আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশিরা পড়াশুনা, চাকরি ও পারিবারিক ভিসা নিয়ে রোমানিয়ায় আসছেন। তবে বেআইনি উপায়ে শেনজেন সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আইন না মানাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকেই দেশটিতে আটক হচ্ছেন। একজন অভিবাসী যেসব কারণে রেসিডেন্স পারমিট ও ভিসা বাতিলের ঝুঁকিতে সেগুলো আমাদের পাঠকদের জন্য ব্যখ্যা করা হলো।
রোমানিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করা ও দেশটিতে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের যাবতীয় আইনি কাঠামো একটি বিশেষ অধ্যাদেশ বা ওইউজির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই অধ্যাদেশের ১৯৪/২০০২ ধারার সংশোধিত বিধান অনুযায়ী বিদেশিদের প্রবেশ, থাকার অধিকার এবং বাধ্যবাধকতাগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়।
যে যে কারণে অভিবাসীদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসার আবেদন দূতাবাসে অথবা রোমানিয়ায় আসার পরে বিবেচনায় নেয়া হয় না:
যেসব অভিবাসীরা স্বল্পমেয়াদি ভিসা ও রেসিডেন্স পারমিট থেকে দীর্ঘমেয়াদি পারমিটের জন্য আবেদন করেন তারা যদি সকল প্রদত্ত শর্ত পূরণ না করেন সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘমেয়াদি পারমিট ইস্যু করা হয় না।
দীর্ঘমেয়াদি পারমিট ও ন্যাশনাল ডি ভিসার আবেদনের সময় কোন আবেদনকারী যদি মিথ্যা তথ্য, জাল নথি বা অন্য কোনো অবৈধ উপায় ব্যবহার করেন তাহলে তার আবেদন বাতিল করা হয়। কিংবা রোমানিয়া আসার পর প্রমাণিত হলে প্রাপ্ত ভিসা অথবা রেসিডেন্স পারমিট বাতিল করা হয়।
পূর্বে রোমানিয়ার ভূখণ্ড থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বা বহিষ্কার করা হয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য পরিচয়ের অধীনে আবারও আবেদন করলে সেটির পরিবর্তে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয় না।
দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ও পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পারমিট
রোমানিয়া জেনারেল ইনস্পেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (আইজিআই) যেসব কারণে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা, রেসিডেন্স পারমিট অথবা পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পারমিট ও বসবাসের অধিকার প্রত্যাহার করে:
কোনো অভিবাসী স্থানীয় বাসিন্দাদের জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি অথবা পাঁচ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন তাহলে তার সকল প্রকার রেসিডেন্স পারমিট প্রত্যাহার করা হয়ে থাকে।
রোমানিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ কোনো কাজে যুক্ত হলে।
ওয়ার্ক পারমিট ও অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট
রোমানিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের মুক্ত চলাচলের অঞ্চল শেঙেন জোনে প্রবেশের জন্য চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি ক্রোয়েশিয়ার আবেদন গ্রহণ হলেও বাতিল হয়েছে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার আবেদন।
ইইউর শর্তপূরণে স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন ভিসা নিয়ে আসা অভিবাসীদের নিয়ে রোমানিয়ার বেশ কড়া নজরদারি রয়েছে। যেসব কারণে কাজের ভিসা ও অন্য যেকোনো স্বল্পমেয়াদি ভিসায় আসা ব্যক্তিদের বসবাসের অধিকার তুলে নেয়া যায় সেগুলো হলো:
রোমানিয়া থেকে অবৈধভাবে দেশটির রাষ্ট্রীয় সীমান্ত অতিক্রম করে শেঙেন বা কোনো দেশের প্রবেশের চেষ্টা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ জাতীয় কাজে জড়িত ব্যক্তির সকল প্রকার রেসিডেন্স পারমিট ও ভিসা বাতিল করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিধান রয়েছে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আসা অভিবাসীরা রোমানিয়ায় বিদেশিদের কর্মসংস্থানের প্রবিধান লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাজের ভিসা প্রত্যাখান করা হয়। যেমন রোমানিয়ার যে কোম্পানিতে এসেছেন সেটিতে কাজে যুক্ত না থেকে অন্য কোথাও কাজে যোগ দিলে।
প্রথম কোম্পানির এনওসি ছাড়া আবার নতুন করে অন্য কোম্পানিতে কাজে যোগ দিলে একজন ব্যক্তি ভিসা প্রত্যাহার ও নিজ দেশে ডিপোর্টের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
রোমানিয়ার জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে এমন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা গ্রহণ না করেন সেক্ষেত্রে তার অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি বাতিল করা হয়।
ইইউ ব্লু কার্ড, আইসিটি এবং মৌসুমি ভিসায় আসা কর্মীদের রোমানিয়ার সামাজিক সুবিধা গ্রহণের আগে অবশ্যই আগে থেকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে। একজন ব্যক্তি বসবাসের অধিকার হারাতে পারেন।
কোনো অভিবাসী রোমানিয়ার নাগরিকত্বের আবেদন করলে এবং নাগরিকত্ব গ্রহণের পরে আগের সব রেসিডেন্স পারমিট বাতিল বলে গণ্য করা হয়।
স্টুডেন্ট ভিসা বা উচ্চশিক্ষা
উচ্চশিক্ষার জন্য রোমানিয়ায় আসা ছাত্রছাত্রীরা প্রথম দিকে একটি এক বছর মেয়াদি অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট বা টিআরসি কার্ড পেয়ে থাকেন।
এসব ছাত্রছাত্রীরা শুধুমাত্র অসুস্থতাজনিত যৌক্তিক কারণে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তাদের পড়াশোনা সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারবেন। এটির ব্যত্যয় হলে পড়াশোনার শর্তে পাপ্ত টিআরসি কার্ড বাতিল করে নেয়া হয়।
ছাড়া ডিগ্রি শেষে প্রাপ্ত রেসিডেন্স পারমিটের জন্য চাকরিসহ যেসব শর্ত দেয়া হয় সেগুলো পূরণ করতে না পারলে রোমানিয়ায় স্থায়ী হওয়ার সুবিধা দেয়া হয় না।
অপরদিকে, রোমানিয়ার নাগরিককে বিয়ের মাধ্যমে রেসিডেন্স পারমিট প্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি যদি আইনি শর্ত ছাড়া এক বছরের মধ্যে ছয় মাসের বেশি রোমানিয়ায় অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তার টিআরসি কার্ড বা স্বল্পমেয়াদি পারমিট বাতিল করা হয়।
২০২২ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচারের বিরুদ্ধে দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছে বুখারেস্ট কর্তৃপক্ষ। শেঙেন সীমান্ত থেকে এবং ওয়ার্ক পারমিটের নিয়ম না মানায় আটক করা হয়েছে একাধিক বাংলাদেশিকে।
ঢাকায় ডিপোর্ট হয়েছেন অনেক বাংলাদেশি। ইইউ বহিঃসীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের সহায়তায় এসব ডিপোর্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।