বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস আজ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এ নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধনে ব্যাপক প্রস্তুতি থাকলেও বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অনুষ্ঠানের পরিসর সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। মুজিব বর্ষের সূচনার অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী আতশবাজি, আলোকসজ্জা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আতশবাজির মূল অনুষ্ঠান হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও হাতিরঝিলে। এরপর অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে তত্কালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ও পরবর্তী সময়ে ১১ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন।
তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তত্কালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু, যা ইউনেস্কোর ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
২৫ মার্চ মধ্যরাতে (২৬ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম। সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদের জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন।
মুজিব বর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে বিভিন্ন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জনসমাগম এড়িয়ে সফলভাবে দিনটি পালনে কেন্দ্রীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন দলের ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। কেন্দ্রীয় উদ্যোগে রাজধানীর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আতশবাজির আয়োজন করা হয়েছে। একই সময়ে একযোগে দেশের সব ইউনিট কার্যালয়ে আতশবাজি অনুষ্ঠানের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায়ও থাকছেও বিভিন্ন আয়োজন।
দলীয় অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৬টায় দেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মিলাদ মাহফিল ও স্বল্প পরিসরে শিশু সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি। এর পাশাপাশি গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। বাদ জোহর দেশের সব মসজিদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে।
