লেখক- রহমান ফাহমিদাঃ(১ম পর্ব) TO-LET, TO-LET & TO-LET – মাথাটা ভোঁভোঁ করে ঘুরছে! আর কত বাসা দেখতে হবে? মনে মনে ভাবছে অপূর্ব। যেখানেই যাচ্ছে বাসা ভাড়া চাইতে,সেখানেই নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে যেমন- কি কর বাবা? একা থাকবা? তোমার কে কে আছে? বিয়ে করছো? আমাদের বাসাটা তো অনেক বড় তাই ফ্যামিলির জন্য ভাড়া হবে ইত্যাদি ইত্যাদি নানান প্রশ্ন।কেউ কেউ আবার তাদের বাড়িতে কলেজ-ভার্সিটিতে পড়া মেয়ে আছে,তাই ভাড়া দেওয়া যাবেনা বলে বিদায় করেছে। মানে এক্কেবারে সরাসরি চরিত্র নিয়ে অপবাদ! মাথাটাই খারাপ হবার যোগাড়। একটু দূরে একটি টোঙ দোকান দেখতে পেয়ে অপূর্ব সেদিকে গেল। দোকানির কাছ থেকে এক প্যাকেট Benson সিগারেট কিনল আর একটি মিনারেল ওয়াটারের বোতল কিনে ঢকঢক করে পানি পান করল। দোকানিকে চায়ের কথা বলে,কাঠের বেঞ্চে বসে একটি সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে লাগলো নিজের বাড়ির কথা!
অপূর্ব বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে।তার ছোট একটি বোন আছে। অপূর্ব দেখতে সুদর্শন বলতে যা বুঝায় ঠিক তাই। প্রায় ছয় ফুট লম্বা,মুখমন্ডল লম্বাটে ধরনের এবং সেই মুখমন্ডলে রয়েছে টানাটানা বুদ্ধিদীপ্ত দুটি চোখ। তার চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করা ঘাড় পর্যন্ত নামানো এবং গায়ের রঙ শ্যামলা। সে অনেকটাই Fashionable টাইপের ছেলে। যে কোন কাপড় পড়লে তাঁকে মানিয়ে যায়,যেমন-পাঞ্জাবি, টিশার্ট, ট্রাউজার ইত্যাদি।দেহের গঠন সুঠাম যেহেতু সে ব্যায়াম করে।
রাজশাহীর এক বনেদী পরিবারে অপূর্বর জন্ম। বাবা ব্যবসায়ি তাই ব্যবসার কাজেই বেশী ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁকে। মা তাঁর নিপুন হাতে সংসারের সকল কিছু সামাল দেন। ছোট বোনটিকে স্কুল থেকে আনা নেওয়া মা নিজেই করে। অপূর্বর সাথে মিলিয়ে বোনটির নাম রাখা হয়েছে অপি। অপি অপূর্বর থেকে প্রায় ৯/১০ বছরের ছোট। সে অপূর্বর বড় ভক্ত।অপূর্ব অসম্ভব আদর করে বোনটিকে এবং ওর সব আবদার পূরণ করার চেষ্টা করে ফলে অপূর্ব যতক্ষণ বাড়িতে থাকে ছোট বোনটি সারাক্ষণ ওর পাশেই থাকে আর নানান রকম আবদার করতে থাকে।সেই সাথে সারাক্ষণ চলতে থাকে নালিশ,বন্ধুদের নামে এমনকি ওর আদরের বিড়াল মিনিও বাদ যায়না সেই নালিশ থেকে।
অপূর্বকে কমার্স নিয়ে পড়তে হয়েছে কারণ অপূর্বর বাবার ইচ্ছা অপূর্ব লেখাপড়া শেষ করে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করবে। তাই রাজশাহীর একটি গভঃকলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে কয়েকজন বন্ধুর সাথে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মার্কেটিং-এ ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকে যায়। ফলে ঢাকায় থাকা অপূর্বর খুব জরুরী হয়ে পড়ে। কিন্তু ঢাকায় তেমন কোন আত্মীয়-স্বজন না থাকায় হল-ই সম্বল! তবে হলে সিট পাওয়া আর