
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ চলতি বছরের মধ্য এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সংঘাত, সহিংসতায় আফ্রিকার দেশ সুদানে অন্তত ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন৷ এই সময়ে খাদ্য সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশটিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার শঙ্কা করছে জাতিসংঘ৷
বুধবার সুদানে দুর্ভিক্ষের সতর্কতা জারি করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)৷
সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘সুদানে দুই কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ তীব্রভাবে খাদ্য অনিরাপত্তায় ভুগছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশের কিছু বেশি৷’
দেশটির সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তার সাবেক ডেপুটি ও আধা-সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর প্রধান মোহাম্মদ হামদান ডাগলোর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে শুরু হওয়া লড়াইয়ে বিপর্যস্ত সুদান৷ এই সংঘর্ষ শুরুর আগেও দেশটির অনেক মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছিলেন৷
সুদানে বিপর্যকর মানবিক পরিস্থিতির মধ্যেই জাতিসংঘ বুধবার সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, ‘প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে কেবল এক ধাপ পেছনে আছেন৷’
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন ধ্বংস হয়েছে, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি, বাধাগ্রস্ত হয়েছে সাহায্য সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো৷
দেশটির ওয়েস্ট দারফুরের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি ‘তীব্র ক্ষুধার মুখে’ পড়েছে৷ জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম জানিয়েছে, ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, আর ১০ লাখেরও বেশি মানুষ সুদান ছেড়ে প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন৷
আইওএম বলছে, শুধু খার্তুম থেকেই ২০ লাখের বেশি মানুষকে পালাতে হয়েছে৷
কয়েক মাস ধরে চলা এই বিমান হামলা, আর্টিলারি যুদ্ধ এবং বন্দুকযুদ্ধ থামাতে অনুরোধ করে আসছে বেসামরিক নাগরিকেরা৷ দুই পক্ষের সংঘর্ষে দেশটির রাজধানীসহ সব শহরগুলো পরিণত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে৷
দুই পক্ষের প্রতিশ্রুতির পরও কোনো মানবিক করিডোর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, বেসামরিক মানুষের জন্য সাহায্য দিতে সংস্থাগুলোকে পড়তে হচ্ছে বাধার মুখে৷
বুধবারও সুদানের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাজধানী খার্তুমে সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল৷ সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র টেলিভিশন ভাষণে ঘোষণা দিয়েছেন, দক্ষিণ খার্তুমে একটি বিমান হামলায় ‘বিদ্রোহী বাহিনীর কয়েক ডজন’ সেনা ‘নিহত ও আহত’ হয়েছে৷
নিজ দলের নেতা মোহাম্মদ হামদান ডাগলোর বিরুদ্ধে ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াই করছেন সুদানের ডি ফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান৷ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আছে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী৷ আর মোহাম্মদ হামদান ডাগলোর সঙ্গে আছে আধা সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)৷ এই দুই জেনারেল যৌথ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদান দখল করেছিলেন৷
দুই জনের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব গত ১৫ এপ্রিল থেকে প্রকাশ্য যুদ্ধে রূপ নেয়৷ আর এই যুদ্ধে চার কোটি ৬০ লাখ মানুষের দেশটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন৷