মায়ের শাড়িতে মুড়িয়ে বিদায় জানানো হবে সিরাজুল আলম খানকে

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খানকে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের শাড়িতে মুড়িয়ে সমাহিত করা হবে। সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারা খান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, চাচার ইচ্ছায় গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের আলীপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হবে।

সিরাজুল আলম খানের ছোট ভাই ফেরদৌস আলম খান জানান, জীবনের অন্তিম পর্যায়ে এসেও তিনি চাননি কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মান। বড় ভাইয়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।

শুক্রবার (৯ জুন) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহ নেওয়ার সময় তারা এসব কথা জানান সাংবাদিকদের।

তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল থেকে মোহাম্মদপুরের মারকাজুল ইসলামে গোসলের জন্য মরদেহ নেওয়া হবে। সেখান থেকে শমরীতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রথম জানাজা নামাজ হবে। তারপর নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের আলীপুর গ্রামে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে।

এর আগে, শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিরাজুল আলম। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হন তিনি। থাকতেন ফজলুল হক হলে। ১৯৬১ সালে তিনি ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে ‘নিউক্লিয়াস’ নামে যে গুপ্ত সংগঠন গড়ে ওঠে তার মূলে উদ্যোক্তা ছিলেন সিরাজুল আলম খান। এটি গঠনে তার প্রধান সহযোগী ছিলেন আবদুর রাজ্জাক এবং কাজী আরেফ আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তারা।

১৯৬২-১৯৭১ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করে এই ‘নিউক্লিয়াস’। আন্দোলনের একপর্যায়ে গড়ে তোলা হয় ‘নিউক্লিয়াসে’র রাজনৈতিক উইং বিএলএফ এবং সামরিক ইউনিট ‘জয় বাংলা বাহিনী’। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে ‘জয় বাংলা’ সহ সকল স্লোগান নির্ধারণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে ‘…এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাক্যসমূহের সংযোজনের কৃতিত্ব ‘নিউক্লিয়াসে’র। এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা ছিল মুখ্য।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় উদ্বোধনী সভা স্থগিত ঘোষণার পরপরই ২ মার্চ বাংলাদেশর প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত নির্ধারণসহ ৩ মার্চ ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ ঘোষণার পরিকল্পনাও নিউক্লিয়াসের। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে এই দুটি কাজ ছিল প্রথম দিকনির্দেশনা। আর এই দুই গুরুদায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে আ স ম আবদুর রব এবং শাজাহান সিরাজ।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নির্বাচিত করার দায়িত্ব পালন করে ‘নিউক্লিয়াসে’র রাজনৈতিক উইং বিএলএফ। নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণআন্দোলনে গড়ে ওঠা জনমতকে সাংবিধানিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে গণরায়ে পরিণত করার এই কৌশলও নির্ধারণ করে বিএলএফ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সিরাজুল আলম খান কে? - Quora

স্বাধীনতার পর বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মতভেদ দেখা দেয় সিরাজুল আলম খানের। এর ফলে গড়ে ওঠে একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘অভ্যুত্থান’ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা। জাসদ গঠন এবং ‘অভ্যুত্থান’ এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান।

সিরাজুল আলম খান এবং স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস | প্রথম আলো

আন্দোলন, নির্বাচন, সমান্তরাল প্রশাসন এবং সশস্ত্র সংগ্রামকে ঘিরে বিভিন্ন বাহিনী গড়ে তোলার কৃতিত্ব রয়েছে সিরাজুল আলম খানের। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন একজন চিরকুমার। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও তিনি কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না। আড়ালে থেকেই তৎপরতার জন্য তাকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।

SHARE THIS ARTICLE