ভালোবাসা দিবসের নামে নোংরামি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন

এ,কে,আজাদ – আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস | এ দিনটিকে বিশেষভাবে উপভোগ করতে প্রেমিক প্রেমিকাদের নানা প্লান প্রোগ্রামের শেষ নেই | কেউ কেউ প্রেমিকা নিয়ে নির্জন পথে লং ড্রাইভে , কেউ কেউ চন্দ্রিমা উদ্যানের মত কোন পার্কের কোণে কিংবা কেউ আবার সুসজ্জিত হোটেল রুমে ভালবাসা দিবস পালনে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে | অথচ বাংলাদেশের বেশীরভাগ প্রেমিক প্রেমিকাই ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি ইতিহাস সম্পর্কে জানে না | না জেনে অজ্ঞের মত তারা এই দিনটিকে বেছে নেয় ভোগ আর নস্টামি করতে | তবে ভালবাসা দিবসের ইতিহাস জানার পরও তারা এ দিনে নস্টামি বন্ধ করবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে | কারণ আধুনিক প্রেমিক প্রেমিকাদের তো নস্টামি করতে শুধু দরকার বিশেষ বিশেষ দিনের অজুহাত | তা সে ১৬ই ডিসেম্বরই হোক কিংবা ১৪ই ফেব্রুয়ারি |
ইতিহাস চেতনা কোন বিষয় না |

ভালবাসা দিবসের ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত) :

২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃষ্টান ধর্মযাজক ও চিকিৎসক ছিলেন | ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাটদ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন | কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল | বন্দী অবস্থায় তার পরিচয় হয় জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়ের সাথে | সে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন মেয়েটিকে এবং পরবর্তীতে মেয়েটির সাথে তার প্রেম সম্পর্ক গড়ে ওঠে | কিন্তু সম্রাট এ গোপন প্রেমের বিষয়টি জানতে পেরে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের প্রতি আরও রাগান্বিত হন এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন | সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল | অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন যা আমাদের কাছে আজকের বিশ্ব ভালবাসা দিবস নামে পরিচিত |
আজকের ভালবাসা দিবস সেদিনের চেতনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন | ইতিহাসে দেখা যায় একজনকে ভালবেসে জীবন হারাতে আর বাংলাদেশে দেখা যায় প্রেমিকাগণের সতীত্ব হারাতে | এই ভালবাসা দিবসেই সবথেকে রেকর্ডতুল্য নোংরামি হয় বাংলাদেশে | যে সকল ভোগী প্রেমিকগণ নানা বাধার কারণে প্রেমিকার সাথে নস্টামির সুযোগ পায় নি , তারা সফল হয় এই দিনের অজুহাতে | ভালবাসা দিবসের আগে কয়েকটি দিন যুক্ত হয়েছে রোজ ডে , প্রোপোজ ডে , চকলেট ডে ,টেডি ডে , প্রমিজ ডে , হাগ ডে , কিস ডে | একটু লক্ষ্য করে দেখুন দিনগুলোর নাম একটি ধারায় আস্তে আস্তে কোন দিকে যাচ্ছে | এসবই আধুনিক প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে একই সুতোয় বাধা কিছু নোংরামির দিন | স্মার্ট প্রেমিক রোজ ডে তে গোলাপ দিবে , প্রোপোজ ডে তে ভালবাসা জ্ঞাপন করবে , চকলেট ও টেডি ডে তে এগুলো দিয়ে কিছু ইনভেস্টমেন্ট , তারপর পাশে থাকার মিথ্যা প্রতিশ্রুতির প্রমিজ ডে , অতঃপর প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরার কিংবা চুম্বনের লাইসেন্সপ্রাপ্ত দিন হাগ ডে ও কিস ডে | সবশেষে লাস্ট ডে তে কি হয় তা আর নিশ্চই পুনরায় বলতে হবে না |
আমার যদি সাধ্য থাকত তো এতগুলি দিনের সাথে শেষে আর একটি দিন যুক্ত করতাম ব্রেকাপ ডে | কারণ সহজ বিষয় যে ভোগী প্রেমিক প্রেমিকার সাথে বিয়ের পূর্বেই এরূপ ভালবাসা দিবস পালন করবে , সে আর তাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা করবে না | সুতরাং ব্রেকাপ নিশ্চিত | আর কিস হাগ সবই যেহেতু একই সিরিয়ালে আছে তো ব্রেকাপটাও সিরিয়ালে রাখলে খুব একটা বেশী সমস্যা হবে লিস্ট বড় হবে বলে মনে হয় না |
এই দিবসটি বাংলাদেশে পালিত হয় নব্বই এর দশকের শেষের দিকে। প্রথমে শহরগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলে ও এখন এর প্রসার ঘটেছে গ্রামে গঞ্জে পাড়া মহল্লায়। এই দিবসটিতে স্কুল, কলেজ, পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরা প্রেম বিনিময়ের নামে অবাধ মেলামেশা আর যেসব কর্মকান্ড করে তা কোন সভ্য মানুষ সমর্থন করতে পারে না।

