এডভোকেট শাহাজাহান সাজুঃ ফেনী জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার প্রায় চারগুণ বেশি বন্দী কারাগারে আটক রয়েছে। করোনার কারনে সরকার ২৬ শে মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে কোট বন্দ থাকায় কারাগারে আসামিদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত মে মাসের ১৩ তারিখ থেকে সরকার ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার আদেশ দিলে অনেক বন্দী ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যেমে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জেলা জজ কোট, এবং হাইকোর্ট কোট, থেকে জামিন পায়, এসব কোটের ওর্ডার অনলাইনে ( মেইলে)( জামিনে মুক্তির) আদেশ কারাগারে পাঠানো হয়। উক্ত আদালতগুলো যে সকল আসামীকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। তাদের রিলিজ অর্ডার অনলাইনে (ইমেইলের মাধ্যমে)সরাসরি কারাগারে পাঠানো হলেও কারাগারের অফিসে কর্মরত ব্যাক্তিগন উৎকোচ ছাড়া বন্দীদের মুক্তি দিতে রাজী নয়। আগে এসব ওর্ডার আদালতের পিয়ন নিয়ে যেত এবং সাথে আসামীর স্বজন ও যেত তখন তারা ওডার এখন ও আসে নাই এ কথা বলার সুযোগ পেত না। এখন তারা বন্দীদের স্বজনদেরকে বলেন অর্ডার এখন পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি অথবা ওর্ডারে ভুল আছে। আমাদেরকে খরচ দিলে আমরা আদালতের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে অর্ডার এনে আসামিকে মুক্তি দিতে পারব তা না হলে আরো দুই থেকে তিন দিনেও বন্দীর মুক্তির আদেশ আসবেনা। আসামি গনের স্বজনরা এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিরূপায় হয়ে অনেকে কারাগারের অফিসে কর্মরত স্টাফদের সাথে যোগাযোগ করে উৎকোচ দিয়ে পরে বন্দীদের মুক্ত করতে বাধ্য হন। যারা দিতে পারেন না তাদেরকে জামিন আদেশ যাওয়ার পরেও দুই থেকে তিন দিন বেশি জেল খাটতে হয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বন্দীদের কারাগারের ভিতরে সরকারি ভাবে বরাদ্দ করা খাবার সঠিকভাবে দেয়া হয় না। চলে নানা রকম বাণিজ্য।
কারাগারে আসামিদের কে ম্যাট এবং জমাদ্দার কে টাকা দিয়ে সিট কিনে ঘুমাতে হয়। যাদের সিট কিনার সামর্থ নেই তাদেরকে থাকতে হয় জি, আর ফাইলে। জি, আর, ফাইল মানে হচ্ছে এক বন্দী আরেক বন্দীর কাধে পা রেখে দুই দিক থেকে দুইজনের পা দুই কাধে রেখে কোমর পর্যন্ত ফ্লোরে গুজে কোনমতে অর্ধেক শরীর ফ্লোরে রেখে ঘুমানোর নাম জি, আর ফাইল। এছাড়াও বিশেষ দিনে অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ ১৬ ই ডিসেম্বর ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, সহ এসব বিশেষ দিনে আসামির জন্য স্পেশাল মিলের ব্যবস্থা করা হয় সরকার থেকে।
স্পেশাল ডে তে যেই মাছ-মাংস থাকার কথা তার কিছুই পাননা বন্দিরা। যেসব ঠিকাদার এসব খাবার সরবরাহ করেন তাদের সাথে কারা কর্তৃপক্ষ কমিশন নেয়ার কারণে বন্দীরা সঠিক খাবার পাননা। যে সব খাবার পান তা নিম্ন মানের এবং খাওয়া যায় না, বাধ্য হয়ে পি,সি বাজার থেকে খাবার কিনে খান বন্দীরা। এছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী আটক বন্দীদের থেকে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতেও হয়রানির অন্ত নেই। টাকা বেশি দিলে সাথে সাথে ওকালতনামায় বন্দীর দস্তখত পাওয়া যায়। টাকা না দিলে তিন চার দিনেও বন্দীর সাক্ষর পাওয়া যায় না। একজন আসামির ওকালতনামা দস্তখত নিতে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে হয়। মোটকথা ফেনী জেলা কারাগারে বেআইনি কার্যক্রম এবং অনিয়মের কোনো শেষ নেই। কোন কোন কারারক্ষী মাদক ব্যবসার সাথে ও জড়িত। মাদকাসক্ত বন্দীদের কাছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কারারক্ষীরা সরবরাহ করেন চাহিদা মোতাবেক মাদক। ইতিমধ্যেই ইয়াবাসহ ফেনী কারাগারের একজন কারারক্ষী গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ইহা ছাড়াও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের কে কেস কার্ড দেয়ার সময় কারাগারের অফিস কক্ষে ডেকে এনে কর্মরত কারারক্ষীরা আসামীদের কে বলে আমাদের কাছে আইনজীবী আছে আমরা তোমাদের জন্য জামিনের ব্যবস্থা করব এভাবে কথা বলে বিভিন্ন মামলা কারারক্ষীরা আসামিদের সাথে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চুক্তি করেন, এবং নির্ধারিত আইনজীবীদের কাছে কারারক্ষীরা এই মামলাগুলো বিক্রয় করে নগদ টাকা, হাতিয়ে নেন। ফেনী কারাগারের বিভিন্ন স্তরে হয়রানির শিকার আসামিরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে চট্রগ্রাম কারাগারের এক জেলার,ও সুপারের টাকার বস্তা দেশবাসী দেখেছেন, এসব টাকার উৎস হচ্ছে কারাগারের অবৈধ ব্যবসা। কারা কর্তৃপক্ষের নিকট আসামিগন একাধিক বার আবেদন করলেও হয়রানি কমেনি বরং বেড়েছে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।