প্রযুক্তির অগ্রগতি কল্পকাহিনিকেও হার মানাচ্ছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে স্বল্প সময়ে পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন গবেষকরা। বিশ শতকেই শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির বিমান দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু সাড়ে ৪ ঘণ্টায় জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি কিংবা চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কানাডার টরন্টোয় পৌঁছানো সম্ভব? যেখানে এ দূরত্ব পাড়ি দিতে এখনকার দ্রুতগতির উড়োজাহাজগুলোর ২০ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
ইউরোপীয় একটি প্রতিষ্ঠান এমন লোভনীয় ভ্রমণ সময়ের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। সংস্থাটির হাইপারসনিক যাত্রীবাহী বিমান শব্দের গতির চেয়ে পাঁচ গুণ গতিতে ছুটতে সক্ষম। হাইড্রোজেনচালিত এ বিমান বর্তমান ফ্লাইটের এক-চতুর্থাংশেরও কম সময়ে ভ্রমণকারীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সুপারসনিক, হাইপারসনিক, হাইড্রোজেনচালিত, অ্যান্টি-বুমের মতো প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। যদিও প্রকল্পগুলোর কোনোটিই এখনও চূড়ান্ত সফলতার খবর দিতে পারেনি। কোনোটা স্থবির আবার কোনোটা বিলম্বিত হচ্ছে। এর আগে ১৯৭০-এর দশকে প্রথমে ফ্রান্স থেকে আকাশে ওড়ে বাণিজ্যিক সুপারসনিক বিমান কনকর্ড। এয়ার ফ্রান্স ও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এই বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করত। তবে অত্যধিক ব্যয় ও পরিবেশগত বিধিনিষেধের কারণে ২০০৩ সালে এই উড়োজাহাজগুলোর ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে শুধু ধনীদের পক্ষে ওই বিমানে ভ্রমণের ক্ষমতা ছিল।
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বর্তমানে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি অ্যারোস্পেস কোম্পানি ডেস্টিনাস দ্রুত মাইলফলক ছুঁয়ে চলেছে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির প্রথম দুটি প্রোটোটাইপ বিমান সফল পরীক্ষামূলক ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে এবং হাইড্রোজেনচালিত ফ্লাইটের পরীক্ষা চালাচ্ছে। সংস্থাটির তৃতীয় প্রোটোটাইপ ডেস্টিনাস থ্রি চলতি বছরের শেষ নাগাদ উদ্বোধনী ফ্লাইটের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ডেস্টিনাসের আশা, তারা হাইপারসনিক বিমানে ভ্রমণের নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। সংস্থাটির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার লফকভিস্ট জানান, এটা করার জন্য বিভিন্ন পন্থা রয়েছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠান বুম সুপারসনিকের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি বড় আকারের যাত্রাবাহী বিমান উন্নয়নে কাজ করছে। তবে আমাদের কৌশল হলো– পাইলটচালিত যাত্রীবাহী বিমানের পরীক্ষা চালানোর আগে স্বচালিত বা ছোট আকারের পূর্ণাঙ্গ বিমান তৈরি করা।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক নানা সংকটের বিষয়টি মাথায় রেখে সংস্থাটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিয়েও কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটির প্রথম পছন্দ হাইড্রোজেন। এটি পরিবেশবান্ধব, তুলনামূলক সস্তা এবং বিমানের গতি ও দীর্ঘ-সীমার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
লফকভিস্ট বলেন, আমরা আমাদের যানগুলো অতি-দীর্ঘ দূরত্বে ভ্রমণের উপযোগী করার চেষ্টা করছি। কেরোসিন বা জেট জ্বালানি ব্যবহার করলে বিমান অনেক ভারী হয়ে যাবে। যেখানে হাইড্রোজেন খুব হালকা এবং অন্য জ্বালানির তুলনায় ঘনত্বও বেশি। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো, বিমানকে সম্পূর্ণভাবে হাইড্রোজেনচালিত এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণসম্পন্ন করে তোলা।
ডেস্টিনাসের প্রোটোটাইপগুলো বহু বছর ধরে অধ্যয়ন করার ফল। ডিজাইনের কারণে এটি কম জ্বালানি ব্যবহার করে বেশি গতিতে ছুটতে পারে।
আসন্ন প্রোটোটাইপ ডেস্টিনাস থ্রি সুপারসনিক হবে। আশা করা হচ্ছে এটি ২০২৪ সালেই সুপারসনিক হাইড্রোজেনচালিত ফ্লাইটের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করবে। ১০ মিটার লম্বা এ প্রোটোটাইপ আগেরটির চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভারী।
সংস্থাটির লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫ জন যাত্রী বহনে সক্ষম ছোট আকারের বাণিজ্যিক বিমান চালু করা। এটির লক্ষ্য হবে বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের সেবা দেওয়া। ২০৪০ সালের মধ্যে ইকোনমিসহ একাধিক ক্লাসের পূর্ণাঙ্গ যাত্রীবাহী বিমান চালু করতে চায় ডেস্টিনাস। সংস্থাটির আশা, ওই সময়ে হাইড্রোজেন সহজলভ্য এবং দামও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। এতে দীর্ঘ পাল্লার ফ্লাইটের খরচও কমানো সম্ভব হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।