ওবায়দুর রহমান রুহেল – ডোনেগাল প্রতিনিধিঃ কিছুদিন পূর্বেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশ জুড়ে লকডাউনের যাতাকলে পড়ে প্রতিটি কাউন্টির লোকজন যখন এক দূর্বিষহ অনিশ্চিত জীবনের মধ্য দিয়ে কাটাচ্ছিলেন । তখন সবার মনেই সংশয় দেখা দিচ্ছিল, আদৌ কি এই পৃথিবী পুনরায় তাঁর চেনা রূপে ফিরে যাবে? আমরা কি বেঁচে থাকবো? আবারও কি ফুসফুসের থলে ভরে অক্সিজেনের গ্যাস নির্বিঘ্নে আসা যাওয়া করবে? ঝড়ের তান্ডবে যেমন অসংখ্য বৃক্ষরাজি নতজানু হয়ে মাটিতে নুয়ে পড়ে তেমনি করোনার কড়াল থাবায় অচেনা এক মৃত্যুপুরীর পরিত্যক্ত পোড়াবাড়িতে রূপ নেয় আইরিশ জনপদগুলো।এ যেন ছিল অদৃশ্য যুদ্ধ ক্ষেত্রে অসহায় মানবকূলের প্রত্যক্ষ আত্নসমর্পণ। পরিস্থিতি এখন আর আগের মতোন নেই। পরিবর্তিত পৃথিবীতে বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনেই মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপনে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হচ্ছেন।
কাউন্টি ডোনেগালের লোকজনও সেই দুঃসহ স্মৃতিকে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে থাকতে চান। আইরিশ সামারের দিনগুলোতে তাই দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই আছে। ইতোমধ্যে জমে উঠেছে বান্দুরানের ফান ফেয়ার। অসংখ্যা দর্শনার্থীদের ভিড়ে সেখানে প্রতিদিন বিনোদনের হাট বসে।অনেকেই পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসেন বান্দুরানে,চাইলেই রাইড চড়ে কিছুক্ষণের জন্য দুঃসাহসিক এডভেঞ্চারের চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন।আবার রাইডের চড়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে অনেকের ক্ষেত্রে এই মরণ খেলায় বেহাল দশাও হতে পারে, তাই আপনার হার্টের অবস্থা দূর্বল হলে রাইডে চড়ার চ্যালেঞ্জ না নেয়াই ভালো।চাইলেই মিনি রেসিং কারে করে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন শৈশবের দিনগুলোতে, ভিডিও গেইমে আমরা অনেকেই কার রেসিং প্রতিযোগিতা উপভোগ করেছি। বান্দুরান আসলে আপনি গো-কারে চড়তে পারেন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস বসানো কারগুলোতে চড়লে আপনি সুন্দর মুহূর্তগুলো অনেকদিন মনে রাখবেন।বান্দুরান ফান ফেয়ারের মূল আকর্ষণ হলো ভাড়ায় চালিত “দ্যা ভিউ” নামক স্পিনিং হুইল।অনেকটা “লন্ডন আইর ” আদলে গড়া এই স্পিনিং হুইলের প্রতিটি ক্যাপসুলে চড়ে পুরো শহরের দৃশ্য অবলোকন করতে পারেন।
ফান ফেয়ারের ঠিক পাশেই রয়েছে সুন্দর মনোরম পরিবেশে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাবার মতোন এক অদ্ভুত সুন্দর সমুদ্র সৈকত। সৈকতের কূল ঘেষে মহাকালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন প্রস্তর যুগের পাথরের পাহাড়।কি সুনিপুণ কারুকাজে সজ্জিত পাথরের প্লেটগুলো দেখলে মনে হবে যেন অন্যগ্রহের স্থাপত্য শিল্প।যেন সারাদিন প্রাণ ভরে উপভোগ করলেও চোখের ক্ষুধা কখনো নিবারণ হবেনা।সৈকতের পাড়ে দাঁড়িয়ে ঠিক সন্ধ্যা নামার আগে গোধূলি লগ্নে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করতে পারেন।
আপনার দু’চোখ এই লোভনীয় দৃশ্য অবলোকন করে নেশায় আছন্ন হবেই, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সারাদিন ঘুরাঘুরি শেষে ক্যাফে কিংবা রেস্তোরাঁগুলোতে বিভিন্ন কন্টিনেন্টাল ফুডের স্বাদে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে আবার ফিরে আসতে পারেন। নিজ আলয়ে কিংবা চাইলেই তাবু টাঙিয়ে থেকে যেতে পারেন আটলান্টিকের পাড়ে।
বান্দুরান আসলে শহরের মেইন স্ট্রীটে তাজমহল কারী হাউজের সত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী দম্পতি যুগল জনাব ফরিদ খাঁন ও মিসেস ইসরাত মুনের সাথে দেখা হলে আপনি তাদের আতিথেয়তা না নিয়ে ফিরে আসতে পারবেন না।বান্দুরানে বেড়াতে এসে উনাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া বিরল। ডোনেগাল বাংলাদেশী কমিউনিটির সংগঠক এই অতিথিপরায়ণ মানুষগুলোর জন্য বান্দুরানে বেড়াতে আসা বাঙালিরা গর্ববোধ করেন।