দীর্ঘ তিন যুগের পথ চলায় জাতীয় পার্টির গতিপথেই দেশের রাজনীতি চলেছে বলে দাবি করেছেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
জাতীয় পার্টির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন।
জি এম কাদের বলেন, “জাতীয় পার্টি যে কোনো সরকারের সময়, যে কোনো নির্বাচনে, যে কোনো রাজনীতিতে এবং যে কোনো আন্দোলনে সব সময় এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যাতে মনে হয় জাতীয় পার্টি যেদিকে যাবে বাংলাদেশে রাজনীতি সেদিকে যাবে। এটাই হচ্ছে জাতীয় পার্টির সাফল্য।”
সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি গঠন করেন জাতীয় পার্টি। এরশাদের মৃত্যুর পর এখন তার ভাই জিএম কাদের রয়েছেন নেতৃত্বে।
সভায় দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “সেদিন দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করেছিলেন।”
নব্বইয়ের গণআন্দোলনে পতিত সামরিক শাসক এরশাদের দল এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিত্রতা রেখে চলছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সমালোচনাও করেন জি এম কাদের।
তিনি বলেন, “চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা আজ ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। জাতীয় পার্টিকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এই সময়টা পার করতে হয়েছে।
“আপনারা সকলেই জানেন, আমাদের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি কখনও এককভাবে কখনও সম্মিলিতভাবে জাতীয় পার্টিকে আঘাত করেছে। আঘাতের পর আঘাত করেছে। একে নিঃশেষ করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছে। আমরা তাতে দোষ দেই না। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী থাকলে সকলেরই চোখ পড়ে।”
এরশাদের মৃত্যুর পরে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে জাতীয় পার্টির বিলীন হওয়ার কথা বলে এলেও তার জবাবে জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি কোনোদিন দুর্বল হয়নি।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা খেয়াল করেছেন কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রচার করা হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান যখন অসুস্থ ছিলেন, তখন বলা হয়েছিল জাতীয় পার্টি আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বলা হয়েছিল, এরশাদের অবর্তমানে পার্টির অস্তিত্ব থাকবে না। মানুষ তখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, জাতীয় পার্টি কি সত্যি এত দুর্বল হয়ে পড়েছে? তবে আল্লাহর রহমতে আপনারা (নেতাকর্মীরা) প্রমাণ করেছেন, জাতীয় পার্টির বিলীন হয় নাই।”
দ্বন্দ্ব-জটিলতার অবসান করে নবম জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন শেষে জাতীয় পার্টির সব নেতারাই এক মঞ্চে বসেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায়।
দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ না আসলেও এসেছিলেন তার সমর্থক বলে পরিচিত আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা।
মঞ্চে আরও ছিলেন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, কো চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সালমা ইসলাম, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।
জি এম কাদের দলে ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের আগামী দিনের রাজনীতি হবে নিজেদের সংগঠিত করার রাজনীতি। তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত দলের সুগঠিত, শৃঙ্খলাবদ্ধ নেতৃত্ব আসতে হবে। “
নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের খেয়াল রাখতে হবে জনগণের সমর্থনের বিষয়টি। জনগণের যে ধরনের প্রয়োজন, আমাদের সে ধরনের রাজনীতি করতে হবে। আমরা সেভাবে কর্মসূচি দেব। কোথাও অন্যায়, অবিচার, আন্দোলন হলে আমরা জনগণের ন্যায্য দাবির সাথে থাকব। জনগণের সমর্থন থাকলে সংগঠনও শক্তিশালী হবে।”
সুত্রঃ bdnews24.com