আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃপ্রাথমিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রচলিত টিকাগুলো এখন পর্যন্ত ভালো সুরক্ষা দিচ্ছে। যদিও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, ওমিক্রন আরও সংক্রামক হওয়ায় এটি টিকার সুরক্ষাও ভেদ করতে পারে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত টিকা নেওয়া লোকেদের মধ্যে গুরুতর কোনো রোগ সৃষ্টি হতে দেখা যায়নি।ছবি: পিটার বোয়ার/ব্লুমবার্গ
বিশ্বের অনেক জায়গায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি ও নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রণের প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায়, হঠাৎ করেই ভ্রমণ এখন বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। এমনকি কয়েক মাস আগেও পরিস্থিতি এরকম ছিলনা।
তবে এর মধ্যেও ভালো খবর হল, প্রাথমিক গবেষণা ও তথ্য অনুযায়ী, প্রচলিত টিকাগুলো এখন পর্যন্ত ভালো সুরক্ষা দিচ্ছে। যদিও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, ওমিক্রন আরও সংক্রামক হওয়ায় এটি টিকার সুরক্ষাও ভেদ করতে পারে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত টিকা নেওয়া লোকেদের মধ্যে গুরুতর কোনো রোগ সৃষ্টি হতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে, আবার বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন যে, অত্যন্ত পরিবর্তিত এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে খুব সামান্যই জানা গেছে। পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় ওমিক্রনের প্রকৃত ঝুঁকি মূল্যায়নও হয়ে দাঁড়িয়ে বেশ কঠিন। এ কারণে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে ভ্রমণের ক্ষেত্রে। অনেক দেশ সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে বেঁধে দিয়েছে নতুন ভ্রমণ বিধিনিষেধ।
বড়দিনকে সামনে রেখে এসব নিষেধাজ্ঞার অর্থ বুঝতে পারছেন না অনেকেই। আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিন। প্রায় সব মানুষই এই উৎসবের দিনটি কাটাতে চান তাদের পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে। কিন্তু এবারের ভ্রমণ বিধিনিষেধের ফলে কী ঘটতে চলেছে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন অনেকেই। তাই এ ব্যাপারে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে ব্লুমবার্গ। চলতি মৌসুমে তারা ছুটির দিনগুলো নিয়ে কী ভাবছেন এবং অবসর কীভাবে কাটানোর পরিকল্পনা করছেন, তা জানার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই ম্যাগাজিন।
জেসিকা জাস্টম্যান; মহামারি বিশেষজ্ঞ, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার
ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণ এখন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
ওমিক্রনের বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত এগিয়ে চলেছে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকা সহ অনেক জায়গা থেকে পাওয়া তথ্য বেশ উদ্বেগজনক।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ভ্রমণের সময় ভালো মানের মাস্ক পরা, এমনকি ডাবল-মাস্ক পরা উচিত; সেইসঙ্গে বিমানে চড়ার সময় অন্যদের থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখলে নিরাপদে ভ্রমণ করা সম্ভব। আপনি যদি মুদি কেনাকাটা করতে সুপারমার্কেটে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারেন, তাহলে সেখানে বিমানবন্দরে যাওয়ার ঝুঁকিটি ভিন্ন হওয়ার কথা নয়। যদি আপনি টিকা না নিয়ে থাকেন এবং মাস্ক না পরেই সুপারমার্কেটে যান, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটি আপনার এবং আপনার চারপাশের মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যদি আপনি যথাযথভাবে টিকা নিয়ে থাকেন, এমনকি বুস্টার ডোজ নিয়ে থাকেন ও বেশিরভাগ সময় মাস্ক পরেন, তাহলে আপনার এ পরিস্থিতিতেও সুস্থ থাকা উচিত।
হোটেলগুলোতে আমরা ভিড়ের মধ্যে ইনডোর ডাইনিং এড়াতে পারি; কারণ এ সময় আপনাকে মাস্ক খুলে ফেলতে হবে। যদিও এক্ষেত্রে জনাকীর্ণ লিফট আপনাকে দ্বিধায় ফেলতে পারে, তবে সাধারণত লিফটের যাত্রাটি সংক্ষিপ্ত এবং বেশিরভাগ মানুষই এ সময় মাস্ক পরে থাকে। ট্যাক্সিতেও মাস্ক ব্যবহার করুন, এটি আপনাকে সুরক্ষা দেবে। পারিবারের সবাই একসঙ্গে হওয়ার আগেই দ্রুত কোভিড করে নিন; এতে আপনার পরিবারের মানুষ সুরক্ষিত থাকবে।
করোনার বর্তমান ধাক্কা কি আপনাকে নিজের ছুটি নিয়ে পরিকল্পনাগুলো পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে?