আকাশের চাঁদ পাওয়া একই কথা। অন্যান্য বন্ধুবান্ধব ওদের আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে সাময়িকভাবে, হলে সিট পেলে সবাই হলে চলে যাবে। অপূর্ব দুদিন হল এক বন্ধুর সাথে আছে,এই ফাঁকে এক রুমের একটি বাসা খুঁজছে কারণ ওর মেসে থাকা পোষাবেনা! যেহেতু ওর কিছু নিজস্ব ব্যাপার আছে, যেমন-সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করা, কবিতা লিখা এবং মাঝেমাঝে ছবি আঁকা। তাই একটু নিরিবিলি জায়গা দরকার। অন্যের বাড়িতে থাকতে ওর আর ভালো লাগছেনা তাই হন্যে হয়ে বাসা খুঁজছে। যেমন করেই হোক আজকালকের মধ্যে বাসা খুঁজে বের করতে হবে।
যদিও বাবা অপূর্বকে বলেছিল, তুমি তো রাজশাহীতেই পড়তে পারো। কিন্ত অপূর্ব বাবাকে বুঝিয়ে বলেছে তা সম্ভব না। কারণ ছোটবেলা থেকেই অপূর্বর খুব ইচ্ছে ঢাকার ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। তাছাড়া সাহেদসহ ওর আরও বন্ধুবান্ধব অনেকেই ওখানে ভর্তি হবে। অপূর্ব বলে বাবা,তুমি আমাকে নিষেধ করনা? ওর বাবা দেখল অপূর্বর কথায় রাজী না হলে এই বয়সের ছেলেরা অভিমানে কিছু একটা করে বসে। ফলে তার আর রাজী না হয়ে উপায় রইলনা। অতএব কি আর করা,বাবা অপূর্বর কথাই মেনে নিলেন। কিন্ত মা বারবার বলছিল,দ্যাখ না বাবা যদি সম্ভব হয়! কারণ মা তাকে একা একা ঢাকায় থাকতে দিতে চাইছিলেন না। ছেলেটা ওখানে একা একা কি খাবে? কি করবে? কোথায় ঘুমাবে? নানান চিন্তা তার মনে। মা তাকে তাঁর আঁচলের তলেই রাখতে চেয়েছিল। অপূর্ব ভাবছে রাজশাহীর সুখের দিনগুলোর কথা! কত নিশ্চিন্তে দিন কাটিয়েছে আর এখন ভবিষ্যতের কথা এবং নিজের সখের কথা চিন্তা করে ঢাকায় এসে, নতুন করে থাকা খাওয়ার চিন্তা করতে হচ্ছে। দোকানের পিচ্চি ছেলেটির ডাকে অপূর্ব ফিরে আসলো বর্তমানে,দেখল পিচ্চি চা হাতে দাড়িয়ে আছে।
পিচ্চি বল্ল-ভাইজান বিস্কুট খাইবেন? পিচ্চিকে দেখে অপূর্বর খুব মায়া হল।
অপূর্ব বলল,নারে, তুই খা আমি টাকা দিয়ে দিব। তারপর অপূর্ব দোকানিকে বলল, মামা পিচ্চিকে বিস্কিট দেন, আমি টাকা দিয়ে দিব।
অপূর্ব চা শেষ করে উঠে দোকানিকে বিল দিয়ে রিক্সার খোঁজে এদিকওদিক তাকাতে লাগলো।কিন্ত কোন রিক্সা দেখলনা তাই হাঁটা শুরু করলো,যা রোদ উঠেছে। সাহেদ ওকে টিএসিতে যেতে বলেছে তারপর ওখান থেকে একসাথেই সাহেদের খালার বাসায় যাবে। কারণ ওরা দুজন আপাতত সাহেদের খালার বাসায় উঠেছে। সাহেদের খালু অপূর্বর বাবার বন্ধুও।সাহেদের খালাখালু একাই থাকে।তাদের ছেলে দেশের বাইরে লন্ডনে থাকে।খালা খালুকে সাথে করে নিয়ে যেতে চায় কিন্ত তারা দেশ ছেড়ে কথায়ও যাবেনা। তবে মাঝেমাঝে বেড়াতে যায় ছেলের কাছে। সাহেদ হলো অপূর্বর ছোটবেলার বন্ধু। একসাথেই পড়ালেখা করেছে এবং একই সাথে দুজনে ঢাকা ভার্সিটিতে Chance পেয়েছে। অপূর্ব হঠাৎ একটি রিক্সা দেখতে পেয়ে চিৎকার করে ডাক দিল। রিক্সাওয়ালা কাছে এসে বলল, কই যাইবেন?
অপূর্ব বলল,টিএসি।
১০০ ট্যাকা ভাড়া।
এত কেন? ৬০ টাকা ভাড়া!
