অভিবাসীদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অর্জন আরো কঠোরতর হচ্ছে

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর পাশাপাশি বৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রেও কঠোর শর্তারোপ ক‌রতে যাচ্ছে না ব্রিটেন।এরই মধ্যে ইংলিশ চ্যানেলজুড়ে ছোট নৌকায় আগত অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে আইনে সংশোধন আনা হয়েছে। এর ফলে ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে এসে পৌঁছালে তাকে আশ্রয়ের দাবি থেকে বিরত রাখা হবে৷ তাদের নিজের দেশে বা তথাকথিত নিরাপদ তৃতীয় দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

এবার বৈধভাবে ব্রিটেনে যাওয়া অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন থেকে অভিবাসীদের ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেতে আগের চেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে নাগ‌রিক‌ত্বের আগে স্থায়ীভা‌বে বসবা‌সের অনুম‌তি বা ইন‌ডিফি‌নিট লিভ টু রি‌মেইনের আবেদনের জন্য টানা পাঁচ বছর নি‌র্দিষ্ট ভিসায় ব্রিটে‌নে বসবা‌সের নিয়ম প্রযোজ‌্য ছিল। কিন্তু এ সময়সীমা পাঁচ থে‌কে বা‌ড়ি‌য়ে আট বছর করার প‌রিকল্পনা কর‌ছে দেশ‌টির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা হোম অফিস।

বড় প‌রিবর্তনগুলোর ম‌ধ্যে র‌য়ে‌ছে, আবেদনকারীকে ব্রিটেনে ন্যূনতম দুই বছ‌রের কা‌জ অথবা লেখাপড়ার প্রমাণ দিতে হবে। একই সঙ্গে আবেদনকারী আবেদনের আগের দশ বছর কোন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হ‌লে তি‌নি স্থায়ী বসবা‌সের জন‌্য যোগ‌্যতা হারা‌বেন।

নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে প্রায় আড়াই লাখ ব্রিটিশ বাংলাদেশি

এছাড়া বর্তমা‌নে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী‌দের স্থায়ীভাবে বসবাসের ক্ষেত্রে ব্রিটে‌নের জীবনধারার ওপর পরীক্ষা প্রয়োজন হতো না। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে তাদের জন্যও ‘লাইফ ইন দ্য ইউকে’ পরীক্ষার বিধান রাখা হ‌চ্ছে।

এদিকে গত সপ্তা‌হে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইউরোপীয় নেতা‌দের সঙ্গে বৈঠ‌কে ব‌লে‌ছি‌লেন, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা তার মূল লক্ষ্যগুলোর এক‌টি। এরপর এই কড়াক‌ড়ি আরোপের প্রস্ত‌াবের বিষয়টি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম উঠে এসেছে।

ব্রিটে‌নের রাজ‌নৈ‌তিক বি‌শ্লেষকরা বল‌ছেন, আগামী বছর অনুষ্ঠেয় ব্রিটে‌নের সাধারণ নির্বাচন‌কে সাম‌নে রে‌খে অভিবাসন-বি‌রোধী ব্রিটিশ ভোটার‌দের নিজের দল কনজার‌ভে‌টিভ পা‌র্টির প‌ক্ষে টান‌তে এমন নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব নি‌য়ে‌ছেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক।

ব্রিটিশ সরকা‌রের একজন মুখপাত্র ব‌লে‌ছেন, ব্রিটিশ নাগ‌রিক হওয়া এক‌টি মর্যাদা, কোনও অধিকার নয়। যারা এই মর্যাদার অধিকারী হ‌বেন তা‌দের ব্রিটে‌নের জন্য অবদান রাখা আবশ্যক।

ব্রিটে‌নে বসবাস ও নাগ‌রিক‌ত্বের ক্ষে‌ত্রে প্রস্তা‌বিত বড় ধর‌নের পরিবর্তনের বিষয়ে লন্ডনের লেক্সপার্ট সলিসিটর্সের ব্যারিস্টার শুভাগত দে বলেন, দে‌শে দে‌শে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে যে প্রক্রিয়া চলমান ছিল ব্রিটে‌নের ক্ষে‌ত্রে ব্রেক্সিট, ক‌রোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈ‌তিক ও রাজনৈ‌তিক প‌টপ‌রিবর্তনের পর তা নতুন ক‌রে গতি পে‌য়ে‌ছে। সরকার চাইছে নতুন ক‌রে যারা দেশ‌টি‌তে স্থায়ী বসবাস ও নাগ‌রিক‌ত্বের সু‌যোগ পা‌বেন তারা যেন সরকা‌রের বাড়‌তি বোঝার কারণ না হন। অর্থনৈ‌তিক ও সামা‌জিক ক্ষে‌ত্রে তারা যেন ব্রিটে‌নের জন‌্য অবদান রাখ‌তে পা‌রেন।

এর আগে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অভিবাসন নীতিতেও কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে যাচ্ছে ব্রিটেন।  নতুন অভিবাসন নীতিতে  শিক্ষার্থীদের পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনও বিদেশি  শিক্ষার্থী এখন থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ব্রিটেনে যেতে পারবেন না। অভিবাসীদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে  এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্রিটেনে অভিবাসন নীতি সবসময়ই  রাজনীতিতে একটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়। সরকারি দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নেট মাইগ্রেশন প্রতিবছর ১ লাখের নীচে রাখবে। কিন্ত বারবার ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৯ সালে সেই লক্ষমাত্রা তারা বাতিল করে দেয়।

SHARE THIS ARTICLE