আয়ারল্যান্ডে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও অপরাধ: জনসচেতনতামূলক  তথ্য

সৈয়দ আতিকুর রব, আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ একটি ন্যায়সঙ্গত ও সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও বিদ্বেষমূলক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়ারল্যান্ড সরকার Prohibition of Incitement to Hatred Act 1989 এবং Criminal Justice (Hate Offences) Act 2024 প্রণয়ন করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও অপরাধ দমনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু অনেক নাগরিক এখনও এই আইনের বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে অবগত নন। এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হলো  বাংলাদেশি জনগণকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করা, এর আইনি দিক তুলে ধরা এবং কিভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়া।

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কী এবং এটি কেন ক্ষতিকর?

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য হলো এমন কোনো প্রকাশিত বা প্রচারিত কথা, লেখা, অডিও বা চিত্র যা কোনো ব্যক্তির জাতি, বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, যৌন অভিমুখিতা, জাতিগত বা জাতীয় উৎপত্তি, ট্রাভেলার সম্প্রদায়ের সদস্যপদ বা অন্য কোনো বৈশিষ্ট্যের কারণে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায় বা ছড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি করে।বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে, সহিংসতা উসকে দিতে পারে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং সামাজিক সংহতির জন্য হুমকি স্বরূপ বিধায় এটি  মানুষের জন্য ক্ষতিকর।

আইরিশ আইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও অপরাধের সংজ্ঞা :

১৯৮৯ সালের Prohibition of Incitement to Hatred Act অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি জনসমক্ষে এমন কোনো বক্তব্য দেন বা প্রকাশ করেন যা বিদ্বেষ উসকে দেয়, তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। যদি কেউ অজান্তে বিদ্বেষমূলক উপাদান প্রকাশ করেন, তবে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খণ্ডাতে পারেন  এবং যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তবে সেটি  অপরাধ হিসেবে গণ্য না হতে পারে। 

২০২৪ সালের Criminal Justice (Hate Offences) Act অনুসারে, বিদ্বেষমূলক উদ্দেশ্যে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি আরও কঠোর করা হয়েছে। বিদ্বেষমূলক অপরাধের মধ্যে রয়েছে:

ক ) সম্পত্তির ক্ষতি করা,

খ) জনসমক্ষে হুমকি দেওয়া, অপমানজনক বা আপত্তিকর আচরণ করা,

গ) হামলা করা,

ঘ) গুরুতর শারীরিক ক্ষতি করা,

ঙ) হয়রানি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা। 

যদি কোনো অপরাধের পেছনে বিদ্বেষ প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই অপরাধের জন্য শাস্তি আরও গুরুতর হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য :

বর্তমানে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। Coimisiún na Meán (আয়ারল্যান্ডের অনলাইন নিরাপত্তা সংস্থা) Online Safety Code প্রণয়ন করেছে, যা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক। আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেখতে পান, তাহলে সেটি নিচের প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে রিপোর্ট করতে পারেন:

Facebook, Twitter (X), Instagram, TikTok. LinkedIn

এছাড়া, যদি কেউ অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বা বর্ণবাদী কন্টেন্ট দেখতে পান, তাহলে Hotline.ie ওয়েবসাইটে গিয়ে সেটি রিপোর্ট করতে পারেন।

কীভাবে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা অপরাধের অভিযোগ করবেন?

জরুরি পরিস্থিতিতে: ৯৯৯ বা ১১২ নম্বরে কল করুন।

জরুরি নয় এমন ক্ষেত্রে:

নিকটস্থ Garda (আয়ারল্যান্ড পুলিশ) স্টেশনে অভিযোগ জানাতে পারেন।

Garda গোপনীয় ফোন লাইন (1800 666 111) এ কল করতে পারেন।

Garda ওয়েবসাইটে অনলাইনে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।

Garda National Diversity Unit-এর সাহায্য নিতে পারেন, যারা আপনার অভিযোগ তদন্তে সহায়তা করবে। বিদ্বেষমূলক অপরাধের শিকার হলে বা কারো বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের অভিযোগ থাকলে, দেরি না করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো জরুরি।

সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা :

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও অপরাধ রোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। এজন্য—

ক) সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা তৈরি করতে হবে।

খ) স্কুল, কলেজ ও কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (inclusive) নীতিমালা চালু করতে হবে।

গ) যে কেউ যদি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা অপরাধের শিকার হন, তাহলে ভয় না পেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে।

সরকার, নাগরিক সমাজ ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে একটি বৈষম্যহীন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও অপরাধ শুধু নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নয়, বরং পুরো সমাজের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আয়ারল্যান্ডের বর্তমান আইন বিদ্বেষমূলক কার্যকলাপ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, কিন্তু এর সফল প্রয়োগের জন্য জনগণের সচেতনতা এবং সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।সবার উচিত বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, অন্যকে সচেতন করা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা। একসাথে   ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। 

সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন!

SHARE THIS ARTICLE