । দেহের মৃত্যু হলে সবাই খোজ করে কিন্তু আত্মার মৃত্যুর খবর কেউ রাখে না । পশ্চিমা বিশ্বে মেন্টাল হেলথ ইশ্যু কে সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে প্রচন্ড সাপোর্ট করা হয় । তারা বিষন্নতা কে কখনো হেলাফেলা করে না । নিয়মিত সাইক্রেটিকসের কাছে কনসাল্টেশন করে থাকে । আর আমাদের দেশে সাইক্রেটিকসের কাছে যাওয়া মানেই সমাজ এবং পরিবার আপনাকে মানসিক রোগী বা ডাইরেক্ট পাগল হিসাবে ট্রিট করবে ট্রল করতে থাকবে । আপনাকে তারা আরো ভাঙবে । তারা আপনাকে ভাঙতে ভাঙতে এমন অবস্থার সৃষ্টি করবে যে আপনি নিজেকে ঘৃণা করতে থাকবেন হীনমন্যতায় ভুগতে থাকবেন । আর আপনার লাইফ বরবাদ হয়ে যাবে । আবার যদি আপনি বিষন্নতা কাটাতে তথাকথিত এই হিপোক্রেট সমাজ ও পরিবারের কথা চিন্তা করে লজ্জায় সাইক্রেটিকসের কাছে না যান তাহলেও আপনি খুব সহজে বাচতে পারবেন না । আপনি এই ডিপ্রেশন থেকে বাচতে ড্রাগ এডিক্ট হয়ে যাবেন না হয় খুব বেশি পরিমাণে বিষন্নতা আপনাকে গ্রাস করে ফেললে আত্ম হননের দিকেও চলে যেতে পারেন । কারণ বিষন্নতা এতটাই খারাপ এক অসুখ যা আপনার নিজের মনের উপর কন্ট্রোল করার ক্ষমতা পরিপূর্ণ নষ্ট করে দেয় । এছাড়া অতিরিক্ত বিষন্নতা শারীরিক বিভিন্ন কঠিন রোগের কারণ হতে পারে যা আপনাকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে সক্ষম । তাই আপনার নিজেকে ভালো রাখতে হলে নিজেকে ভালো বাসতে হলে নিজের মেন্টাল হেলথের প্রতি সর্বোচ্চ কেয়ার করতেই হবে । আপনার যদি প্রয়োজন হয় আপনি সাইক্রেটিকসের কাছে কনসাল্ট করার জন্য অবশ্যই যাবেন । লাইফে বিষন্নতা আসে শ্রাবণের পাতা ঝরা অরণ্য নিয়ে । এর মাঝেও এক ধরনের স্নিগ্ধতা আছে । আপনি যদি বিষন্নতার যত্ন নিতে শিখে যান তাহলে সেই অরণ্যে পাতা বাহার আবার তার চিরচেনা রূপে নতুন মাধুর্য্য নিয়ে আসবে । আর মানুষের জীবনটা হচ্ছে একটা কাচের খেলাঘর । আপনার চারপাশের মানুষজন কাচের দেয়ালে পাথর ছুড়ে মারবেই । যদি সেটাকে আঘাত করতে দেন বা নিজেই আঘাত করতে থাকেন তাহলে ভাঙ্গা ঘরের কাচের আঘাতে আপনি নিজেই ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত হবেন । আর যদি কাচের ঘরটাকে ঠিক ভাবে আগলে রাখতে জানেন তাহলে সেটাকে স্বপ্নের শিষ মহল বানাতে পারবেন । পারিবারিক অশান্তি সব ঘরেই আছে । যেখানে ভালোবাসা আছে সেখানে রাগ অভিমান থাকবেই । সেটা নিয়ে হীনমন্যতায় থাকার মাঝে কোনো ব্যক্তিত্ব নাই । পরিস্থিতি ফেস করা তার সামনে স্ট্যান নেয়াটা হচ্ছে প্রকৃত সত্ত্বার পরিচয় । কে আপনাকে ভালোবাসলো না কে আপনার মূল্যায়ন করছে না সেটা কোনো বিষয় না । কারা আপনাকে ভালোবাসে আর কারা আপনাকে মূল্যায়ন করে সেটা নিয়ে গ্রেটফুল থাকেন । মনে রাখবেন আমাদের প্রিয় নবীজি আল্লাহর প্রিয় হাবিব রাসূলে পাক হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা [ সা : ] সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব হওয়া সত্ত্বেও তাকেও মানুষ কষ্ট দিয়েছে আঘাত করেছে অন্যায় ভাবে । তাই বলে কি তাহার শ্রেষ্ঠত্ব ম্লান হয়ে গেছে ? তাহলে আপনি উম্মাতে মোহাম্মদ হয়ে নিশ্চয়ই আপনার নিরাশ হওয়ার কোনো অধিকার নাই । এখন সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার । আমরা একটা মেন্টালি সিক ট্রলবাজ সমাজের মাঝে বসবাস করছি । যেখানে অন্যের দুঃখ কষ্ট সমাজের জন্য হাসির খোরাকে রূপান্তরিত হয়েছে আজকাল । বর্তমান সমাজে আপনি যাই করবেন আপনাকে মানুষ ট্রল করবে । আপনি সখ করে চুল দাড়ি রাখেন আপনাকে ট্রল করবে / আপনি চুল কালার করেন আপনাকে ট্রল করবে / আপনি