হ্যাঁ, আমি পুনর্বিবেচনা করছি। আমি এই সপ্তাহান্তেই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছি। প্রত্যেকেরই ঝুঁকির মূল্যায়ন করার সময় পরিবারের বয়স্ক সদস্য, যারা ইতোমধ্যে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন ও চিকিৎসারত অবস্থায় আছেন তাদের সম্পর্কে ভাবা উচিত।
উইলিয়াম শ্যাফনার; মহামারি বিশেষজ্ঞ, ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি
এ বছরের ছুটিতে কীভাবে মানুষের ভ্রমণ করা উচিত?
সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মৌলিক নিয়মগুলো মধ্যে যেমন- টিকা নেওয়া এবং সম্ভব হলে বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরেই ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি উৎসবে অংশগ্রহণ করবেন এমন কেউ টিকা না নিয়ে থাকেন, তাহলে তাকে অবশ্যই উদযাপনে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
আপনি যদি কোনো ধরনের উপাসনা কিংবা পার্টিতে যোগতে দিতে চান বা আয়োজন করতে চান, তাহলে অবশ্যই মাস্ক পারুন এবং অন্যদেরকেও মাস্ক পরতে বলুন; পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। এ সময় সিনেমা দেখতে যাওয়ার চেয়ে বাসায় বসেই তা উপভোগ করা ভালো। করোনা পরীক্ষার আগে পারিবারিক সমাবেশ এড়িয়ে চলুন। পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক হলেই বরং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিবারের সবাই এক হয়ে বড়দিন উদযাপন করুন।
এবারের ছুটিতে আপনি কী করছেন?
আমার ছেলে বড়দিন উপলক্ষ্যে গত রাতে জার্মানি থেকে এসেছে। কিন্তু আমরা এখনও তাকে দেখিনি; কারণ আমাদের বাড়িতে একজন অসুস্থ মানুষ আছেন। তাই পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত আমার ছেলে অন্য আত্মীয়ের সঙ্গেই থাকবে।
মনিকা গান্ধী; সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ফ্রান্সিসকো
যারা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করার কথা ভাবছেন তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
আমি মনে করি, গত বছরের তুলনায় এখন আমরা ভিন্ন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। রোগটির আরেকটি নতুন ধরন এসেছে এবং আমি জানি মানুষ আতঙ্কিত। কিন্তু আপনি যদি যথাযথভাবে টিকা নেন, তাহলে টিকার ওপর আপনি আস্থা রাখতে পারেন। টিকার বুস্টার ডোজ আপনার ভ্রমণকে অনেকটাই নিরাপদ করে তুলবে। এছাড়া, প্লেনসহ অন্যান্য জনাকীর্ণ জায়গায় মাস্ক পরুন এবং ছুটি উপভোগ করুন।
এটি নিশ্চিত যে, ওমিক্রন আরও সংক্রামক। তবে, এর লক্ষণগুলো অতটা তীব্র নয়। এক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়ার কম থাকলেও, বি-সেল ও টি-সেল ইমিউনিটি ঠিকভাবেই কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে আমি মনে করি না, কাউকে তাঁর ছুটির দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে না।
আপনি কি ছুটির দিনে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন?
আমি আমার দুই ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছি। আমার বাবা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড; তাঁর লিম্ফোমা চিকিত্সা চলছে। কিন্তু আমরা সবাই টিকা নিয়েছি। তাই আশা করছি, আমরা সবাই একসঙ্গেই থাকব।
যদি আমাদের মধ্যে কেউ সুস্থ না হয় বা কেউ যদি টিকা না নিয়ে থাকে, তাহলে আমরা একসঙ্গে হওয়ার আগে অবশ্যই দ্রুত পরীক্ষা করে নেবো।
ইমানুয়েল গোল্ডম্যান; মাইক্রোবায়োলজিস্ট, রাটগার্স ইউনিভার্সিটি
ছুটির দিনের ভ্রমণ পুনর্বিবেচনা করা মানুষদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
আমার মতে, এই মুহুর্তে কারও পরিকল্পনা পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। তবে আমাদের অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আপনি যদি টিকার বুস্টার ডোজ নিয়ে থাকেন, তাহলে এটি এখনও ভালো সুরক্ষা দেবে। তাই এই মুহুর্তে আমি ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তনের কথা বলবো না; তবে আমি সব জায়গায় মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলবো। আপনি টিকা নিয়ে থাকলে প্লেন, ট্রেন কিংবা ট্যাক্সিতে ভ্রমণের ব্যপারে আমি তেমন সমস্যা দেখছি যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি মাস্ক ব্যবহার করছেন। তবে, সবক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ অনেক কিছুই এখনও পর্যন্ত আমাদের অজানা।
- মূল লেখা: ক্রিস্টেন ভি ব্রাউন
- ভাষান্তর: জান্নাতুল তাজরী তৃষা
- সূত্র: ব্লুমবার্গ