ফেনীতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে তিন বন্ধুর কৃষি খামার

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ ফেনীতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে তিন বন্ধুর কৃষি খামার। ফেনীর মানুষকে রাসায়নিকমুক্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার সরবরাহ করতে এ খামার গড়ে তুলেছেন তারা। পাঁচ একর জমিতে গড়ে ওঠা জান্নাত এগ্রো খামারটিতে ফলমূলসহ নানা রকমের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। খামারটি একদিকে স্থানীয়দের নিরাপদ সবজি সরবরাহ করছে অন্যদিকে উদ্যোক্তা যুবকদের স্বাবলম্বী করে তুলছে।

ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের আমিন বাজারসংলগ্ন স্থানে চালু হওয়ার বছরখানেকের মধ্যেই খামারটি স্থানীয়দের মাঝে সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় তিন যুবক—ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, তোফায়েল আহাম্মদ রনি ও জাহিদুল ইসলাম এ খামারের উদ্যোক্তা।

জানা যায়, ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা, চাকরির বাজারে অসম প্রতিযোগিতায় মনোবলহারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত শিক্ষিত তিন যুবক এক হয়ে গড়ে তোলেন এ কৃষি খামার। পাঁচ একর জায়গায় গড়ে ওঠা এ খামারে লাগানো হয়েছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দেশীয় ও বিদেশী জাতের ফলমূল। রয়েছে শাক-সবজিও। এরই মধ্যে স্বল্পমেয়াতি কুল ও শাক-সবজি উঠতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই টাটকা, রাসায়নিকমুক্ত শাক-সবজি ও কুল ক্রয় করতে আশপাশের মানুষ আসছেন খামারে। এরই মধ্যে এ খামারের কুলের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকায়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এ খামারে এসে পরিবার ও স্বজনের জন্য কুল ক্রয় করছেন।

ধর্মপুর, ফেনীসদরে কৃষি উদ্যোক্তা স্বপ্নচারীদের সফলতার কাহিনী। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সোনালী

উদ্যোক্তা খামারিরা জানান, ফেনী ও আশপাশের এলাকায় রাসায়নিকমুক্ত টাটকা ফলমূল ও সবজি সরবরাহ করতে জান্নাত এগ্রো বিডি নামের এ খামার গড়ে তুলেছেন তারা। এ খামারে আম, মাল্টা, কমলা, এবোকাডো, আলু বোখারা, আঙুর, আনার ও ড্রাগনসহ দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ফলের গাছ লাগনো হয়েছে। এসব গাছে ফল আসতে কিছুটা দেরি হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে খামারে কুল, পেয়ারা ও বিভিন্ন প্রকারের সবজি লাগানো হয়েছে। বর্তমানে এ বাগানে লাগানো কুলের সুনাম আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই এখানে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এসে নিজ হাতে কুল সংগ্রহ করে পরিবার ও স্বজনের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। বাজারে পাওয়া কুলের তুলনায় এ খামার থেকে সংগৃহীত কুলের দাম একটু বেশি। তবে নিজ হাতে খামার ঘুরে বাছাই করে সংগ্রহ করার সুযোগ থাকায় দাম যাই হোক; কুল কিনে খুশি ক্রেতারা।

২০ কিলোমিটার দূর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে এ খামার থেকে কুল সংগ্রহ করতে এসেছেন মাহমুদুল হাসান। তিনি জানান, বেশ কিছুদিন আগে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে তিনি এ খামারের কুল খেয়ে স্বাদ পেয়েছেন। তাই আরো দুই বন্ধুকে নিয়ে খামার ঘুরে পরিবারের জন্য বাছাই করা কুল সংগ্রহ করতে পেরে খুশি তিনি। এখানে প্রতিকেজি কুল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।

স্থানীয় বৃদ্ধ মাদু মিয়া এ খামারে এসেছেন সবজি নিতে। তিনি জানান, এখানকার সবজির দাম বাজারের তুলনায় একটু বেশি। তবে রাসায়নিকমুক্ত টাটকা সবজির স্বাদ অনেক বেশি হয়। তাই দাম বেশি হলেও বেশ কিছুদিন যাবত এ খামার থেকেই তিনি সবজি ক্রয় করেন।

খামারি তোফায়েল আহাম্মদ রনি জানান, তাদের খামারে তুরস্ক, মরক্কো, বারি-১ ও মেরেন্ডা জাতসহ ১৫-১৬ জাতের মাল্টা গাছ লাগানো হয়েছে। দার্জিলিং ও দেশীয় জাতের কমলা গাছ রয়েছে। গোরমতি, বুনাই কিং, খিল টেস্ট, ব্লাক স্টোন, সূর্যদ্বিপসহ ২৬ জাতের আম গাছ আছে তার বাগানে। এসব ফসল আসতে প্রায় তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাই সাথী ফসল হিসেবে পুরো বাগানে কুল, পেয়ারা ও সবজি লাগানো হয়েছে। এরই মধ্যে কুল বিক্রি শুরু হয়েছে।

May be an image of outdoors

অন্য সহযোগী খামারি ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ‘‌বাগানে মাল্টা গাছের দূরত্ব ১০-১৫ ফুট। তাই আমরা ১৫ ফুটের এ খালি জায়গায় কুল ও পেয়ারা লাগিয়েছি। এখন পর্যন্ত এ বাগানে উৎপাদিত ফল ও শাক-সবজি বাজারে নিতে হয়নি। আমাদের খামারের কুলের স্বাদ, রস ও মিষ্টি ভালো হওয়ায় ক্রেতারা এসে নিয়ে যান।’

খামারে টক-মিস্টি, থাইমিস্টি, থাইকুল এবং বল সুন্দরী জাতের কুল রয়েছে। স্থানীয় জাত এবং থাইমিস্টি বারোমাসি পেয়ারা আসবে কিছু দিন পরই। বাকি ফল আসতে আরো বেশি সময় লাগবে। ভালো দামে কুল বিক্রি আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। আমাদের মনোযোগ ও উদ্যমের কারণে কৃষি বিভাগ, হর্টিকালচার বিভাগের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’

No photo description available.

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বিথী বলেন, ‘ধর্মপুর ইউনিয়নের আমিন বাজারসংলগ্ন তিন যুবকের জান্নাত এগ্রো বিডি খামারটি আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। তাদের দেখে অনেক যুবক আশাবাদী হয়ে খামার গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এ ধরনের খামার একদিকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতির জোগান দেবে অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে রাসায়নিকমুক্ত ফল ও সবজির চাহিদা মিটাবে।’

SHARE THIS ARTICLE