না,অনেক রঈদ আইজকা।
ঠিক আছে, ৮০ টাকা দিব বলে রিক্সায় চড়ে বসলো।
অপূর্ব কখনোই রিক্সাওয়ালাদের ঠকায় না,কারণ ওরা কষ্ট করে কামাই করে কিন্ত যারা হাত পেতে ভিক্ষা করে,অপূর্ব তাদের ভিক্ষা দেয় না।কেননা হাতপেতে ভিক্ষা নেওয়া অপূর্ব পচ্ছন্দ করেনা।তবে যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তাদের সাহায্য করে।ওদের রিক্সা টিএসিতে আসার পর অপূর্ব ভাড়া মিটিয়ে এদিকওদিক চাওয়ার সাথেসাথেই সাহেদের ডাক শুনতে পেল।
সাহেদ ডাকছে, এই অপূর্ব, আমরা এদিকে। অপূর্ব দেখে সাহেদের সাথে আরও দুজন বসে আছে। অপূর্ব ওদের কাছে গেলে সাহেদ বলল, আয় পরিচয় করিয়ে দেই।
সাহেদ একজনকে দেখিয়ে বলল,ও দিদার আমাদেরই ব্যাচের মার্কেটিং এ আছে। এখন হলে থাকে সাময়িকভাবে একজনের সাথে সিট শেয়ার করে। অপূর্ব দিদারের সাথে হ্যান্ড সেক করল।
আরেকজন হাসিখুশি মুখে এগিয়ে এসে বল্ল, আমি ইকবাল। আর্ট কলেজে ভর্তি হয়েছি। এখানে এক খালার বাসায় উঠেছি। অপূর্ব ইকবালের সাথেও হ্যান্ড সেক করল। ওদের পরিচয়ের পালা শেষ হলে সাহেদ অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলে, তারপর কোন ব্যবস্হা করতে পারলি?
নারে, ব্যাচেলরদের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায়না। বাসা ভাড়ার নোটিশ ঝুলানো আছে অনেক কিন্তু! চিন্তা করিস না।ব্যবস্হা একটা হয়ে যাবে।
হলেই বাঁচি!
ওরা চারজনে মিলে চা সিঙ্গারা খেতে খেতে গল্প করল। অপূর্ব ওদের দুজনের সাথে কথা বলে জানলো যে, দিদার এসেছে ময়মনসিংহ থেকে ওর দুটি যমজ ভাই ওখানেই একটি স্কুলে পড়ে। আর ওর বাবা কাপড়ের ব্যবসা করে। ইকবাল এসেছে সাভার থেকে। ইকবালের বাবা নেই,মা আছেন। মা ইকবালের ছোট দুটি ভাইবোন নিয়ে দাদার বাড়িতেই আছেন। ওদের পরিবার যৌথ পরিবার তাই চাচারাই ওদের দেখাশুনা করেন। তবে ইকবালকে দেখে বুঝা যায়না, ওর ভেতরে এত কষ্ট!সারাক্ষণ দুষ্টুমি করছে। ওদের সাথে কথা বলে অপূর্ব একটি কথা উপলদ্ধি করল যে, ওদের সবার একটিই লক্ষ্য লেখাপড়া শেষ করে মানুষের মত মানুষ হয়ে বাবা মায়ের দুঃখ ঘোচাতে হবে। অপূর্বর কাছে নিজেকে ওদের চেয়ে অনেক সুখি মনে হল এই কারণে যে, ওদের মা বাবা,ভাইবোনের জন্য এখন থেকেই চিন্তা করতে হচ্ছে কিন্তু অপূর্বর তেমন কিছু চিন্তা করতে হচ্ছেনা। ওরা সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যার যার গন্তব্যে পা বাড়াল।
পরেরদিন নাস্তার টেবিলে সাহেদের খালা অপূর্বকে বলল,বাসা পেয়েছো বাবা?
না খালাম্মা, ব্যাচেলরদের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায়না।
তোমার এখানে খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছে কী?
ছিঃ কিযে বলেন খালাম্মা!অসুবিধা হবে কেন?
এবার সাহেদের খালু বল্লেন, তাহলে আর চিন্তা করছো কেন? আমরা বুড়োবুড়ি তো একাই থাকি,যতদিন ইচ্ছে থেকে যাও। তারপর না হয় ভাল একটা বাসা পেলে চলে যেও।
অপূর্ব তো কিছু বলতে পারেনা খালুকে। কারণ ওর যে নিজের প্রাইভেসি দরকার। তাই মাথা নাড়িয়ে শুধু সম্মতি জানালো।
আজকে সারাটা দিন অপূর্ব আর তানভীর বাসায়ই ছিল। ওরা বিকেলে বাইরে যাওয়ার সময় সাহেদের খালার ড্রাইভার কালাম অপূর্বকে ডাক দিল, ভাইজান,আপনে নাকি বাসা খুঁজতাছেন ?
হ্যাঁ, তোমার জানা কোন বাসা আছে?
