রিনা আকতার তুলিঃতখন বাজে বেলা আড়াইটা। জুমার নামাজ পড়ে মায়ের সঙ্গে খাবার খাচ্ছিল সায়েম হোসেন (১৬)। খাওয়ার মাঝখানে একটি ফোন আসে। ফোনের ওপাশ থেকে কণ্ঠ ভেসে আসে, ‘কই তুই, তাড়াতাড়ি আয়, সব শেষ হইয়া গেল রে।’
খাওয়া শেষ না করেই ঘর থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যায় সায়েম হোসেন, তাকে অনেক আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি মা, ছেলে চলে যায় আন্দোলনে। পুলিশের সঙ্গে ইটপাটকেল বিনিময়ের একপর্যায়ে একটি গুলি এসে লাগে তার কপালে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সায়েম। পরে বন্ধুরা তাকে নিয়ে স্থানীয় দেশবাংলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হলে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, এখানে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর মাগরিবের পরে মায়ের কাছে ছেলের মৃত্যুর খবর আসে।
সায়েমের মা শিউলি আক্তার খবরের কাগজের এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘খবর শুনে সারা শরীর কাঁপছিল, ছুটে যাই হাসপাতালে। গিয়ে দেখি আমার ছেলের নিথর দেহ। পরে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর কবরস্তানে ছেলের লাশ দাফন করি। এরপর অনেককেই জানানোর চেষ্টা করেছি আমার ছেলে আন্দোলনে শহিদ হয়েছে, পারিনি। ছেলে দেশের জন্য রক্ত দিল, কিন্তু কেউ জানল না।’
শিউলি আক্তারের কাছ থেকে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সায়েম। ওই দিন রাজধানী ছিল উত্তাল। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা। পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমানোর জন্য বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। শুধু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নয়, ওই দিন বাসাবাড়িতেও ঢুকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে অনেককে।
শিউলী আরও জানান, ওই দিন হাসপাতালে ছেলের লাশ পাওয়ার পর অনেকে মিডিয়াকে জানানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কারও সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি।
সন্তানহারা এই মায়ের দাবি, সন্তানকে তো আর ফিরে পাবেন না। শুধু সায়েমের নামটি তিনি নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকায় দেখতে চান।