আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বাংলাদেশে তৈরি পরিবেশ বান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি সড়কে আসছে আগামীবছরের প্রথমার্ধে। এ গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে প্রায় এক শ’ একর জায়গার ওপর কারখানা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, এখন চলছে গাড়ি উৎপাদনের প্রস্তুতি। দেশে সরকারী ও বেসরকারী খাতে গাড়ি সংযোজনের আরও দুটি কারখানা থাকলেও তৈরির কারখানা এটিই প্রথম।
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উদ্যোক্তারা বলছেন, তারা আগামীবছরের প্রথম দিকেই সড়কে নামাতে চান নিজেদের উৎপাদিত ইলেকট্রিক গাড়ি, যা চলবে উচ্চক্ষমতার ব্যাটারিতে। এ গাড়ির ৭০ শতাংশ উৎপাদিত হবে বাংলাদেশে বাকি ৩০ শতাংশ হবে সংযোজন। প্রাথমিকভাবে বছরে ৩৫ হাজার প্রাইভেটকার, ৫০ হাজার তিন চাকার যান এবং ১ লাখ ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। সেডান কার ছাড়াও কারখানাটিতে তৈরি করা হবে মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান এবং মিনি ট্রাকও।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এই গাড়ি উৎপাদন কারখানার জন্য ব্যয় করা হচ্ছে ১০ কোটি মার্কিন ডলার, যা প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। বরাদ্দ পাওয়া ওই ভূমিতে মোট তিনটি কারখানার একটিতে তৈরি হবে গাড়ি, দ্বিতীয়টিতে যন্ত্রাংশ, এবং তৃতীয়টিতে হবে ব্যাটারি ও চার্জার। এ প্রতিষ্ঠানের অংশীদার চীনের উহান সায়ান টেকনোলজি কোম্পানি। সবমিলে মোট বিনিয়োগ হবে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
যতটুকু জানা গেছে মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এই গাড়ির মূল্য নির্ধারনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ৭ লাখ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে ক্রেতার হাতে সেডান কার তুলে দিতে চান। গাড়ি কেনা সহজ করার জন্য দেড় লাখ টাকা ডাউনপেমেন্ট দিয়ে বাকিটুকুর জন্য কিস্তির সুবিধা থাকবে। এছাড়া উৎপাদিত অন্য গাড়িগুলোর জন্যও কিস্তির সুবিধা রাখা হবে। যেহেতু বিশ্ব এখন পরিবেশবান্ধব গাড়ির দিকে ঝুঁকছে, সেহেতু বিপুল সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তারা।
ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে পরিচালন ব্যয় হবে অনেক কম। পেট্রোলচালিত গাড়ি চালাতে যেখানে প্রতি হাজার কিলোমিটারে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা, সেখানে বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যয় হবে ১ হাজার ২৫০ টাকা, অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে দেড় টাকারও কম। বিদ্যুত চালিত হওয়ায় এ গাড়ির যান্ত্রিক ক্ষমতাও বেশি হবে, আর পরিবেশবান্ধব দিকটি তো থাকছেই। এই গাড়ির ব্যাটারি চার্জ দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছেন উদ্যোক্তারা। এজন্য সড়কের পাশে বিদ্যমান রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোর পাশেই থাকবে ব্যাটারি চার্জিং ইউনিট। এছাড়া মালিক যেন নিজ বাড়িতেও ব্যাটারি চার্জ দিতে পারেন, সে সুবিধাও থাকবে।
বেসরকারি খাতে অটো ইন্ডাস্ট্রিজ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রথম গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারী খাতে দুটি গাড়ি সংযোজন কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে একটি বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বার্ষিক ১ হাজার ৫শ’ গাড়ি সংযোজন ক্ষমতা রয়েছে এই কারখানার। সেখানে সংযোজিত হয় প্রাইভেটকার, জীপ, বাস, ট্রাক, পিকআপ, এ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাক্টর। এছাড়া জাপানের মিতসুবিশি কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রগতিতে সংযোজিত হচ্ছে মিতসুবিশি সেডান কার ও পাজেরো জিপ। মূলত এখানে বিদেশ থেকে আমদানি করা পার্টস সংযোজনের মাধ্যমে গাড়ি তৈরি হয়ে থাকে। তবে কিছু স্পেয়ার পার্টসও তৈরি হয় এ কারখানায়।
এছাড়া অন্যতম শীর্ষ শিল্প গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলিও করেছে গাড়ি সংযোজন কারখানা। চট্টগ্রাম মহানগরীর সাগরিকায় প্রতিষ্ঠিত এ কারখানায় সংযোজিত হয় বিখ্যাত ‘প্রোটন সাগা’ ব্র্যান্ডের গাড়ি। ইতোমধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার রাস্তায় নেমেছে। দেশেই সংযোজন বলে পিএইচপির গাড়ি মিলছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চেয়ে কম দামে। প্রতিষ্ঠানটি গাড়ির পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি এবং দেড়লাখ কিলোমিটারের বিক্রয়ত্তোর সেবা দিচ্ছে। প্রায় ছয় বছর আগে বাংলাদেশের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল পিএইচপির কর্ণধার সুফী মিজানুর রহমান প্রতিষ্ঠিত। সেখানেই মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে সুফী মিজানুর রহমানের আলাপ হয় বাংলাদেশে গাড়ি তৈরির বিষয়ে। এরপর ফলপ্রসূ সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশেই কারখানা প্রতিষ্ঠা করে পিএইচপি ফ্যামিলি।
প্রসঙ্গত, শিল্পায়ন ও বৈশ্বিক অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জালানি তেলের চাহিদা। জলবায়ু মানুষের বাসযোগ্য রাখতে বিশ্বব্যাপী এখন সর্বাধিক জোর দেয়া হচ্ছে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ওপর। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে ব্যাটারি চালিত বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে আসার। এরসঙ্গে সামিল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশও। গাড়ি শিল্পে অনুপ্রবেশ বিলম্বে হলেও শুরুটা হচ্ছে উন্নত ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে।
সংবাদ সূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