ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদারঃ কোভিড মহামারী থেকে বিশ্ব সভ্যতাকে সুরক্ষা দেবার জন্য টিকা অন্যতম পন্থা। টিকাই এনে দিতে পারে মহামারীর দ্রুত পরিসমাপ্তি। এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফল প্রতিষেধক টিকা কার্য্যক্রম পরিচালনা করছে যে দেশ, সেই দেশটির নাম ইসরায়েল। বিশ্বের অন্যান্য দেশ এই পর্য্যায়ে আসতে আরও কয়েক মাস কিংবা বছরও লেগে যেতে পারে।
নব্বই লক্ষ মানুষের দেশ ইসরায়েলে ইতিমধ্যে ৮ লক্ষ ৩৪ হাজার ২০৬ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬,২৪০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। কোভিডের টিকা বাজারে আসার পর ইসরায়েল দ্রুততম সময়ে বিশ্ব বাজার থেকে টিকা কিনে নিয়ে জনসাধারনকে টিকা দেয়া শুরু করে এবং ইতিমধ্যে দেশটি তাদের দেশের অর্ধেকেরও বেশি উপযুক্ত জনসাধারণকে টিকার দুই ডোজ দেয়া সম্পন্ন করেছে এবং এর ফলশ্রুতিতে কোভিড সংক্রমণের হার ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। সংক্রমণ হ্রাস পেতে থাকার ফলশ্রুতিতে দেশটির দৈনন্দিন জীবন প্রায় প্রাক-মহামারী পরিস্থিতিতে ফিরে এসেছে বলে জানা গিয়েছে।
(ইসরায়েল টিকা দেয়া সম্পন্ন করার গ্রাফ আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা থেকে নেয়া)
এই বছরের শুরুর দিকে জানুয়ারী মাসে, দেশের কোভিড-১৯ এর তৃতীয় এবং সবচেয়ে তীব্র তরঙ্গের সময়, এক পর্যায়ে প্রতিদিন ১০,০০০ নূতন সংক্রমণ হয়েছিলো। সফল টিকা কার্য্যক্রম পরিচালনার ফলশ্রুতিতে দ্রুত প্রতিদিনের সংক্রমণের পরিসংখ্যান হ্রাস পেতে থাকে এবং গত শনিবার একদিনে নূতন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৩৬৪ জন যদিও কাল রোববার একদিনে নূতন সংক্রমণের সংখ্যা আরও কমে গিয়ে ১৩৬ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।
(ইসরায়েলের প্রতিদিনের সংক্রমণের গ্রাফ আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা থেকে নেয়া)
ইসরায়েলে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। জানুয়ারি মাসে এক পর্য্যায়ে প্রতিদিনের মৃত্যুর সংখ্যা ৯০-১০০ পর্য্যন্ত পৌঁছেছিলো, যা দ্রুত হ্রাস পেয়ে গতকাল একদিনে ৪ জনে নেমে এসেছে, এর আগের কয়েকদিন দিন মৃত্যুর এই সংখ্যা ১১- ১৬ পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
(ইসরায়েলের প্রতিদিনের মৃত্যুর পরিসংখ্যান আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা থেকে নেয়া)
ইসরায়েল তার দেশের মানুষকে সর্বাত্নক টিকা কার্য্যক্রমে সংযুক্ত করলেও তাদের সামরিক নিয়ন্ত্রণে থাকা লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনবাসিকে টিকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর এই নেতিবাচক সিদ্ধান্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখোমুখি হয়েছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে ইসরায়েল সরকার মাত্র কয়েক হাজার টিকা অনুদান দিতে সম্মত হয়েছিল। তবে নিয়মিত কাজের জন্য যে সকল ফিলিস্তিনবাসি ইসরায়েল ও ইহুদি জনবসতিগুলিতে প্রবেশ করে এমন এক লক্ষ ফিলিস্তিনি শ্রমিককে টিকা দেওয়ার একটি কর্মসূচিও তারা সম্পন্ন করেছে। পশ্চিম তীর এবং গাজার ফিলিস্তিনিরা আরও সপ্তাহ বা মাস কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে অতিক্রম করতে বাধ্য এবং তুলনামূলকভাবে উচ্চ সংক্রমণের হার অব্যাহত থাকবে সেটা অনুমান করা যায়। প্যালেস্টাইনের অধিবাসীদের টিকার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগের উপর নির্ভর করা ছাড়া তাদের আর কোন গত্যন্তর নেই।
ইসরায়েল মূলতঃ ফাইজার বায়োনটেকের টিকা ব্যাবহার করেছে যদিও তাদের কাছে মডার্নার টিকাও রয়েছে। যতটুকু জানা যায় তারা এখনো মোডার্নার টীকা ব্যাবহার শুরু করেনি।
সূত্রঃ লিখক মূলতঃ বিশ্ব স্বাথ্য সংস্থা, আওয়ার ডাটা ইন ওয়ার্ল্ড এবং ওয়ার্ল্ডোমিটারের সহায়তা নিয়ে এই রচনা লিখেছেন।