আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শেনজেন জোনে প্রবেশ করেছে ক্রোয়েশিয়া। ইউরোপে অবাধ চলাচল অঞ্চলে ক্রোয়েশিয়ার এই প্রবেশ বলকান রুটে ব্যাপক পরিবর্তন করতে পারে। পাশাপাশি বসনিয়ায় অপেক্ষমান থাকা অভিবাসীদের জন্য পরিস্থিতি আরো কঠিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত গ্রীষ্মের পর থেকে বলকান রুটে বেড়েছে অনিয়মিত অভিবাসনের হার। ২০২২ সালের প্রথম দশ মাসে ৩০ হাজার অনিয়মিত অভিবাসীর প্রবেশ নথিভুক্ত করেছে জাগরেব কর্তৃপক্ষ। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫০ শতাংশ বেশি।
এমন একটি সময়ে ক্রোয়েশিয়া এই জোনে প্রবেশ করল যখন বলকান রুটে অনিয়মিত অভিবাসীদের দীর্ঘ সারি অপেক্ষমান এবং সীমান্তে অভিবাসীদের উপর পুশব্যাক, নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক ক্যামিল লোক কোজের মতে, ‘ক্রোয়েশিয়ার শেনজেনে প্রবেশের ফলে এমন কিছু কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে যেগুলো আগে থেকেই সংগঠিত হতো। ইইউতে অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমন সীমিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ক্রোয়েশিয়া তার বিশ্বস্ত সেবার জন্য পুরস্কৃত হয়েছে।’
২০১৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে একীভূত হওয়ার পর থেকে বসনিয়ার সঙ্গে থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাহ্যিক সীমানা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে ক্রোয়েশিয়া।
বর্তমান পরিসংখ্যানের সঙ্গে ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের কোন সম্পর্ক না থাকলেও বলকানে রুটে কমেনি অভিবাসীদের সংখ্যা। হাজার হাজার আশ্রয়প্রার্থী এখনও প্রতি বছর সার্বিয়া বা বসনিয়া হয়ে বলকান রুট উত্তরণের চেষ্টা করে।
২০১৮ সাল থেকে উত্তর বসনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সীমান্ত এসব অভিবাসীদের জন্য আতঙ্কের। ব্রাসেলসকে নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করার ক্ষমতা দেখানোর জন্য ক্রোয়েশিয়া এই এলাকায় অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক সীমান্ত রক্ষী মোতায়েন করেছে। সেই সঙ্গে সীমান্তে বেড়েছে পুশব্যাক, গুরুতর সহিংসতা, নির্যাতনের ঘটনা। বছরের পর বছর ধরে, বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নির্যাতনের বিষয়ে এনজিগুলোর প্রতিবেদন ও অভিযোগও বহুগুণ বেড়েছে।
মানবাধিকারের প্রতি সম্মান কি বাড়বে?
তবে নতুন পরিস্থিতি এই অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে বলে মনে করে গবেষক ক্যামিল লো কোজ ব্যাখ্যা করেন, ‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া শেঙেনে প্রবেশের সঙ্গে যুক্ত বাধ্যবাধকতাগুলোর মধ্যে একটি। ক্রোয়েশিয়ার শেঙেনে প্রবেশের ফলে সেখানকার পুলিশ এবং সীমান্তরক্ষীদের উপর মানবাধিকার নিয়ে চাপ সৃষ্টি করবে।’
এক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলি আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
পাশাপাশি এটির ফলে ক্রোয়েশিয়ার আশ্রয় ব্যবস্থার উন্নতি এবং অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় নিজেদের দেশে প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে দেশটির সীমান্তরক্ষীরা আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য প্রবেশকারী আশ্রয়প্রার্থীদের বেআইনি পুশব্যাকের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেয়া বন্ধ করবে কীনা সেটি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের জন্য প্রার্থীতার মর্যাদা পেয়েছে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিবেশী দেশ বসনিয়া। এই দেশটিও নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে অভিবাসন নিয়ে কঠোর হতে পারে।
‘ক্রোয়েশিয়ার বেআইনি পুশব্যাকের অনুশীলন’
২০২২ সালের ২২ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং বসনিয়ার নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পাঁচ লাখ ইউরো সমমানের একটি সমঝোতা স্মারকের অর্থায়নের ঘোষণা দেন ইউরোপীয় কমিশনার অলিভার ভারেলিই।
এই অর্থ এই অভিবাসীদের নিজের দেশে ‘স্বেচ্ছায়’ এবং ‘জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তনের’ মাধ্যমে ফিরিয়ে দিতে ব্যবহার করা হবে বলে নিশ্চিত করেন অলিভার ভারেলিই।
এই ইইউ কমিশনার আরও ইঙ্গিত দেন,”উত্তর বসনিয়ায় অবস্থিত লিপা ক্যাম্প একটি আটক কেন্দ্রে পরিণত হবে। ভুয়া আশ্রয়প্রার্থীরা তাদের দেশে ফেরত না যাওয়া না আসা পর্যন্ত এই আটককেন্দ্রে বন্দি রাখা হবে।”
বসনিয়া ও সার্বিয়ায় অভিবাসীদের সহায়তায় কাজ করে এনজিও নো নেম কিচেন। এনজিওটির প্রচার বিভাগের দায়িত্বে থাকা বারবারা বেকারেস বলেন, “ব্রাসেলস ক্রোয়েশিয়ার পুলিশকে বেআইনি পুশব্যকের মতো অনুশীলন থেকে এড়াতে অভিবাসীদের বসনিয়ায় আটক রাখার পরিকল্পনা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “বসনিয়া এবং সার্বিয়া উভয় দেশেই পুশব্যাক খুবই সাধারণ ব্যাপার। পুলিশ নিয়মিত খুব ভোরে শিবিরের বাইরে ঘুমন্ত লোকদের তুলে নিয়ে সীমান্ত থেকে বহুদূরে নিয়ে যায়। বসনিয়ায় সাধারণত অভিবাসীদের লিপা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সার্বিয়ার ক্ষেত্রে অভিবাসীদের দেশটির দক্ষিণে নেওয়া হয়।”
বলকান রুট দিয়ে অভিবাসীদের আগমন বন্ধ করতে ব্রাসেলস সার্বিয়ার সাহায্যের উপরও নির্ভর করছে। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্যও প্রার্থী। এক্ষেত্রে সার্বিয়া একীকরণের জন্য নিঃসন্দেহে বসনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার মতো ক্ষমতা দেখানোর উপর নির্ভর করবে ব্রাসেলসের অনুমতি।
বেলগ্রেড ইতিমধ্যেই ব্রাসেলসের অনুরোধে টিউনিশিয়া ও বুরুন্ডির নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা বাতিল করেছে। এছাড়া গিনি বিসাউ ও ভারতীয়দের জন্যও ভিসা নিয়ে প্রবেশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।