রাসূলুল্লাহ (সা.) এর রসিকতা

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ শান্তির ধর্ম ইসলাম মানুষের শারীরিক ও মানসিক চাহিদার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ ইসলাম মনে করে, একটি সফল জীবনের জন্য হাসি-রসিকতা থাকা জরুরি। কারণ হাসি-রসিকতা মানবজীবনের একটি সুখকর উপাদান। তবে এ ব্যাপারে সীমা লংঘন করা যাবে না।

ইসলামের দৃষ্টিতে হাসি-রসিকতা হতে হবে নির্দোষ, পরিচ্ছন্ন ও প্রজ্ঞাপূর্ণ। যে হাসি-রসিকতা বা আমোদ-প্রমোদে মিথ্যা বা ধোঁকার সংমিশ্রণ থাকে এবং যে রসিকতা কারো মনোবেদনা বা মানহানির কারণ হয় তা নাজায়েজ ও নিষিদ্ধ।

প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিকে ইঙ্গিত করেই বলেন ‘তোমার ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া কোরো না এবং ঠাট্টা-বিদ্রুপ কোরো না। অর্থাৎ যে হাসি-রসিকতা অন্তরে কঠোরতা সৃষ্টি করে অথবা আল্লাহর ধ্যান থেকে মানুষকে গাফেল করে বা কারো কষ্টের কারণ হয় কিংবা কারো গাম্ভীর্য ও মর্যাদা নষ্ট করে এ ধরনের হাসি-তামাশা নিষেধ। পক্ষান্তরে যে হাস্যরস মনে প্রফুল্লতা আনে এবং যে রসিকতা ইবাদত-বন্দেগি ও দ্বীনি কাজে দেহ-মনকে সজীব করা এবং দৈহিক ও মানসিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করার উদ্দেশে হয়ে থাকে এবং তা নির্দোষ হয় তা শুধু জায়েযই নয় বরং মুস্তাহাব।

সাহাবি আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) কখনো কখনো তাকে (কৌতুক করে) ‘দুই কানওয়ালা’ বলে ডাকতেন।’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৬)

মহানবী (সা.) আনাস (রা.)-কে দুই কানওয়ালা বলে সম্বোধন করেছেন, এতে কোনো মিথ্যা বা ভুল ছিল না। বিশেষ কোনো কারণে আনাস (রা.)-কে দুই কানওয়ালা বলেছেন। যেমন তার দুই কান তুলনামূলক বড় ছিল বা তার শ্রবণশক্তি প্রবল ছিল। তিনি দূরের কথাও খুব সহজে শুনতে পেতেন।

রাসূল (সা.) ছোট শিশুদের সঙ্গেও মজা করতেন। আনাস (রা.) বলেন মহানবী (সা.) আমাদের সঙ্গে অবাধে মিশতেন। এমনকি তিনি আমার ছোট ভাইকে কৌতুক করে বলতেন- ‘আবু উমায়ের কী করে নুগাইর’। অর্থাৎ তোমার নুগাইর পাখিটার কী অবস্থা? আবু উমায়েরের খেলার পাখিটা মারা গেলে সে অনেক কষ্ট পায়। তাই তার মনোরঞ্জনের জন্য রাসূল (সা.) তাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য পাখিটির অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সঙ্গে কথা বলার কারণে তার দুঃখ দূর হয়, সে আনন্দ পায়।

আমরা অনেক সময় শিশুদের সঙ্গে রসিকতা করে কাছে ডাকতে গিয়ে বিভিন্ন কিছু দেব বলি। কিন্তু দেখা যায় কিছু দেওয়া হয় না। তাই এটা ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে প্রথমত ধোঁকার গুনাহ হয়। দ্বিতীয়ত এই শিশুটি একটা অনৈতিক শিক্ষা পায়। তাই হাসি-মজা বা রসিকতা হতে হবে সম্পূর্ণ মিথ্যাহীন ও ধোঁকামুক্ত।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার কিছু সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের সঙ্গে কৌতুকও করেন? রাসূল (সা.) বলেন, আমি কেবল সত্য কথাই বলে থাকি। এমনকি কৌতুকেও। (শামায়েলে তিরিমিজি, হাদিস: ২৩৮)

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) এর কাছে এক বৃদ্ধা এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাকে জান্নাত দান করেন। তখন রাসূল (সা.) (রসিকতা করে) বলেন, ‘হে অমুকের মা! কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এই কথা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যাচ্ছিলেন। তখন রাসূল (সা.) সাহাবাদের বললেন, তাকে গিয়ে বলো- বরং সে যুবতী ও চিরকুমারী হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস: ২৪১)

এখানেও রাসূল (সা.) কোনো মিথ্যা বা অসত্য বলেননি। এভাবে তিনি বিভিন্ন সময় সাহাবায়ে কেরামদের সঙ্গে হাসি-রসিকতা বা মজা করতেন। তবে রসিকতার মধ্যে কখনো মিথ্যা বা ধোঁকার আশ্রয় নিতেন না। বরং সর্বদা সত্য ও বাস্তব বিষয়াদির মাধ্যমে অন্যকে আনন্দিত করতেন।

SHARE THIS ARTICLE