Image result for ভালোবাসা দিবসের নোংরামি
ভালবাসা দিবসে নোংরামীর চিত্র

আর গুলশান, বারিধারায় কি সব আজে বাজে ঘটনা ঘটে তা ১৫ই ফেব্রুয়ারির পত্রিকা ও টিভি নিউজ দেখলেই বুঝা যায়। এই দিবসটি যদি এভাবে পালন হতে থাকে তবে অদুর ভবিষ্যতে আমাদের আগামী প্রজন্মের চরিত্র কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে দেখার সময় হয়েছে। এখন থেকেই এর একটি ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন।

পরিশেষে বলব ভালবাসা মানবতার জন্য একটি সর্বজননী শব্দ। এর জন্য বিশেষ কোন দিবসের প্রয়োজন হয় না। ভালবাসা শুধু তরুণ
তরুণী, আর কিশোর কিশোরীদের অবাধ মেলামেশার নাম নয়। আমাদের ভালবাসা হোক মানবতার জন্য
স্রষ্টা আর স্রষ্টার সকল সৃষ্টির জন্য। সকল প্রেমিকাদের প্রতি অনুরোধ রইল সচেতন হওয়ার | আপনাকে যে ভালবাসে , তার এ সকল দিনগুলোকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে হবে না | এই দিনগুলিতে আপনি তার থেকে বহু দূরে থাকলেও ভালবাসা থাকবে অটুট | তার কোন চাহিদা বা এরূপ আবদার থাকবে না | আর যদি দেখেন এ দিনেই সে আপনাকে নোংরামির আবদার জানাচ্ছে , তো মনে রাখবেন আপনি তার কথামত ভালবাসার প্রমাণ দিতে নোংরামির ভালবাসা দিবস পালন করলে আপনাকে একসময় ব্রেকাপ দিবসও পালন করতে হবে নিশ্চিত |
তবে এবছর সবথেকে অবাক লাগছে ফেসবুকের একটি ইভেন্ট দেখে | (ইভেন্ট লিংক- https://www.facebook.com/events/164332710611646 )

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি প্রহরায় প্রকাশ্যে এবার নাকি কিস ডে পালন করা হয়েছে | একটি মুসলিম দেশে এমন একটি কাজ প্রকাশ্যে তাও আবার পুলিশি প্রহরায় শুনেই যেন বারবার জ্ঞান হারাচ্ছি | আসলে বাংলাদেশ বর্তমানে এক অঘোষিত ফ্রি সেক্স কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে | আর এভাবে চলতে থাকলে সেদিন বেশী দূরে নয় যখন অনুমোদনও হয়ে যাবে |


জানেন , খুব কষ্ট হয় যখন ভালবাসা দিবসের এসব কর্মকাণ্ডের কথা মনে করি | ভালবাসা শব্দটি কতই না পবিত্র যে বহু ধর্মীয় গ্রন্থে এসেছে | মা বাবা ছোটবেলা থেকে কষ্ট করে সন্তানকে মানুষ করে এই ভালবাসার খাতিরে | মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করতে পারে এ ভালোবাসার জন্যে | সৃষ্টিকর্তার আরাধনা হয় ভালবাসা দিয়ে | অথচ এই ভালবাসা শব্দটি যখন ব্যবহার করা হয় নোংরা ভোগের জন্য , ভেতরের মানুষটা যেন ডুকরে কেদে উঠে |
সবার প্রতি একটাই অনুরোধ , ভোগের জন্য অন্য কোন নাম ব্যবহার করুন , ভালবাসার মত পবিত্র নামটি দয়া করে কুলষিত করবেন না |

SHARE THIS ARTICLE