সামীর রূহাণী : শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব সমস্ত অনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে কাতারের কাছে কুটনৈতিক ভাবে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছে । কারণ কাতার সারা পৃথিবীতে চীন রাশিয়া জার্মানি লাক্সেমবার্গ আমেরিকা সুইজারল্যান্ড কে ছাড়িয়ে অর্থনৈতিক ভাবে একদম শীর্ষে অবস্থান করছে । কাতারে একেকজন মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ১ লাখ ২৯ হাজার মার্কিন ডলার । অন্যদিকে সৌদি আরবকে মধ্য প্রচ্যের নতুন গরীব রাষ্ট্র বলা যায় এখন । কারণ সৌদি রাজ পরিবারের বিলাসী জীবনযাপন সহ ইয়েমেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক মার্কেটে জ্বালানি তেলের বাজারে ধ্বস আর সর্বোচ্চ বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত সৌদি আরবকে মিডল ইস্টের নতুন গরীব রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেছে । তারা অর্থনৈতিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইসলামী রীতিনীতি সংস্কৃতির তোয়াক্কা না করে পশ্চিমা সভ্যতার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে কিন্তু তারপরেও করোনা মহামারী কারণে আশানুরূপ বৈদেশিক পর্যটন না আসায় সেই পরিকল্পনাও জলে ভেসে গেছে । তাই কাতারের অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের আলাদিনের চেরাগের সাহায্য নিয়ে তাদের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে । এক কথায় কাতারের কাধে ভর দিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কানানোর চেষ্টা মাত্র এছাড়া কিছু না । অথচ এই সৌদি আরব এতদিন আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার সাথে সন্ত্রাসবাদের ভিত্তিহীন সম্পৃক্ততার ইশ্যু সৃষ্টি করে কাতার কে মধ্য প্রাচ্যের বাদশাহ হওয়া থেকে থামানোর জন্য আরেকটা ইয়েমেন বানাতে চেয়েছিলো । কিন্তু কাতার আজ সৌদির সব ষড়যন্ত্র ধবংস করে দিয়ে ইরান তুরস্ক রাশিয়ার সহযোগিতায় মিডল ইস্টের নতুন বাদশাহ হয়ে দেখিয়ে দিয়েছে । আর কাতারের সাথে অর্থনৈতিক শক্তি সামরিক সক্ষমতা এবং রাজনৈতিক আধিপত্যের সামনে পরাস্ত হয়ে সবদিক থেকে সৌদি যখন পারছে না তখন তাদের পরম মিত্র রাষ্ট্র নর্থ আমেরিকা ও ইজরায়েলের মিডল ইস্টের অন্যতম প্রধান বন্ধু রাষ্ট্র কুয়েতের হাত ধরে কুটনৈতিক ভাবে সৌদির অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠাতে কথিত চুক্তির মাধ্যমে সমঝোতা করেছে । শত্রুতা করে যখন লাভ করতে পারছে না তখন বন্ধুত্ব সই । তবে মনে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব বা শত্রুতা বলে কিচ্ছু নেই । সব সময়ের সাথে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পরিবর্তনশীল । সামনে কাতার পৃথিবীর সবচাইতে বড়ো মেগা শো ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে যেখানে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের বিজনেস হবে । আর সৌদি আরব অযথা নিষেধাজ্ঞা আরোপ রেখে এই বিজনেস থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত রাখতে একদম চাচ্ছে না । বিশ্ব পরবর্তী কাতারের বিরুদ্ধে সৌদির রাজনৈতিক সমীকরণ কি হতে যাচ্ছে সেটা না হয় সময়ই বলে দেবে । কিন্তু সৌদি আরব যদি কাতারকে আরেকটা ইয়েমেন ভেবে থাকে তাহলে নিশ্চিত চরম ভুল করবে । যে ভুলের মাসুল হিসাবে ইরান তুরস্ক আর কাতারকে তখন একসাথে সামলাতে হবে । আর তুরস্ক ইরান আসলে তাদের সাথে রাশিয়া এবং চীন আসার জন্য বসে আছে ।