আল্লাহ কর্তৃক অর্পিত সন্তানের প্রতি দায়িত্ব

মনজুর সা’দঃ সন্তান মহান আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত। যার সন্তান নেই সেই বুঝে সন্তান না থাকা কতোটুকু কষ্টের। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি সন্তানের প্রতিও মাতা-পিতার রয়েছে অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সু-সন্তান পার্থিব জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনেও সন্তানকে আল্লাহ তাআলা জীবনের সৌন্দর্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সূরা কাহাফে ইরশাদ করেন, ‘সম্পদ ও সন্তান পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। ‘ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৪৬)। আল্লাহ তা’আলার এই নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় পিতা-মাতার জন্য এক বিশেষ নেয়ামত হলো ‘সন্তান সন্ততি’, শ্রেষ্ঠ এই নিয়ামতকে অনেক পিতা মাতাই নির্দিষ্ট সময়ে ইসলামী নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা না দিয়ে তাদের জীবনকে ধ্বংসের পথে ঢেলে দেন, নৈতিক শিক্ষাবিহীন আদর্শবঞ্চিত সন্তানগুলো সময়ের ব্যবধানে বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তাদের বাস্তবিক জীবনেও নেমে আসে অশান্তি, ফলে অদূর ভবিষ্যতে এর প্রায়শ্চিত্ত একসময় পিতা-মাতাকেই বহন করতে হয়, অপ্রত্যাশিত এই ঘটনাগুলোর জন্য ইতিহাসের পাতা খুঁজতে হয় না কারণ, এগুলো আমাদের সমাজেরই বাস্তব চিত্র।

মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন থেকে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল অবশিষ্ট থাকে। (এ সবের পুণ্য সে মৃত্যুর পরেও প্রাপ্ত হবে।)  ১. সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব, ২. মানবের উপকৃত জ্ঞানের পুণ্য এবং ৩. নেক সন্তানের দোয়া (মুসলিম, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩২)।

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার কতগুলো দায়িত্ব এবং কর্তব্য রয়েছে তা সংক্ষেপে পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো:

১. মাতৃগর্ভে সুরক্ষিত থাকার অধিকার: প্রতিটি মানবশিশু মাতৃগর্ভে সুরক্ষিত থাকার অধিকার রয়েছে। পিতা-মাতার এ বিষয়ে যথেষ্ট যত্নবান হওয়া দরকার।মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অন্যায়ভাবে হত্যা করা অথবা নষ্ট করলে পিতা-মাতা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন তোমরা ‘দরিদ্রতার ভয়ে সন্তান হত্যা করো না’।

২ কানে আজান দেওয়া: সন্তান জন্ম হওয়ার পর ডান কানে আজান বাম কানে ইকামাত দেওয়া। সন্তানের কানে সর্ব প্রথম তাওহীদের বাণী পৌঁছানো।

হজরত আবু রাফে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে দেখেছি, ফাতিমা (রা.)-এর গর্ভে হজরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছেন। (তিরমিজি, প্রথম খ-, পৃষ্ঠা-১৮৩)।

৩ সুন্দর নাম রাখা: সন্তান জন্ম হওয়ার পর সুন্দর অর্থবহ একটা নাম রাখা। কারণ,নামও একটা আলাদা প্রভাব ফেলে সন্তানের উপর। ইসলামিক ভালো নাম রাখা পিতামাতার কর্তব্য।

৪ দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া: প্রতিটি মানুষের উচিত দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সন্তানদেরকে শিক্ষা দেওয়া। যাতে করে তারা দুনিয়ায় ও আখেরাতের কামিয়াব হতে পারে।

হাদীসে এসেছে : “আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয।” [সুনান ইবন মাজাহ : ২২৪]।

৫ সন্তানের জন্য দোয়া করা: দোয়া একটি ইবাদতের মূখ্য বিষয়।বান্দার প্রতিটি দোয়া আল্লাহ কবুল করুন।তাই উচিৎ প্রতিটি পিতামাতার তার সন্তানের জন্য বেশি দোয়া করা। কারণ, দোয়া করার দ্বারা অনেক বালা মসিবত দূর হয়ে যায়।

আল্লামা কাজী মু’তাসীম বিল্লাহ রহ. প্রায় সময়  বলতেন, ‘সন্তানদের জন্য সম্পদ না রেখে, সন্তানদেরকেই সম্পদ বানিয়ে যান।’

পরিসরে বলব, পিতা-মাতাই হলো সন্তানের মানুষ গড়ার কারিগর ও অভিভাবক। তাদের দায়িত্ব হলো সন্তানকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা,সন্তানের আগামী ভবিষ্যতের জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সন্তানদেরকে সু-সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার এবং সন্তানের হক বুঝে আমল করার আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন

SHARE THIS ARTICLE