আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে দেশটির পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দখল নিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। এর আগে ইউরোপের বৃহত্তম এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুই দেশের সেনাদের সংঘর্ষে ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়ায় অবস্থিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন ধরে যায়। স্থানীয় দমকল বাহিনীর তত্পরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পরবর্তী সময়ে এটি দখলে নিয়ে নেয় রাশিয়ার সৈন্যরা। স্থানীয় সময় গতকাল ইউক্রেনের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়ার দখলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এর আগে শুক্রবার ভোরের দিকে জাপোরিঝঝিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা হয়। রাশিয়া এ হামলা চালায় বলে জানান ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা। ইউক্রেনের অভিযোগের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, শুক্রবার প্রথম প্রহরে রুশ সামরিক বাহিনী বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে হামলা চালায়। এ সময় তারা কাছেই থাকা একটি প্রশিক্ষণ স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় দুই ঘণ্টা একটানা জ্বলতে থাকার পর দমকল বাহিনীর তত্পরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
ছয়টি পারমাণবিক চুল্লিসম্পন্ন ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিঝঝিয়া। ইউক্রেনের মোট চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কেন্দ্রটি।
চেরনোবিলের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই নতুন করে এ ধরনের বিপর্যয় যেন না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক করে আন্তর্জাতিক মহল। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে জাপোরিঝঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রুশ হামলার মুখোমুখি হয়। হামলার পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে দ্রুত উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। চেরনোবিলের মতো আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে বলেও অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। যদিও এর আগে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন জ্বালানি সচিব জেনিফার গ্রানহোম জানান, জাপোরিঝঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি শক্তিশালী প্রতিরোধী স্থাপনা দ্বারা সুরক্ষিত ও পারমাণবিক চুল্লিগুলো নিরাপদে বন্ধ করা হচ্ছে।
এদিকে এ হামলার ঘটনাকে পারমাণবিক সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনোস্কি।
পশ্চিমা নেতারা বলছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার মধ্য দিয়ে পুরো মহাদেশই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মুখে ঠেলে দিচ্ছে রাশিয়া। যদিও এ হামলার পর জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানান, রুশ হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির রেডিয়েশন লেভেল ও সেফটি রিঅ্যাক্টরের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যে কারণে শুরুতে এটা যতটা ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেই পরিস্থিতি এড়ানো গেছে।
তবে রুশ সৈন্যদের দখলে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ঘিরে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় এটি ইউরোপের জন্য বড় হুমকি ডেকে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন বিশ্বনেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আশপাশে যেকোনো ধরনের সামরিক তত্পরতা বন্ধের জন্য মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলাকে ভয়াবহ উল্লেখ করে এটির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ঘটনাকে বেপরোয়া উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হামলার শিকার হওয়ার পরপরই এ তিন নেতা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। আর ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাশিয়ার এ হামলাকে যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে উল্লেখ করেছেন।
যদিও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে রুশ বাহিনী হামলা করেছে—এমন অভিযোগ মানতে নারাজ রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী। উল্টো তার অভিযোগ, ইউক্রেনের সেনারাই অন্তর্ঘাতমূলক এ হামলা করেছে। কোনো ধরনের সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া এমন অভিযোগকে উসকানি হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।
ইউক্রেনের দক্ষিণে দনিপার নদীর তীরে অবস্থিত এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়ার দখলে যাওয়ায় এটি যেকোনো মুহূর্তে চেরনোবিলের মতো বিপর্যয় ঘটিয়ে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা। এজন্য তিনি রাশিয়ার এমন আগ্রাসী মনোভাব বন্ধে চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।