আইরিশ বাংলাপোস্ট ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফাইজার এবং জার্মানি ভিত্তিক বায়োনেটেক এই দুই কোম্পানি যৌথভাবে কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন পরীক্ষায় সফল হয়েছে বলে প্রকাশিত হয়েছে। এই দুই কোম্পানির এক যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়েছে যে, চলমান চূড়ান্ত তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় তাদের তৈরি ভ্যাক্সিন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফলাফল দেখিয়েছে, এই ভ্যাক্সিন কোভিড-১৯ সংক্রমন রোধে ৯০% কার্য্যকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
এই বিবৃতিটি এমন একটি সময়ে প্রকাশিত হলো যখন বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ পুনরায় লক ডাউনের মত বাধ্য বাধকতায় গৃহবন্দী হয়েছেন এবং অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি মারাত্নক ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধান অনুসারে, এই ভ্যাক্সিন কারো শরীরে প্রথম ডোজ প্রয়োগের ২৮ দিনের মাথায় আর দ্বিতীয় ডোজের পর ৭ দিনের মাথায় ৯০% মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে।
কোম্পানিগুলো জানিয়েছে যে, তারা আশা করে, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৫ কোটি ডোজ এবং ২০২১ সালের মধ্যে ১৩০ কোটি ভ্যাক্সিন ডোজ সরবরাহ করতে পারবে।
ফাইজারের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালবার্ট বউরলা এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রথম পর্যায়ের ভ্যাকসিন পরীক্ষার ফলাফলের প্রথম সেটটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধে আমাদের ভ্যাকসিনের ক্ষমতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।” তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী বর্তমান স্বাস্থ্য সঙ্কটের অবসান ঘটাতে এই অর্জন সাফল্যের দ্বারে গুরুত্ত্বপূর্ন অর্জন।”
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশজুড়ে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে, হাসপাতালের আই সি ইউ বেড পূর্ণ হয়ে গেছে এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
মার্কিন সংস্থা মডার্না, বেশ কয়েকটি চীনা ল্যাব, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার নেতৃত্বাধীন একটি ইউরোপীয় প্রকল্পও সম্ভাব্য ভ্যাকসিন সহসাই সফলতার ঘোষণা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। দুটি রাশিয়ান ভ্যাক্সিন ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পন্ন হওয়ার আগেই ব্যবহারের জন্য নিবন্ধভুক্ত করা হয়েছে, তবে রাশিয়ার বাইরে বহুলভাবে গৃহীত হয়নি।
নতুন এই ভ্যাকসিন “বিএনটি১৬২বিটু”, চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়েছিলো জুলাই মাসের শেষদিকে এবং ৪ঠা নভেম্বর পর্য্যন্ত তালিকাভুক্ত ৪৩ হাজার ৫ শত ৩৮ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৯০% কে দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করা হয়েছে।
ফাইজার জানিয়েছে যে, জরুরী ব্যবহারের অনুমোদনের যোগ্যতা অর্জনের জন্য মার্কিন ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের নিকট চূড়ান্ত ফলাফল জমা দেয়া হচ্ছে, আশা করা যায় নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে এই অনুমতি অর্জন করা সম্ভব হবে।
যদিও ফাইজার-বায়োনটেক পরিচালিত ট্রায়াল এখনও বিশেষজ্ঞদের পিয়ার রিভিউ করা হয়নি, বিজ্ঞানীরা এই সফলতার সংবাদে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই এই সফলতায় আনন্দ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রথম প্রজন্মের ভ্যাক্সিনের জিনয় এটি একটি দুর্দান্ত ফলাফল”।
আমরা মনে করি নূতন পদ্ধতির এই ভ্যাক্সিনের সফলতার সংবাদ মহামারির এই ক্রান্তিলগ্নে সমগ্র মানব সভ্যতার জন্য এই একটি আনন্দের সংবাদ বহন করে নিয়ে এসেছে। আমাদের দেখতে হবে কত দ্রুত এই ভ্যাক্সিন বিশ্বের জনগণের নিকট পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়। আমরা এই সংবাদের সার্বিক সফলতা কামনা করি।
সংবাদ সূত্রঃ বি বি সি, সি এন এন, আল জাজিরা