হ, আমার চাচাতো ভাই মোহাম্মদপুরের এক বাসার ড্রাইভার। সে আসছিল সকালে আমার সাথে দেখা করতে। তখন কইল ওর সাহেবের বাসায় ছাদের উপর একটি ঘর আছে। ওখানে ভাল একজন মানুষ পাইলে ভাড়া দিব। আপ্নে কইলে আমি আমার ভাইয়ের সাথে আলাপ করতে পারি।ও কালকে সকালে আবার আইব।
দেখ, আলাপ করে। হলে তো ভালোই হয়।
পরেরদিন অপূর্বের ঘুম ভাঙল অনেক দেরিতে কেন না গতকালকে ওদের বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। কারণ টিএসিতে কালকে একটা গানের Concert ছিল। অপূর্ব ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তা খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল এমন সময় কামাল এসে জানাল, ওর ভাই এসেছে। অপূর্বর সাথে কথা বলবে।অপূর্ব ডেকে আনতে বলল। কামাল ওর ভাইকে ডেকে নিয়ে আসলো। ওর ভাই বলল,ছাদের উপরে এক রুম,বাথরুম ও ছোট্ট একটি রান্নাঘর আছে এবং রুমের সামনে অনেক খোলামেলা জায়গা আছে। অপূর্ব যদি বাড়িওয়ালার সাথে দেখা করতে চায় তবে আগামীকাল শুক্রবার বিকেল চারটায় যেতে বলেছে।
অপূর্ব জানালো, সে যাবে। কামালের ভাই ঠিকানা লিখিত একটি কাগজ অপূর্বর হাতে দিয়ে বলল, সে রাস্তার মোড়ে অপূর্বর জন্য অপেক্ষা করবে তাহলে অপূর্বর বাসা খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না। অপূর্ব জানালো, ঠিক আছে। তারপর কামালের ভাই চলে গেল। অপূর্ব চিন্তা করতে লাগলো, এত জায়গায় ঘুরেছে বাসার জন্য এবার না হয় আরেকবার শেষ চেষ্টা করা যাক।
পরেরদিন অপূর্ব বের হওয়ার সময় তানভীর বলল, আমিও যাব তোর সাথে।
অপূর্ব বলল, তোর না খালাম্মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা!
সাহেদ জিভে কামড় দিয়ে বলল, তাইতো এক্কেবারে ভুলে গেছি। ঠিক আছে তুই যা, Best Of Luck.
অপূর্ব হেসে বেড়িয়ে গেল। রাস্তায় বের হয়ে অপূর্ব ভাবল, স্কুটার নিবে না কারণ এতবেশি দেরি হয়নি বরং রিক্সায় গেলে সবকিছু দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে। তাছাড়া রিক্সায় বাসা খুঁজে বের করতে সুবিধা হবে। তাই অপূর্ব একটি রিক্সা ডেকে রিক্সায় চড়ে বসলো। রিক্সাওয়ালা জানতে চাইল কোথায় যাবেন? অপূর্ব মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের কথা বলল। তারপর একটি সিগারেট ধরাল কারণ অপূর্ব খুব Tension এ পড়লেই সিগারেট ধরায়।
রিক্সাওয়ালা ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার দিয়ে যাওয়ার সময় অপূর্ব দেখল ওর ছোট বোন অপির বয়সী একটি মেয়ে বাবা মায়ের সাথে হাত ধরে যাচ্ছে। অপূর্বর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কতদিন বোনটাকে দেখে না। খুব কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। মোবাইলটা সাথেই আছে কিন্ত উপায় নেই, এখন কথা বললে বোনটি কান্নাকাটি শুরু করবে ওর মন আরও খারাপ হয়ে যাবে। যদি বাসাটা পেয়ে যায় তবে কিছুদিনের জন্য বাড়িতে গিয়ে ঘুরে আসবে কেননা ক্লাস শুরু হতে এখনো দেরি আছে। রিক্সাওয়ালার ডাকে ওর নানান রকম চিন্তার ব্যাঘাত ঘটলো।
রিক্সাওয়ালা বলল,মামা আর কতদুর যাইবেন? তাজমহল রোড তো আয়া পরছি।
অপূর্ব বলল, একটু দাড়াও। এই বলে অপূর্ব এদিকওদিক তাকিয়ে ড্রাইভার কামালের ভাইকে খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ করে কামালের ভাইয়ের ডাক শুনতে পেলো। ভাইজান, এদিকে। ও তাকিয়ে দেখল কামালের ভাই তার দিকেই এগিয়ে আসছে।
ওর কাছাকাছি এসে বলল, ভাইজান, রিক্সাভাড়া চুকাইয়া দেন। এইতো একটা বাসা পরই আমার সাহেবের বাড়ি।
অপূর্ব রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে কামালের ভাইকে বলল,তোমার নামটাই তো জানা হলো না।
কামালের ভাই বলল, আমার নাম কুদ্দুস।
