ভারতে কৃষকরা “ভারত বন্ধের” ঘোষণা দিল-সরকার কি সংকটে?

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ভারতের রাজধানী দিল্লীতে সরকারের সাথে পঞ্চম দফা আলোচনার আগে আন্দোলনরত কৃষকরা গতকাল শুক্রবার তাদের অবস্থানকে আরও কঠোর করেছে, তারা আগামী মঙ্গলবার ৮ই ডিসেম্বর ‘ভারত বন্ধ’ ঘোষণা এবং সেদিন টোল প্লাজা দখল করার হুমকি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষক নেতা গুরনাম সিং চাদোনি বলেন, আজ শনিবারের আলোচনার সময় কেন্দ্র যদি তাদের দাবি না মানে তাহলে তারা নতুন খামার আইনের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন আরও তীব্র করবে।ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হরিন্দর সিং লাখওয়াল বলেন, “আজকের বৈঠকে আমরা আগামী ৮ ই ডিসেম্বর ‘ভারত বন্ধ’ ডাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই দিন আমরা সমস্ত টোল প্লাজাও দখল করব, নতুন খামার আইন বাতিল না করা হলে আগামী দিনগুলিতে দিল্লিগামী সমস্ত সড়ক অবরোধ করার পরিকল্পনাও আমরা গ্রহণ করেছি।”

তিনি বলেন যে, কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকার ও কর্পোরেট সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে এবং আজ ৫ই ডিসেম্বর তাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করবে। তিনি আরও জানান যে, তাদের আন্দোলনের সাথে একাত্নতা ঘোষণা করে ক্রীড়াবিদরা আগামী ৭ই ডিসেম্বর তাদের পদক ফিরিয়ে দেবেন। তবে লাখওয়াল, পদক ফিরিয়ে দেয়া খেলোয়াড়দের নাম ও সংখ্যা প্রকাশ করেননি। সংবাদ সম্মেলনের সময় রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র  এবং অন্যান্য রাজ্যের কৃষক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

কৃষক নেতারা তাদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে জানান যে, নতুন খামার আইন বাতিলের জন্য সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হোক, তারা জানান যে, আইনগুলিতে কোন সংশোধনী তারা চান না, বরং তারা এই আইন বাতিল চান। বৃহস্পতিবার সরকারের সাথে আলোচনায় কোনও সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পর, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং অন্যান্য রাজ্যের হাজার হাজার কৃষক টানা নবম দিন বিক্ষোভ প্রদর্শন অব্যাহত রাখায় দিল্লির সীমান্ত পয়েন্ট কার্য্যতঃ অবরুদ্ধ ছিল।

Farmers protest at Delhi border

রাজস্থানের কৃষক নেতা রণজিৎ সিং রাজু বলেন যে, চলমান এই আন্দোলন দেশের সকল কৃষকের এবং সরকার জনগণের এই অনুভূতি উপলব্ধি না করলে, ভবিষ্যতের যে কোন পরিণতির জন্য সরকার পুরোপুরি দায়বদ্ধ থাকবে। কৃষক সম্প্রদায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে নতুন আইনগুলি “কৃষকবিরোধী”, এবং ন্যূনতম সহায়তা মূল্যের পদ্ধতিটি ভেঙে দেওয়া হলে কৃষকরা বড় বড় কর্পোরেশনের “করুণায়” উপর নির্ভরশীল করে দেবে। তবে সরকার তাদের বক্তব্যে বলছে যে, তারা মনে করে নতুন আইন কৃষকদের উন্নততর সুযোগসুবিধা প্রদান করবে এবং কৃষিতে নতুন প্রযুক্তির সূচনা করবে।

নূতন আইনগুলিতে কি আছে? 

এই আইনগুলি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়, মূল্যনির্ধারন ও সংরক্ষণের বর্তমান নিয়মকে দুর্বল করে দেবে যা, কয়েক দশক ধরে ভারতের কৃষকদের মুক্ত বাজার থেকে রক্ষা করেছে। এই আইন বেসরকারি ক্রেতাদের কৃষক উৎপাদিত পণ্য ক্রয় করে ভবিষ্যতে বিক্রয়ের জন্য মজুদ করার সুযোগ করে দেবে, যা বর্তমানে কেবলমাত্র সরকারী অনুমোদিত এজেন্টরা করতে পারেন; এবং এই আইন চুক্তি ভিত্তিক চাষের রূপরেখা প্রদান করে যাতে করে  কৃষকরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে তাদের উৎপাদন করতে বাধ্য হবে। 

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হ’ল কৃষকরা তাদের পণ্য বাজার মূল্যে- কৃষি ব্যবসায়ী, সুপারমার্কেট চেইন এবং অনলাইন মুদি ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রয় করতে পারবেন। বর্তমানে অধিকাংশ ভারতীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদনের বেশিরভাগ অংশ সরকার-নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারে বা মণ্ডিতে আশ্বাস প্রদানকৃত দরে বিক্রি করতে পারেন।

বর্তমানের এই বাজার কৃষকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়, প্রায়শই বড় জমি-মালিক, ব্যবসায়ী বা “কমিশন এজেন্ট” যারা মধ্যস্বত্ত্বভোগী হিসেবে পণ্যসামগ্রী ক্রয়, বিক্রয়, সঞ্চয় এবং পরিবহন, এমনকি অর্থায়ন ও করে থাকেন। বর্তমানের এই বিধান বেশ জটিল এবং ব্যাক্তিগত এবং ব্যাবসায়িক সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল। নূতন আইনে কৃষকদের তথাকথিত “মান্ডি সিস্টেম” এর বাইরে বিক্রি করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

তাহলে সমস্যা কোথায় ?

সমস্যা হলো এটা অস্পষ্ট যে এই আইন বাস্তবে কীভাবে কাজ করবে। কৃষকরা ইতিমধ্যে অনেক রাজ্যে বেসরকারি ব্যাবসায়িদের নিকট তাদের পণ্য বিক্রয় করতে পারে তবে এই আইন সকল কিছুকে একটি জাতীয় কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসবে।

কৃষকরা মূলত উদ্বিগ্ন এই কারণে যে এই আইনের  ফলে পাইকারি বাজার এবং আশ্বাসিত মূল্যে বিক্রির প্রথার অবসান হবে, এটা হলে তাদের আর কোন বিকল্প অবস্থান থাকবে না অর্থাৎ যদি তারা কোনও বেসরকারি ক্রেতার প্রস্তাবিত দামে সন্তুষ্ট না হন তাহলে  মন্ডিতে আর ফিরে আসতে পারবেন না কিংবা আলোচনার সময় দর কষাকষির জন্য এটিকে ব্যবহার করতে পারবেন না।

প্রথমত, কৃষকরা এই বেসরকারী ব্যাবসায়ীদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, যারা তাদের ফসলের জন্য আরও ভাল দাম দেবে। ইতিমধ্যে সরকারী ম্যান্ডিগুলি তাদের অবস্থান গুটিয়ে ফেলবে এবং কয়েক বছরের মধ্যেই এই ব্যাবসায়িরা কৃষকদের শোষণ শুরু করতে শুরু করবে। তখন কৃষকদের যাওয়ার আর কোন জায়গা থাকবেনা। 

সরকার বলেছে যে মান্ডি ব্যবস্থা চালু থাকবে, এবং তারা বর্তমানে যে ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এমএসপি) অফার করবে তা প্রত্যাহার করবে না। তবে কৃষকরা এই বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারছেনা।

তথ্যসূত্রঃ ইন্ডিয়ান টাইমস, বি বি সি, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস 

SHARE THIS ARTICLE