আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন একজন প্রেসিডেন্টকে তার দায়িত্ত্বপালনকালে দ্বিতীয়বারের মত অভিসংশন (ইমপিচ) করা হলো। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবার ‘বিদ্রোহের উস্কানিদাতা’ হিসাবে অভিযুক্ত করে অভিসংশিত করা হলো। প্রতিনিধি পরিষদে গতকাল বিকালে দীর্ঘ বিতর্কের পর ৪ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হয় ভোট, এই ভোটে প্রেসিডেন্টের নিজদল রিপাবলিকান পার্টি থেকে ১০ জন সহ সর্বমোট ২৩২ জন তার বিরুদ্ধে ভোট প্রদান করলে তিনি অভিযুক্ত হন। তার পক্ষে ১৯৭ জন ভোট প্রদান করলে ৩৫ ভোটের ব্যাবধানে তিনি অভিযুক্ত হন।
বিগত ২রা নভেম্বর ২০২০, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনের নিকট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হন, কিন্তু এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর তিনি নির্বাচনী ফলাফলের বিরুদ্ধে ৬০ টির মত মামলা করেন কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে প্রতিটি মামলা বিচারকগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়।
গত ৬ই জানুয়ারি ২০২১, নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়ায় ক্যাপিটোলে প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচনী ফলাফলের চূড়ান্ত প্রত্যয়ন চলছিলো, ঠিক সেই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প কাছাকাছি একটি সমাবেশ আহবান করেন। এই সমাবেশে তিনি তার সমর্থকদের ক্যাপিটোলে যাবার আহবান জানিয়ে বলেন, “শক্তি প্রদর্শন” এবং “জাহান্নামের মতো লড়াই” করে নির্বাচনী ফলাফল উল্টে দিয়ে দেশকে নিজেদের হাতে ফিরিয়ে নিন। এর পর হাজার হাজার ডোণাল্ড সমর্থক, ক্যাপিটলে হামলা চালিয়ে সেখানে ভাংচুর করে। ক্যাপিটোলে বৈঠকরত সদস্যরা লুকিয়ে জীবন রক্ষা করেন। হামলার ফলে একজন পুলিশ সহ ৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। সন্ত্রাসের সময়, টুইটার এবং ফেসবুকে ট্রাম্প মিশ্র বার্তা পোস্ট করেন, অবশেষে সন্ধ্যার দিকে দাঙ্গাবাজদের “ভালোবাসা ও শান্তিতে বাড়ি ফিরতে” টুইট করে তাদের “মহান দেশপ্রেমিক” হিসাবে বর্ণনা করেন।
ক্যাপিটল থেকে জনতা ফিরে গেলে, পরের দিন দিন ভোরের দিকে সদস্যরা পুনরায় একত্রিত হয়ে জো বাইডেনকে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থক কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে এই ধরনের আক্রমণে দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে নিন্দা করা হয়।
ট্রাম্প সমর্থকগোষ্ঠী কর্তৃক এই আক্রমণকে অনেকেই গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি মারাত্নকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়। আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তিনি সমালোচনায় পতিত হন, নিজ দলের সদস্যরা ট্রাম্পের সমালোচনা করে পদত্যাগ করেন। ডেমোক্র্যাট দল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উস্কানির অভিযোগ উত্থাপন করে গত ১১ই জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধানের আর্টিকেল নাম্বার ২৫ ব্যাবহার করে প্রেসিডেন্ট পদে কার্য্য পরিচালনায় অক্ষম ঘোষণা দিয়ে সরিয়ে দেবার জনয় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ২৪ ঘণ্টা সময় নির্ধারন করে দেয়। মাইক পেন্স ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইতিবাচক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে গতকাল ১৩ই ডিসেম্বর দীর্ঘ বিতর্কের পর ২৩২/১৯৭ ভোটে তাকে অভিশংসিত ঘোষণা করে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কংগ্রেসের কার্য্যক্রমে বাঁধা প্রদানের অভিযোগে ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রথম অভিশংসিত করা হয়েছিল।