অপূর্ব কামালের ভাইয়ের সাথে সাথে একটি সাদা রঙের এক ইউনিটের তিনতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। কুদ্দুস বলল, আসেন ভাইজান আসেন। সাহেব দুইতলায় থাকে। অপূর্ব দেখল বাড়িতে ঢোকার মেইন গেটের একপাশে বড় একটা কাঁঠালিচাঁপা গাছ। সাদা আর হলুদ রঙে মেশানো ফুলগুলি কয়েকটা মাটিতে পড়ে আছে। গেটের অন্যপাশে শিউলি ও হাসনাহেনার ফুলের গন্ধে বাড়িটা মউমউ করছে। ভেতরে কলাপসিবল গেট খুলে কুদ্দুস ওকে দোতালায় নিয়ে গেল। তারপর কলিংবেল বাজালে বাড়ির কাজের বুয়া দরজা খুলে দিল। কুদ্দুস বুয়াকে বলল, খালা,সাহেবকে যাইয়া বলেন মেহমান আইছে। বুয়া ঘাড় কাঁত করে আইচ্ছা বলে রুমের ভেতরে চলে গেল।
কুদ্দুস বলল, আসেন ভাইজান। সোফা দেখিয়ে বলল, এইখানে বসেন। অপূর্ব বসলো এবং রুমের চারপাশ দেখতে লাগলো। দেখল রুমটা বেশ বড়। ড্রয়িংরুমের সাথেই লাগানো ডাইনিং রুম। ছোট্ট একটা ঝাড়বাতি আছে দুই সিলিং ফ্যানের মাঝখানে। একপাশে বড় Flower vast তার মধ্যে রজনীগন্ধা ফুল। ড্রইংরুম ও ডাইনিং রুমের মাঝামাঝি একটা বড় এ্যাকুরিয়াম, তার মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখা যাচ্ছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই বাড়ির লোকজন খুব সৌখিন। যতগুলো বাড়িতে ও বাসা ভাড়ার জন্য গেছে সব বাসার ড্রইংরুমে কারো না কারো বড় করে বাঁধানো ছবি দেখেছে, ওদের বাসায়ও আছে ওর দাদার, বিশাল সাইজের একটি ছবি। কিন্ত এই বাসাটিতে তা দেখা গেলনা। রুমের চারিপাশ দেখতে দেখতেই সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পড়া রাশভারী এক ভদ্রলোক রুমে ঢুকলেন। ইনিই বাড়িওয়ালা। গেটে তাঁর নাম লেখা আছে মেহেরাজ খান। অপূর্ব সোফা থেকে উঠে সালাম দিলেন।
ভদ্রলোক বললেন,বস বস তোমাকে তুমি করেই বললাম, কেননা তুমি আমার ছেলের মতই।
অপূর্ব বলল, অবশ্যই আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন।
মিঃ খান অপূর্বর পাশের সোফায় গিয়ে বসলেন। কুদ্দুসকে ডেকে বললেন, তুমি এখন যাও পরে তোমাকে ডাকবো। আর শোন কেয়ারটেকারকে পাঠিয়ে দিও। কুদ্দুস বলল, জি আচ্ছা। তারপর অপূর্বর দিকে ফিরে বললেন, এবার বোলো তোমার নাম কি? তুমি কি কর এবং তোমার পরিবারের কথা।
আমার নাম আসিকুর হক চৌধুরী অপূর্ব। আমার বাবার নাম আতিকুল হক চৌধুরী। আমি এবার এইচএসসি পাশ করে ঢাকা ভার্সিটিতে মারকেটিং-এ ভর্তি হয়েছি। আমার বাবা মা এবং ছোট একটি বোন রাজশাহী থাকে। বাবা Import Export এর ব্যবসা করেন আর মা Housewife এবং ছোট বোনটি স্কুলে পড়ছে।
ঢাকায় তোমার কোন আত্মীয়স্বজন নেই?
না, তেমন কোন আত্মীয়স্বজন নেই। আমরা দাদার আমল থেকেই সবাই রাজশাহীতে বাস করছি। আমার নানার বাড়িও রাজশাহী। আমাদের বাড়িটি রাজশাহী শহরেই অবস্থিত। ভার্সিটির হলে সীট পাওয়া খুব দুস্কর তাই আপাতত আমার এক বন্ধুর খালার বাসায় আছি।
হুম্ম!বুঝলাম। কিন্ত আমি যে তোমাকে ভাড়া দিব,এখানে তো তোমার কেউ নেই। কাকে জানাবো কোন অসুবিধা হলে?
তা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না, আঙ্কেল।আমার বন্ধুর খালু সেনাবাহিনীর কর্নেল ছিলেন,আমাকে নিজের ছেলের মতই আদর করেন। তিনি আবার আমার বাবারও বন্ধু। ইস্কাটনে তাঁদের নিজেদের বাড়ি ,আপনি তাঁদের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন। আমি আমার মায়ের সাথেও কথা বলিয়ে দিব, বাবা এই মুহূর্তে Business-এর কাজে দেশের বাইরে আছেন।
তুমি আমাকে অনেকটা নিশ্চিন্ত করলে। আমি কোন ঝামেলায় যেতে চাইনা। বুঝো তো, সরকারি চাকরি করি। যদিও রিটায়ার্ডের সময় হয়ে গেছে তবুও অনেক কিছু হিসেব-নিকেশ করে চলতে হয়। কিন্ত তুমি কি আমার ছাদের রুমটি দেখেছো?
