মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত শতাধিক

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মিয়ানমারের একটি গ্রামে সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। মৃতদের মধ্যে ২০-৩০ জনই শিশু। মঙ্গলবার দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলে সামরিক সরকারবিরোধী গ্রুপের একটি অনুষ্ঠানে এ হামলা চালানো হয়। এটি দেশটিতে কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি। খবর বিবিসি, সিএনএন ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।

জাতিসংঘ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘যেখানে হামলা চালানো হয়েছে সেখানে স্কুলের শিশুরা নৃত্য পরিবেশন করছিল। হতাহতদের মধ্যে সাধারণ মানুষও ছিল।’

হামলায় যারা বেঁচে গেছেন তারা বিবিসিকে জানান, তারা অন্তত ৮০টি মরদেহ উদ্ধার করেছেন। তবে মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাগাইং অঞ্চলের কানবালু শহরের একটি গ্রামে চালানো এ হামলায় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ১০০ জন নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ জানায়, এ হামলায় অন্তত ২০ শিশু প্রাণ হারিয়েছে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে জানান, ঘটনার দিন কানবালুর পা জি জি গ্রামে একটি স্থানীয় প্রশাসনিক কার্যালয় উদ্বোধনের কথা ছিল। সে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ওইদিন সকালে সেখানে তিন শতাধিক মানুষ জড়ো হয়। অনুষ্ঠানস্থলকে লক্ষ্য করেই এ হামলা চালানো হয়েছে।

মিয়ানমারের সামরিক সরকারের (জান্তা) মুখপাত্র জেনারেল জ মিন টুন রাষ্ট্রীয় একটি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ হামলার দায় স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই গ্রামে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি কার্যালয় উদ্বোধনের কথা ছিল। এ কারণেই আমরা সেখানে হামলা চালিয়েছি।’

স্বেচ্ছাসেবী প্রতিরক্ষা বাহিনীটি পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফএস) নামে পরিচিত। এ মিলিশিয়া বাহিনী জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে লম্বা সময় ধরেই সশস্ত্র প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এর আগে সাগাইংয়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানের কথা জানান দিয়েছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বর্তমানে পথে-ঘাটে অতর্কিত হামলা চালাচ্ছে। আকাশশক্তিকে আরো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে তারাই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। স্কুল, ক্লিনিক এমনকি পুরো গ্রাম ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে।

পা জি জি গ্রামের এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ‘মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর ৭টার দিকে একটি মিলিটারি জেট বিমান গ্রামের ওপর দিয়ে উড়ে যায় এবং যে ভবনে স্থানীয় নেতাদের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, সেটিকে উদ্দেশ করে বোমা নিক্ষেপ করে। এর পর পরই একটি সশস্ত্র হেলিকপ্টার ২০ মিনিট ধরে ওই স্থান লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। পরবর্তী সময়ে যারা মরদেহ উদ্ধার করছিলেন তাদের ওপরও গুলিবর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বিরোধীদের ঘাঁটিতে মিয়ানমার বিমান বাহিনীর হামলা : নিহত অর্ধ শতাধিক

বিমান হামলার পর গ্রামের বাসিন্দারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও আপলোড করেন। সঙ্গে সঙ্গে এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। ভিডিওতে দেখা যায়, চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ক্ষতবিক্ষত দেহ, আগুনে পুড়ছে বেশ কিছু ভবন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসে সামরিক বাহিনী। এর বিরুদ্ধে দেশটিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ শুরু হলে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে তা দমন করে। ক্ষমতা দখলের পর প্রতিপক্ষের ওপর অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে আসছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় শতাধিক নিহত | জয়নিউজবিডি

রক্তক্ষয়ী এ অবস্থাকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও অন্যরা গৃহযুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। এতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গত অক্টোবরে কাচিন রাজ্যে একটি কনসার্টে বিমান হামলা চালানো হয়েছিল। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন শিল্পী ও সশস্ত্র জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যরা। এরপর যত হামলা হয়েছে, তার মধ্যে মঙ্গলবারের হামলাটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।

SHARE THIS ARTICLE