আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না
আমি জর্জ ফ্লয়েড
আফ্রো-আমেরিকান। কালো মানুষ।
মিনোসোটার এক পিচঢালা রাজপথে
দানবের লোমশ পায়ের নিচে আমার ঘাড় ও গলা।
আমি কথা বলতে পারছি না, আমি আর নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। আমি তলিয়ে যাচ্ছি অতলান্তে।
ঘুমঘোর বা দুঃস্বপ্ন নয়
দিকে দিকে সভ্যতার উচ্চকিত সময়।
নদী ও সমুদ্রের কল্লোলে, পাখির কলরবে, নতুন ভোরে জেগে উঠব না।
দিনমান খেটে ক্লান্ত হয়ে কোনোদিন ফিরব না আর ঘরে
আমার স্বরে — দানবের বুট ও বন্দুক।
আমি আর নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।
দিকে দিকে ফের রব ওঠে — কালো মানুষ, কালো মানুষ — ওরা কোথাকার?
আফ্রিকার, আফ্রিকার, আফ্রিকার।
বাদামী মানুষ, বাদামী মানুষ — এরা কোথাকার?
দিকে দিকে রব ওঠে — এশিয়ার, এশিয়ার, এশিয়ার।
শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হচ্ছে
প্রকাশ্যে, সহাস্যে, দানবীয় সব উল্লাসে।
লিঙ্কন, লুথার কিং দেখে যাও —
ক্যালিফোর্নিয়ার ঢালু পথে
আজও মানুষ খুন হচ্ছে বর্ণবিরোধে জর্জিয়ার পাথুরে পর্বতে।
নিউ ইয়র্ক আর পেনসিলভেনিয়ার পাহাড়ে
মানুষের সব স্বপ্নগুলো কেঁদে মরে।
টেনিসি আর মিসিসিপির টিলায়
লুকিয়ে আছে কালো মানুষের কত লাশ
দেখে কাঁদে বয়েসী প্রাচীন দুর্বাঘাস।
জর্জিয়ার ওই লাল পাহাড়ে, ক্রীতদাসের সন্তানেরা আজও কেন কান্না করে, ধুকে মরে, মানুষরূপী দানবের পায়ের নিচে।
লিঙ্কন, লুথার কিং দেখে যাও, মানুষের গলা চেপে আছে দানবের ওই পাও — ইরাক, লিবিয়া, আফগানে — ফ্লয়েডের মত এই পৃথিবীর সবখানে।
আমেরিকা, আমেরিকা, আমেরিকা — গণতন্ত্র, মানবাধিকার শোনায় বড়ো পরিহাস
ইরাক, লিবিয়া, আফগানে — পাহাড়ে পাহাড়ে
গুণে দেখো মানুষের কত লাশ।
আমি জর্জ ফ্লয়েড
আমার রক্তের রঙ শ্বেতাঙ্গদের মতই লাল।
মাতৃস্তনে দুধের বর্ণ ও গন্ধ অভিন্ন। কান্নার রঙ তাই।
তবু নেই রেহাই। আমি এই পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।
ফিরে আসে দিন ফিরে আসে রাত, তোমাদের শ্রেষ্ঠত্বে অভিসম্পাত।
আমার গায়ের রঙ কালো।
এই বলে হাত পায়ে একদিন শিকল পরাল।
ইতিহাসে বারেবারে কালো মানুষ ডাক দিল,
দাসত্বের শিকলগুলো খুলে ফেলো, খুলে ফেলো, খুলে ফেলো। নই দানব, নই দস্যু; পায়ের নিচে আজ মুমূর্ষু।
লেখক – আলমগীর শাহরিয়ার