না, এখনো দেখিনি।
আগে দেখো যদি পছন্দ হয় তবে ভাড়ার ব্যাপারে এবং তোমার আত্মীয়স্বজনের সাথে আলাপ করা যাবে। এই বলে মিঃ খান কেয়ারটেকারকে ডাক দিয়ে বলল, তুমি ওকে ছাদের রুমটি দেখিয়ে নিয়ে আসো।অপূর্বকে বলল, তুমি ওর সাথে যাও। ও তোমাকে সবকিছু দেখিয়ে দিবে।অপূর্ব তাকিয়ে দেখল, কেয়ারটেকার লোকটি একটু বেটে ধরণের, গায়ের রঙ কাল, অনবরত পান খায় আর কথা বলে। তাই কথা বলার সময় লাল দাঁতগুলো বের হয়ে আসে। নাম হল ফরিদ আলী।
ফরিদ আলী বলল, আসেন ভাইজান আমার সাথে আসেন।
অপূর্ব ফরিদ আলীর সাথে ছাদে গেল। ছাদে গিয়ে যা দেখল তাতে ওর চোখ জুড়িয়ে গেলো। ও দেখল রুমটার সামনে অনেক খোলামেলা জায়গা। ছাদের চারিপাশে টব লাগানো এবং টবগুলোতে নানান রকম ফুল ফুটে আছে। পাতাবাহারেরও অনেক গাছ আছে। দেখে খুব ভাল লাগছে। ফরিদ আলী রুমটার তালা খুলতে খুলতে বলল, নিচতলায় সে নিজে থাকে পরিবার নিয়ে। তার একটি মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এখন সে আর তার স্ত্রী থাকে। দুইতলায় সাহেব ও বিবিসাহেব আর তার মেয়ে থাকে। তাদের একটি ছেলে বিদেশে চাকরি করে, বউ নিয়েই ওখানে থাকে। সে থাকে তিনতলায়। তাঁদের একটি তিন বছরের ছেলে আছে। তবে ছুটি পেলেই পরিবার নিয়ে দেশে চলে আসে। তাই তিনতালাটা তালা মারা। ফরিদ আলী তালা খুলে অপূর্বকে ডাক দিল, ভাইজান ভেতরে আসেন। অপূর্ব রুমের ভেতরে গিয়ে দেখল, ছিমছাম ছোট্ট একটি রুম।রুমের ভেতর একটি ছোট কিচেন ও বাথরুম। একজনের জন্য যথেষ্ট। মনে মনে ভাবল,যদি বাসাটি পায়,তাহলে ওর অনেক সুবিধা হত। কারণ খোলামেলা ছাদে ব্যায়াম করতে, কবিতা লিখতে এবং নিরিবিলি বসে ছবি আঁকতেও কোন অসুবিধা হত না।
এমন সময় ফরিদ আলী মজা করে বলল, ভাইজান বাসাটা পাইলে বিয়ে কইরা বউ নিয়াও থাকতে পারবেন, এই বলে হোহো করে হেসে উঠলো। অপূর্ব তাড়াতাড়ি করে ফরিদ আলীকে বলল, চলেন নিচে যাই। ফরিদ আলী বলল, আমাকে মামা কইয়া ডাইকেন। সাহেবের পোলামাইয়া আমারে মামা কইরাই ডাকে। অপূর্বর হঠাৎ মনে পড়লো!ছেলে বিদেশ থাকে বলেছে ফরিদ আলী কিন্ত মেয়ে আছে বলল,কিন্ত তাকে তো কোথায়ও দেখলনা!যাকগে। এত ইন্টারেস্ট দেখানো ঠিক হবেনা। আগে বাসাটা তো পাই তারপর সব জানা যাবে। ওরা নিচে নেমে আসলো।
খান সাহেব ওকে দেখে বলল, কেমন লাগলো রুমটি? পছন্দ হয়েছে?
অপূর্ব বলল, খুব পছন্দ হয়েছে।
এমন সময় হক সাহেবের স্ত্রী রুমে ঢুকলেন এবং বুয়াকে ডাক দিয়ে বললেন নাস্তা নিয়ে আসতে। তারপর হক সাহেবের পাশের সোফাটিতে বসেন। হক সাহেব অপূর্বর সাথে তাঁর স্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দিলে, অপূর্ব দাঁড়িয়ে সালাম জানান। কিছুক্ষণ পর ট্রেতে করে নানান রকম নাস্তা নিয়ে বুয়া রুমে ঢুকে। হক সাহেবের স্ত্রী বুয়াকে টেবিলে রাখতে বলে এবং অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলেন, নেও বাবা, আগে নাস্তা কর পরে বাকী কথা হবে। সে হক সাহেবের কাছ থেকে ইতিমধ্যে অপূর্বর সম্পর্কে সব কিছু শুনেছে। ছেলেটিকে দেখেও তার কাছে ভালই মনে হচ্ছে। অপূর্ব দেখল টেবিলে সাজানো নুডলস,মিষ্টি, বিস্কিট,কলা ও চা। অপূর্ব চা আর একটি বিস্কিট নিল।
খান সাহেবের স্ত্রী বললেন, মিষ্টি নিলেনা বাবা?