একটু ফ্যাশন করে ড্রেসআপ করেন আপনাকে ট্রল করবে / আপনি লাইফে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন মানুষ আপনাকে ট্রল করবে / আপনি সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করেন আপনার চেহারা না হয় মেয়ের আভিজাত্য নিয়ে ট্রল করবে / আপনি আপনার প্রেমিক অথবা প্রেমিকার হাত ধরে রাস্তায় হাটেন বা রাস্তা পার করে দেন কিংবা হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজেন আপনাকে ট্রল করবে / আপনার সাজানো সংসারটা হঠাৎ ভেঙে যাক মানুষ আপনাকে নিয়ে ট্রল করবে / আপনি রাস্তায় হোচট খেয়ে পড়ে যান মানুষ আপনাকে নিয়ে ট্রল করবে / আপনি কারোর দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মনের কিছু কথা ফেসবুকে লিখবেন তো মানুষ আপনাকে ট্রল করবে / আপনি অভাবে পড়ে খারাপ অবস্থার মাঝে দিনযাপন করেন আপনাকে নিয়ে মানুষ ট্রল করবে । মানে আপনি যেটাই করেন এই সমাজ আপনাকে নিয়ে ট্রল করবেই । ট্রল করতে করতে এরা অসভ্য বিকারগ্রস্থ মানুষদের সেলিব্রেটি পর্যন্ত বানাই ফেলে । তাই নিজে ভালো থাকতে হলে এই ট্রলবাজ সমাজকে ডোন্ট কেয়ার করতে শিখুন । আপনার মেন্টাল হেলথ ঠিক রাখার জন্য আপনার যেটা ভালো লাগে যা করতে ইচ্ছা করে তাই করবেন । এই ধরেন আমার বৃষ্টিতে ভিজতে রাস্তার ফুল কুড়াতে আর জোছনা রাঙা রাতে একাকি ছাদে জোছনা মাখতে অনেক বেশি ভালো লাগে । বৃষ্টি হলেই খালি পায়ে রাস্তায় বের হয়ে যাওয়া বৃষ্টির জলে নিজেকে ভেজানো আমার কাছে নেশার মতন লাগে । আমার এসব ভালো লাগে । ঠিক তেমনি আপনার হয়তো কাউকে এক নজর দেখতে ভালো লাগে । আপনি তাকে একবার না হাজারবার দেখেন । ধরেন আপনার কারোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে বা গান শুনতে ইচ্ছা করছে সো সেটাই করেন । আপনার কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে জাস্ট লিখে ফেলেন । আপনার ছবি আকতে ইচ্ছা করছে যা ইচ্ছা একে ফেলেন । আবার ধরেন আপনি কারোর প্রেমে পড়েছেন । আপনি এই প্রেমের পরিনতি কি হবে সেটা না ভেবে প্রেমটাকে আরো রোমান্টিক কিভাবে করা যায় সেটা ভাবেন । জীবনে যে জিনিসটা একবার আপনার হাসির কারণ হয়েছে সেটা নিয়ে আর আফসোস রাখবেন না । মানে সবসময়ই একটা ভালো লাগার মাঝে বসবাস করা শুরু করেন দেখবেন দিনশেষে অনেক ভালো আছেন । আবেগ অনুভূতি রাগ ক্ষোভ ভালোবাসা ঘৃণা এসব একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমিয়ে রাখেন । নিজের একাকিত্ব কে ভালো লাগায় পরিনত করেন দেখবেন অনেক ভালো আছেন । আইসক্রিম চকলেট খাইতে ইচ্ছা করছে খেয়ে ফেলেন ।
লাইফে কিছুটা ননসেন্স নেচার রাখেন ভালো থাকার জন্য । লাইফ কে যত জটিল ভাবে দেখবেন ততটাই জীবন কঠিন হয়ে যাবে আপনার । এই জীবনে যা হচ্ছে আর যা হবে সবকিছু ডিপেন করে আপনি সেটা কিভাবে গ্রহণ করছেন । হিপোক্রেট ট্রলবাজ সমাজ কি বলবে সেটা কেয়ার করবেন না । নিজে যা করলে ভালো থাকবেন সেটাই করবেন । আর পরিবারের সবার উচিত আপনার ছেলে মেয়েদের মেন্টাল হেলথ কে ঠিক ততটাই দাম দেয়া যেটা তাদের শারিরীক অসুস্থতার সময় দেন । তাদের ভালো লাগা ভালোবাসার দাম দিতে শিখেন । তাদের লাইফে জোরপূর্বক নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের ভালো লাগাকে চাপিয়ে দিয়ে বিষন্নতার দিকে ঠেলে দিবেন না । বিষন্নতা আপনার সন্তানের লাইফ নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট । এত টাকা পয়সা অর্থ সম্পদ দিয়ে কি করবেন যদি এক জীবনে সামান্য মানসিক শান্তিটাই না পেলেন ? মনে রাখবেন মানুষের জন্য টাকা । টাকার জন্য মানুষ না ।।।