বাংলাদেশে ঐতিহাসিক রায়ঃ দূর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি


আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্কঃ গত ৯ই নভেম্বর মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দুটি ধারায় ৭ বছর ও ৪ বছর করে সর্বমোট ১১ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।

জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিগত চার বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। এই বিচারপর্ব তার অনুপস্থিতিতেই সম্পন্ন করা হলো। এস কে সিনহা বেশ কয়েকটি ইতিহাস গড়েছেন, প্রথমত তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি যিনি একাধারে অমুসলিম ছিলেন এবং ছিলেন একজন আদিবাসী মণিপুরি। দ্বিতীয়তঃ তিনি প্রথম একজন প্রধান বিচারপতি যার দায়িত্বের অবসান ঘটেছিলো পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। তৃতীয়তঃ তিনিই সর্বপ্রথম প্রধান বিচারপতি যিনি দেশত্যাগের পর তার অবর্তমানে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। স্বাধীনতার পর আজ পর্য্যন্ত ২২ জন প্রধান বিচারপতির পদ অলংকৃত করেছেন। কিন্তু এই ২২ জনের মধ্যে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ইতিহাসে তিনি অনন্য হয়ে থাকলেন এবং থাকবেন আরও অনেক বিশেষ কারণে।

Bangladesh: Chief Justice Ousted after Resisting PM's Demands, Memoir Says  — BenarNews

ফারমার্স ব্যাংক, যা বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক নামকরণ করা হয়েছে সেই ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। সেই মামলার রায়ে তাকে ১১ বছরের সাজা প্রদান করা হলো।

রায়ে অর্থ পাচারের দায়ে সিনহাকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে অর্থ আত্মসাতের দায়ে ৪ বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাজা চলবে একসঙ্গে। ফলে সিনহাকে কারাগারে থাকতে হবে ৭ বছর। ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীমকে চার বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়কে তিন বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন ও ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারীকে তিন বছর কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান ও একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

শেখ নাজমুল আলম তার রায়ে বলেছেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

২০১৫ সালের ১৭ই জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এস কে সিনহা। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর থেকে নানা কারণে তিনি সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন। তার প্রধান বিচারপতির মেয়াদ হয়েছিলো সর্বমোট ১০৩০ দিন। বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩১শে জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নজিরবিহীন এক পরিস্থিতির মধ্যে তবে কার্যকাল শেষ হয় মেয়াদ শেষের ৮১ দিন আগেই।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের তোপের মুখে তিনি ছুটি নিয়ে বিদেশ চলে যেতে বাধ্য হন এবং সেই বিদেশ থেকেই ২০১৭ সালের ১১ই নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়ে ইতিহাস গড়েন । বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বিচারপতি সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে একটি বই লিখেন এবং সেই বই ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়।

দেখা যাক কে এই সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

Bangladesh's former chief justice seeks asylum in Canada | The Star


সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে। তার জন্ম ১৯৫১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭৪ সালে সিলেট বারে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে হাই কোর্টে এবং ১৯৯০ সালে আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত হন এস কে সিনহা। হাই কোর্টে বিচারক হিসাবে নিয়োগ পান ১৯৯৯ সালের ২৪শে অক্টোবর। আপিল বিভাগে আসেন ২০০৯ সালের ১৬ই জুলাই।

বাংলাদেশের সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আপিল বিভাগের যে বেঞ্চ বাতিল করেছিল, এস কে সিনহা ছিলেন তার অন্যতম সদস্য। এছাড়া ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়া বেঞ্চেও সদস্য ছিলেন তিনি।

অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সহকর্মীর সঙ্গে বাদানুবাদ, বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ আনা, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধ, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে উত্তেজনা- এরকম বহু ঘটনায় বিচারপতি সিনহা বহুবার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন।

Surendra Kumar Sinha - Home | Facebook

কেন তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিলো?

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী  আনা হলে, সুপ্রিম কোর্ট এই সংশোধনী বাতিল করে। এই রায়ে প্রধান বিচারপতি সিনহার ৪০০ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ ছিল। ৯ই আগস্ট এই রায়ের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি। পরদিন ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির ‘অগ্রহণযোগ্য’ বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ১২ই আগস্ট প্রধান বিচারপতি সিনহার সঙ্গে দেখা দলীয় বক্তব্য জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরদিন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এই রায় নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

Chief Justice Surendra Kumar Sinha will be considered absent if he doesn't  rejoin office tomorrow: Law minister | The Daily Star

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের আদেশের ৪৩ দিন পর ১৬ই আগস্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২২শে  অগাস্ট প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব ছাড়তে বিচারপতি এস কে সিনহাকে সময় বেঁধে দেয় আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। তা না হলে তাকে অপসারণে আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়। ২৪শে আগস্ট শেষ অফিস করেন বিচারপতি সিনহা। ২০১৭ সালের ১০ থেকে ২২শে সেপ্টেম্বর তিনি বিদেশ সফরে ছিলেন।

এর মধ্যেই ১৩ই সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব গ্রহণ করে বিচারপতি সিনহার তীব্র সমালোচনা করা হয়। ৩০শে সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কথা জানান। 