আন্টি, আর পারবোনা কারণ কিছুক্ষণ আগেই বিকেলের নাস্তা করে এসেছি,তাই…।এমন সময় বুয়া এসে খবর দিল ,কার যেন ফোন কল এসেছে । হক সাহেবের স্ত্রী অপূর্বকে বললেন, তুমি বস আমি আসছি।এইবলে উঠে ভেতরের রুমে চলে গেল।
খান সাহেব তাঁর স্ত্রীকে বললেন, তোমার কথা শেষ হলে ফোনটা নিয়ে এস। মিসেস খান ফোন নিয়ে আসালেন। খান সাহেব অপূর্বকে বললেন, ঢাকায় তোমার যে আত্মীয় আছেন তাঁর সাথে কথা বলিয়ে দিলেই হবে। মোবাইল নাম্বারটি দেও। অপূর্ব সাহেদের খালুর নাম্বার দিল। খান সাহেব সাহেদের খালুর সাথে কথা বললেন। খান সাহেব জানতে পারলেন যে, কর্নেল সাহেব নিজেই তাঁর বাসায় অপূর্বকে থাকতে বলেছিলেন কিন্ত অপূর্বর খুব আত্মসম্মান তাই তাদের ওখানে থাকতে চাইছেনা। খান সাহেব বুঝলেন,ছেলেটি সত্যি ভালো একটি ছেলে। তাই খান সাহেব অপূর্বর দিকে ফিরে বললেন, চল এবার ভাড়ার ব্যাপারে কথা বলা যাক। তারমানে তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে এবং আমি আমার রুমটা Finally তোমাকে ভাড়া দিচ্ছি।
বাসাভাড়া ৫০০০ টাকা পানির বিলসহ, বিদ্যুতের বিল অপূর্বকে দিতে হবে এবং একমাসের Advance.অপূর্ব রাজী হয়ে গেলো। খান সাহেব আরও বললেন, এখন মাসের ১২ তারিখ যেহেতু রুমটি খালি পড়ে আছে সেহেতু অপূর্ব ইচ্ছে করলেই ১৫ তারিখের মধ্যে চলে আসতে পারে। অপূর্ব খুশি হয়ে গেল খান সাহেবের কথায়। শেষ প্রজন্ত অপূর্ব বাসাটি পেল। খান সাহেব এবং আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে এল। নিচে এসেই কুদ্দুসের সাথে দেখা। কুদ্দুস আর দারোয়ান গল্প করছিল।
কুদ্দুস বলল, ভাইজান,বাসা পাইছেন?
অপূর্ব বলল, হুম!
আলহামদুলিল্লাহ!
অপূর্ব কুদ্দুসের হাতে ২০০ টাকা দিয়ে বলল, তোমার জন্যই বাসাটা পেলাম। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
কুদ্দুস বলল, ভাইজান,সবই আল্লাহ্র ইচ্ছা, আমিতো শুধুই উসিলা। ভাইজান, দাঁড়ান আমি আপনারে রিক্সা ঠিক কইরা দেই। এই বলে সে রিক্সা খুঁজতে চলে গেল।
অপূর্ব ইস্কাটনে সাহেদের খালার বাসায় ফিরে ওদের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিল একা। কারণ সাহেদ তখনো খালাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে আসেনি। খালুও যেন কোথায় গেছেন। তাই ক্যাসেট প্লেয়ারে গান ছেড়ে দিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছিল। কারণ বাসাভাড়া নিয়ে অনেক ধকল গেলো শরীরের ওপর দিয়ে। কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল। সাহেদের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেল।
সাহেদ বলল, কিরে, এই অবেলায় ঘুমাচ্ছিস? বাইরে যাবিনা? খালু বলল,তুই নাকি বাসা পেয়ে গেছিস?
অপূর্ব বলল, খালুজান কি করে জানল? আমার সাথে তো তাঁর এখনো দেখাই হয়নি!
আরে, তুই তোর বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলিয়ে দিইয়েছিস না, তাতেই বুঝছে। কর্নেল মানুষ তো সবকিছু আগেভাগেই বুঝে, এই বলে হাসতে লাগলো।তারপর বলল, কিন্ত খালাম্মার মন খারাপ হয়ে গেছে কথাটি শুনে তোর জন্য। এতদিন এখানে ছিলি!
