১২ই অক্টোবর সোমবার; আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্ক:নাগার্নো কারাবাখ অঞ্চলের কর্তৃত্ব নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে দুই সপ্তাহের বেশী সময় ধরে চলতে থাকা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উদ্যোগে গত শনিবার একটি চুক্তি সম্পাদিত হলেও যুদ্ধ বিরতি কার্য্যকরের অব্যবহিত পরেই তা ভেঙ্গে পড়ে। গত শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্য্যকর করা হয়, কিন্তু যুদ্ধ বিরতি কার্য্যকর হওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই উভয় পক্ষ থেকেই যুদ্ধ বিরতি ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে।
শনিবারই আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবী করে যে, আজেরি বাহিনী আর্মেনিয়ার ভিতরে গোলা নিক্ষেপ করেছে, এদিকে নাগার্নো কারাবাখে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনীর দাবী আজারি বাহিনীরা সেখানেও আক্রমণ চালিয়েছে। অন্যদিকে আজারবাইজানের দাবী তাদের সীমানা অতিক্রম করে আজারবাইজানের ভিতরে শত্রু সৈন্য আক্রমণ চালিয়েছে।
এ এফ পি বার্তা সংস্থার সংবাদে প্রকাশ যে, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১১:৩০ টার দিকে নাগার্নো কারাবাখের প্রধান শহর স্টেপার্নাকোর্টে অন্তঃপক্ষে সাতটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হলে জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যাবার জন্য সাইরেন বাজিয়ে সাবধান করা হয়।
শান্তি চুক্তি অনুসারে প্রথমে নাগার্নো কারাবাখে আর্মেনিয় আর আজেরি বাহিনীর মধ্যে বন্দি এবং নিহতদের লাশ বিনিময়ের কথা ছিল, ইতিমধ্যে চুক্তি ভংগ হওয়ার দাবী উত্থাপিত হওয়ায় দ্রুত শান্তির আশা পরাহত হলো। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সার্গেই লাভরভ এই শান্তি চুক্তি করতে সহায়তা করেছেন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষ মানবিক কারনে যুদ্ধ বন্ধে একমত হয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস যুদ্ধ বন্ধ করতে সহায়তা করবেন। তিনি বলেন সামগ্রিক চুক্তি সম্পাদনে আলোচনায় বসতে উভয় পক্ষী একমত হয়েছেন।
শনিবারের পর গতকাল রোববারও উভয়পক্ষ থেকেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের দাবী অব্যাহত থাকে। আজারবাইজান কর্তৃপক্ষ দাবী করে যে, শনিবার রাতে গাঞ্জা শহরে নিক্ষিপ্ত গোলার আঘাতে আজেরি পক্ষের অন্ততঃ ৯জন নিহত হয়েছেন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধে ইতিমধ্যে উভয়পক্ষের ৩০০ জনের মত নিহত আর হাজারো মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত।তবে নাগার্নো কারাবাখ অঞ্চলে অধিকাংশ জাতিগত আর্মেনীয়রা আজারবাইজানীয় শাসনকে প্রত্যাখ্যান করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯০ এর দশকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থন নিয়ে জাতিগত আর্মেনিয়রা নিজস্ব অঞ্চলকে পরিচালিত করছে।
এবারে সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখে পুনরায় দুই পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তুরস্ক আজারবাইজানকে সমর্থন করছে তবে কতটুকু সাহায্য করছে তা স্পষ্ট না হলেও আর্মেনীয় পক্ষ থেকে তুরস্কের সাহায্যের কথা দাবী করা হচ্ছে। এদিকে রাশিয়া প্রত্যক্ষভাবে কোন পক্ষ অবলম্বন না করে যুদ্ধ বিরতির লক্ষ্যে কাজ করছে। আর্মেনিয় কর্তৃপক্ষের দাবী রাশিয়ার সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় প্রয়োজনে তারা রাশিয়ার সাহায্য আশা করেন। বিশ্বের অন্যান্য অনেক রাষ্ট্র বিবদমান দুটি দেশকে যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানালেও কার্য্যকরীভাবে কেউ এগিয়ে আসছিলেন না। এমতাবস্থায় রাশিয়ার উদ্যোগ ব্যার্থ হতে চলেছে। সকলের প্রত্যাশা দ্রুত এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
সূত্রঃ বি বি সি, আল জাজিরা