বঙ্গভবণ থেকে ফিরে পরদিন ১লা অক্টোবর আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি- আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মির্জা হোসেইন হায়দার এবং ইমান আলী প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাসায় গিয়ে তাকে ১১টি অভিযোগের কথা জানান। বিচারপতি সিনহা ‘দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলন জনিত অভিযোগগুলোর ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ দিতে পারেননি বলে বিবৃতিতে জানায় সুপ্রিম কোর্ট।

নানা নাটকীয়তার পর অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে পরদিন ছুটির আবেদন করেন বিচারপতি সিনহা। 


টান টান উত্তেজনার মুখে ১৩ই অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় বড় মেয়ের কাছে চলে যান প্রধান বিচারপতি সিনহা। তার আগে সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি বিব্রত, শঙ্কিত। পরদিন ১৪ই অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ করে বিরল বিবৃতি দেয় আদালত। পরে ১১ই নভেম্বর সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। 

পদত্যাগ করার পর বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সে সময় বলেন, একজন বিচারপতির মাধ্যমে দেশে জুডিশিয়াল ক্যু করার চেষ্টা হয়েছিল।  আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, বিচারকদের নিয়ন্ত্রণে সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, শৃঙ্খলা বিধির নামে তা কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন বিচারপতি সিনহা।

বিচারপতি সিনহার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে আসেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞা। তার সময়ে বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট নিয়ে সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের টানাপড়েনের অবসান ঘটে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেওয়া অবৈধ ঘোষণার যে রায় নিয়ে সঙ্কট জটিল মাত্রা পেয়েছিল, সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্যও সরকার আবেদন করে। অবশ্য সরকার সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দিলে আপিল বিভাগের তখনকার জ্যেষ্ঠতম বিচারক ওয়াহহাব মিঞাও চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে বিদায় নেন।

বই প্রকাশ করেন এস কে সিনহা 

Book by ex-Bangladesh Chief Justice stirs controversy - Asia Times

দেশে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এস কে সিনহা। নিউ জার্সিতে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে কেনা একটি বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে তার আবেদন করার খবর আসে। সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয় তার বেই ‘আ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’।

আত্মজীবনীমূলক বইটিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি দাবি করেন, তিনি দেশ ছেড়েছেন ‘হুমকির মুখে’; একই কারণে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ৬১০ পৃষ্ঠা বইটির ভূমিকায় বিচারপতি সিনহা লিখেছেন, ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনে যুক্ত থাকার সুবাদে এর রূপান্তর এবং বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

সিলেটের নিম্ন আদালতের একজন আইনজীবী হিসেবে শুরু করে বাংলাদেশের বিচারালয়ের শীর্ষ অবস্থানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য হয়েছে তার। শৈশব থেকে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিয়েও লিখেছেন সিনহা।

দেশ ছাড়ার কারণ হিসেবে তিনি লিখেছেন, দেশে তার বাসভবনে আটক থাকতে হচ্ছিল। আইনজীবী ও বিচারপতিদেরকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিল না। সংবাদমাধ্যমকে বলা হচ্ছিল- তিনি অসুস্থ, ছুটির আবেদন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেও ২০১৯ সালের জুলাই মাসে, কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আবেদনে তিনি বাংলাদেশে ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বাংলাদেশেদ্র সরকারের সাথে টানাপড়েনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন বলে জানা যায়।

চলুন আমরা ছোট্ট করে শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের ইতিহাস দেখি;

Judicial System in United Kingdom

১৩ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটেনের বিচারবিভাগে ঘুষ এবং অর্থ প্রদান সাধারণ ছিল, কিন্তু তবুও এই সময়ে বিচার বিভাগ প্রকাশ্যে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল। ১৩৪৬ সালে, বিচারকদের শপথ করতে হত যে “তারা কোনভাবেই মোকদ্দমায় কোন পক্ষের কাছ থেকে উপহার বা পুরষ্কার গ্রহণ করবে না বা রাজার পক্ষে এমন কোন কাজে, বড় বা ছোট যে কোন ব্যক্তিকে পরামর্শ দেবে না”। ১৩৫০ সালে রাজার বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি উইলিয়াম ডি থর্পকে ঘুষের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল (পরে তাকে ক্ষমা করা হয়েছিল, কিন্তু তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল)। ১৪ শতকে বিচার বিভাগের সদস্যরা রাজনীতিতে জড়িত ছিল – উদাহরণস্বরূপ, দশ বছর ধরে, তৃতীয় এডওয়ার্ডের চ্যান্সেলররা সাধারণ আইন বিচারক ছিলেন।

১৩৮৭ সালে, ছয়জন বিচারক রাজা দ্বিতীয় রিচার্ডকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তার নিজের ক্ষমতা সীমিত করার জন্য গঠিত একটি সংসদীয় কমিশন ছিল ‘অবৈধ এবং বিশ্বাসঘাতক’। এসকল বিচারকদের সকলকে অভিশংসিত, দোষী সাব্যস্ত এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল, যদিও প্রকৃতপক্ষে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল; বাকিদের আয়ারল্যান্ডে নির্বাসিত করা হয়েছিল।

এই ছোট্ট ইতিহাসের সাথে সামঞ্জস্য করলে আমরা কি এই প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারিনা যে, যুক্তরাজ্যের ৭০০ বছর আগের রাজত্বে কি ২০১৭-২০২১ সালে আমরা বাস করছি? 

SHARE THIS ARTICLE