অপূর্ব বলল, আমারও মন খারাপ হবে তাদের ছেড়ে যেতে! চল খালাম্মার সাথে দেখা করি। তারপর বাইরে যাব ঘুরতে।
খালাম্মার সাথে দেখা করে ওরা দুজন টিএসিতে গেল। ওখানে ইকবাল আর দিদার ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল। ইকবাল অপূর্বকে দেখে বলল, কি ব্রাদার, বাসা পেলে? অপূর্ব বলল, হ্যাঁ, পেয়েছি।
ইকবাল বলল, যাক, বেঁচে গেছো যে, বিয়ে করে যেতে বলে নাই এই বলে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। সবাই মিলে হেসে উঠলো।
দিদার অপূর্বকে ছাড়ল না। বলল, আমাদের খাওয়াতে হবে বন্ধু, খালি মুখে তো খুশীর খবর বদহজম হয়ে যাবে!দিদারের কথায় সবাই একসাথে অপূর্বকে খওয়ানোর জন্য ধরে বসলো। অতএব অপূর্ব সবাইকে শাহবাগের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যে যা খেতে চাইল তাইই খাওয়ালও। তারপর ওরা কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে যার যার জায়গায় চলে গেল।
এদিকে দুদিন চলে গেলো নতুন বাসায় উঠার জন্য কিছু জিনিষপত্র কিনতে কিনতে। অপূর্ব ঠিক করেছে খাট কিনবেনা Flooring করবে। তাই একটি ম্যাটরেস আর দুটি বালিশ ও আরেকটি কোলবালিশ কিনে নিল। সাথে আনুষঙ্গিক জিনিষপত্র যা লাগে সবই কিনল। আগামীকাল খুব ভোরে উঠতে হবে। খালাম্মা অবশ্য ড্রাইভার কালামকে বলে রেখেছে ভোরে আসতে। কারণ সকাল সকাল সবকিছু গোছগাছ করে যেতে হবে। কালকে শুক্রবারদিন তাই জুম্মার নামাজ পড়তে হবে মসজিদে গিয়ে।
সকালে খালাম্মা খালুজানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাহেদকে সাথে করে অপূর্ব তাজমহল রোডে এসে পৌঁছল। বাড়ীওয়ালা আন্টি, বুয়াকে পাঠিয়ে রুমটা পরিস্কার করে দিল। আজকে প্রথম দিন তাই সাহেদ ওর সাথে থাকবে। সারাদিন সব কিছু Setup করে দুজনে মিলে বাসার কাছে মসজিদে নামাজ পড়তে গেল। তারপর দুজনে মিলে একসাথে বাইরেই খাওয়াদাওয়া করে একবারে বাসায় এসে বিস্রাম নিয়ে বিকেলে আশেপাশের জায়গাগুলো দেখে আসছে। মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্পে গিয়ে শর্মা খেল। ওখানে অনেক মজার শর্মা পাওয়া যায়। অপূর্ব ও সাহেদ অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করে কাঁটালো। কারণ নতুন জায়গা তাই ঘুম আসছিল না।
এদিকে, বাড়িওয়ালা হক সাহেবের মেয়ে মধুমিতা খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল এবং কয়েকদিন থেকে আজকে রাতে বাসায় এসেছে। অনেক রাতে মধুমিতাকে ওর খালাতো ভাই ও তাঁর বউ নিজেদের গাড়িতে করে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে। রাতে আর বাবা মায়ের সাথে তেমন কোন কথা হয়নি। কারণ ওর খুব ঘুম আসছিল তাই ও নিজের ঘরে ঘুমাতে চলে গেল। মা অবশ্য বারবার জানতে চাইছিল, খালার বাসায় কেমন মজা করেছে? ও মাকে বলেছে সবকিছু সকালে বলবে,এখন ঘুমাবে। মধুমিতা নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়েই বিছানায় গিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল।
খুব সকালে মধুমিতা ঘুম ভাঙল। ওর প্রতিদিন অভ্যাস সকালে উঠে ছাদে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করা এবং ছাদের গাছগুলোর যত্ন নেয়া। আজকেও এর ব্যতিক্রম হলনা। সকালে উঠেই বাবা মায়ের রুমের দিকে তাকিয়ে দেখল নামাজ পড়ে ঘুমানোর পর বাবা মা এখনো উঠেনি। তাই ও তাদেরকে আর ডাকল না। ও ছাদে চলে গেল। মধুমিতা প্রথমে ওর গাছগুলোর কাছে গেল। কতদিন ও গাছগুলোর যত্ন নেয় না। ও দেখল খালার বাসায় যাওয়ার আগে ও নতুন যে গোলাপ আর বেলির চারাগুলো লাগিয়ে গিয়েছিল, সেগুলোতে ফুল এসেছে। ওর দেখে খুব ভাল লাগছে। মধুমিতা একটি বেলিফুল নিয়ে যেই না গন্ধ শুঁকতে গেল ঠিক সেই মুহূর্তে ওর কানে ভেসে আসলো কারা যেন কথা বলছে । ও চারিপাশে তাকিয়ে দেখে কথাবার্তার আওয়াজ আসছে চিলেকোঠা থেকে। কিন্ত চিলেকোঠাতে তো কারো থাকার কথা না। ও শুনল কেউ একজন বলছে-কিরে বাঁচাইয়া রাখমু,না মাইরা ফালামু?
আরেকজন বলছে- না, মারিস না এমন করে।—-(চলবে)