বাংলাদেশে বজ্রপাতে এক দিনে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বাংলাদেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে এক দিনে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২১ জন। মঙ্গলবার নরসিংদীতে চারজন, পাবনায় দু’জন, কুড়িগ্রামে দু’জন এবং সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা ও নওগাঁয় একজন করে মারা গেছেন।

নরসিংদীতে মৃত চারজন হলেন– মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের রায়হান মিয়া (৩০), রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী সামসুন নাহার (৪৫), নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (১২) এবং শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাধারচর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩০)।

জানা গেছে, দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন কাতারপ্রবাসী রায়হান মিয়া। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বাড়ির অদূরে কয়েকজনের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

রায়পুরার শ্রীনগর ইউপির সদস্য জালাল উদ্দিন জানান, সকালে বাড়ির পাশের জমিতে খড় আনতে গিয়েছিলেন গৃহবধূ সামসুন নাহার। এ সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

দুপুরে একই উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামে কয়েকজন কিশোর ফুটবল খেলছিল। এ সময় বজ্রপাতে জাবেদ, শিমুল (১১), রিয়াজুল (১২) ও হাসান (১১) আহত হয়। গুরুতর আহত জাবেদকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন তিনজন। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার দিলপাশা ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ইউপি সদস্য আরজু খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৃত শ্রমিকরা হলেন– পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের কিল হোসেন (১৯) ও রমিজ উদ্দিন (৩০)। আহতদের নাম জানা যায়নি। তাঁদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে, সন্ধ্যায় বজ্রপাতে আহত উপজেলার ছোট বিষাকোল ও পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার আল্লাহবাদ গ্রামের আটজনকে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কু‌ড়িগ্রা‌মের উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় বজ্রপা‌তে দুই কৃষ‌কের মৃত‌্যু হ‌য়ে‌ছে। মৃত কৃষকরা হলেন উলিপু‌রের থেতরাই ইউনিয়নের মো. শাহাজালাল (৪৫) ও চিলমারীর রানীগঞ্জ ইউপির অবরু শেখ (৫০)। চিলমারীতে বজ্রপা‌তে আহত হয়েছেন তিন কৃষক। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় বজ্রপাতে ওমর ফারুক নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন কালাচাঁন (৬৫) ও কাসেম (৫২) নামের দু’জন। সকালে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বরইয়া নদীর শীমেরখালে এ ঘটনা ঘটে। ওমর ফারুক ওই ইউনিয়নের বাদেহরিপুর গ্রামের আলীম উদ্দিনের ছেলে এবং জয়শ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। কালাচাঁন ও কাসেম একই গ্রামের বাসিন্দা। জয়শ্রী ইউপির চেয়ারম্যান  সঞ্জয় রায় চৌধুরী জানান, সকালে ওমর ফারুকসহ কয়েকজন বাদেহরিপুর থেকে নৌকায় করে ধান বিক্রির জন্য মধ্যনগর বাজারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাড়ে ৮টার দিকে নৌকাটি বরইয়া নদীর শীমেরখাল এলাকায় পৌঁছালে বজ্রপাত হয়। এ সময় ওমর ফারুক পানিতে পড়ে যান। আহন হন কালাচাঁন ও কাসেম। বেলা ১১টার দিকে এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন নদীতে জাল ফেলে ওমর ফারুকের মরদেহ উদ্ধার করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে বজ্রপাতে মোজাম্মেল হক (৩২) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও দুই শ্রমিক। মোজাম্মেল হকের বাড়ি ওই ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে। আহতদের নাম জানা যায়নি। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গোয়ালনগর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে তাঁর ইটভাটায় কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন মোজাম্মেল। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে নাসিরনগরের বুড়িশ্বর ইউনিয়নে বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে অলি মিয়া (৫০) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন স্থানীয়রা। তিনি ওই ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামের বাসিন্দা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নাইম জানান, অলি মিয়াকে হাসপাতালে এনে কয়েকজন দাবি করেন, তিনি বজ্রপাতে মারা গেছেন। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাঁর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

নেত্রকোনার মদন উপজেলায় বজ্রপাতে জয়নাল আবেদিন (৪০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামে নিজ বাড়ির সামনের বিলে মাছ ধরার সময় তাঁর মৃত্যু হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জয়নালের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া।

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ভবানীপুর মাঠে বজ্রপাতে জামিল হোসেন (১৯) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ভবানীপুর গ্রামের মৃত আজাদ সরদারের ছেলে। প্রতিবেশী সাহেল হোসেন বলেন, তিনি, জামিল ও আরেকজন শ্রমিক মাঠে ভুট্টা তোলার কাজ করছিলেন। ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে আলাদা আলাদা গাছের নিচে আশ্রয় নেন তাঁরা। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন জামিল। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

SHARE THIS ARTICLE